• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় স্কাউট আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান

কখনো বিভাগীয় কমিশনার, কখনো ওসি!

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০  

‘হ্যালো, আমি বিভাগীয় কমিশনার বলছি, এটা আমার পারসোনাল নম্বর। সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক রোগীর জীবন বাঁচাতে অপারেশন করতে হবে।

এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমরা অনেকেই রোগীর অপারেশনের খরচ বহন করছি। আপনিও লাখ খানেক টাকা দিয়ে এ নেক কাজে শরিক হন ’।  

মোবাইল ফোনের অপর পাশে টার্গেট করা ব্যক্তি জানান, ‘এত টাকা কোথায় পাবো। এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই’। উত্তরে প্রতারক সোহেল বলেন- ‘আপনি পরিচিত কয়েকজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দেন। সবাই নেক কাজে শরিক হন’।

বিভাগীয় কমিশনারের এমন আবদারকে বিশ্বাস করে জরুরি ভিত্তিতে একটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে তিন দফায় ৫৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে প্রতারণার শিকার হন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনা ঘটে।
শুধু ত্রিশালের উপজেলা চেয়ারম্যানই নয়, প্রতারক শেখ মো. সোহেল ওরফে ইমদাদুল হক সোহেল ওরফে সোহেল রানার কাছে ব্যবসায়ীসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। মোবাইল ফোনে কখনো বিভাগীয় কমিশনার, কখনো জেলা প্রশাসক, আবার কখনো জেলা পুলিশ সুপার, অথবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিচয় দিয়ে একই কায়দায় অনেকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক সোহেল। প্রতারণার মাধ্যমে তিনি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন বড় ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের টার্গেট করতেন।  

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর খিলক্ষেত থানাধীন মোহাম্মদীয়া গার্মেন্টসের পাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক সোহেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে প্রতারণামূলক এসব ঘটনা।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা চেয়ারম্যান মতিন সরকার বলেন, বিভাগীয় কমিশনার পরিচয় দিয়ে সোহেল আমার কাছ থেকেও ৫৫ হাজার টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নিয়েছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত এক রোগীর অপারেশনের জন্য ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগবে বলে আমার কাছে লাখ খানেক টাকা দাবি করেন এ প্রতারক। তাকে তিন দফায় ৫৫ হাজার টাকা পাঠানো হয়। এরপর তিনি আমার ছেলেকেও ফোন দিয়ে আরও ৪০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। তার সঙ্গে দেখা করে টাকা দেওয়ার কথা বলতেই তিনি ফোনের কল কেটে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। পরে আর তিনি যোগাযোগ করেনি। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পর আমি থানার ওসিকে বিষয়টি বলি। তখন বুঝতে পারি যে, আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি।

এদিকে খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা জাকির হোসেন। তিনি একজন ব্যবসায়ী। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে একটি নম্বর থেকে তাকে ফোন করেন প্রতারক সোহেল। নিজেকে খিলক্ষেত থানার ওসি পরিচয় দিয়ে গুরুতর অসুস্থ একজন রোগীর চিকিৎসার জন্য জরুরিভিত্তিতে ২০ হাজার টাকা চান সোহেল। এজন্য একটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নম্বরও দেন। এতে জাকিরের কিছুটা সন্দেহ হয়। সঙ্গে সঙ্গে খিলক্ষেত থানায় বিষয়টি জানান তিনি। পরে অনুসন্ধানে নামে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়। পরে সোহেলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে সোহেলকে আদালতে পাঠায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সোহেলের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও খিলক্ষেত থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার বলেন, প্রতারক সোহেল খুবই চতুর। প্রত্যেক ব্যক্তিকে ফোন করে টাকা দাবি করার জন্য তিনি নতুন সিম কার্ড ও মোবাইল ব্যবহার করতেন। চাঁদা আদায় হয়ে গেলে সেই মোবাইল ফোন ও সিম কার্ড নষ্ট করে ফেলতেন। যাতে করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ তাকে খুঁজে না পায়।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সোহলে বলেছেন ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছ থেকে তিনি একই কায়দায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫৫ হাজার টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও অনেক ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের তিনি ফোন দিয়েছেন। তার মোবাইল ফোনে এমন অনেকের নম্বর আমরা পেয়েছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করছি। এছাড়াও এ প্রতারক চক্রের আরও সদস্য রয়েছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারক সোহেল সাভার, মিরপুর ও উত্তরা এলাকার বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তবে তিনি এক এলাকায় বেশি দিন বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন না। এছাড়াও সোহেল যেসব ব্যক্তিকে টার্গেট করতেন তাদের সম্পের্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন। তাদের আয়-ব্যয় ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতেন। সংশ্লিস্ট এলাকায় সরকারি কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে কিনা সে বিষয়েও তথ্য যেন নিতেন সোহেল। এরপর তিনি সুযোগ বুঝে তাদের মোবাইল নম্বরে কল করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা চাইতেন।

খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন বলেন, গ্রেফতার প্রতারক সোহেল নিজেকে ওসি, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক কিংবা বিভাগীয় কমিশনারসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে কল দিয়ে টাকা দাবি করতেন। সবার সঙ্গে একই কৌশল ব্যবহার করে আসছিলেন প্রতারক সোহেল।

প্রতারক সোহেল রানার বিরুদ্ধে প্রতারণা, চাঁদাবাজীর অভিযোগে ঢাকা, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও কক্সবাজার জেলায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও আমরা তথ্য পেয়েছি। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলেও জানান ওসি বোরহান।

বরগুনার আলো