• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

চলনে মধু-সরষের বাণিজ্যিক খেলা

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০২২  

চলনের বুক জুড়ে রবি মৌসুমে চাষ হচ্ছে হাজার হাজার বিঘা সরষে। সেই সরষে ফুল থেকে আহরিত হচ্ছে অনন্য সম্পদ মধু। প্রায় এক হাজার মৌচাষি মধু সংগ্রহে এসেছেন। আর এসব মৌচাষির সঙ্গে শ্রমিক- কর্মচারী রয়েছেন আরো তিন থেকে চার হাজার। কৃষি বিভাগ বলছে চলনবিলে মৌচাষিরা মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে পরাগায়ন ভালো হওয়ায় সরষের ফলনও বাড়ছে। এ যেন মধু-সরষের বাণিজ্যিক খেলা।

ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন মৌচাষিদের সমিতির মাধ্যমে মধু বিক্রির বাধ্যবাধকতা তুলে দিলে তারা আরো ভালো দাম পাবেন। 

প্রতি বছরই অগ্রহায়ন-পৌষ-মাঘ মাস জুড়ে চলনবিলের মাঠগুলো সরষে ফুলে ফুলে ভরে যায়। মনে হয় যেন বিশাল হলুদ চাদর বা হলুদের সমুদ্র। সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার মৌ খামারিরা চলনবিলের সরষে ক্ষেতে আসেন মধু সংগ্রহের জন্য। এ  বছরও প্রায় এক হাজার খামারি চলনবিল এলাকার সরষে ক্ষেত মৌ বাক্স স্থাপন করেছেন। এলাকার মৌচাকের মৌমাছিসহ খামারিদের পালন করা মৌমাছিরা সরষে ফুলে-ফুলে  ছুটে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে। এক সময়ের মৎসভান্ডার খ্যাত চলনবিল এখন যেন ‘মধু’র বিলে পরিণত হয়েছে। 

মৌচাষি সমিতির সূত্রে জানা যায়, এবারো কুষ্টিয়া, চাপাই নবাবগঞ্জ,বগুড়া,যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা,সাতক্ষীরা, পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জসহ  দেশের বিভিন্ন জেলার ৮৬৯ জন মৌচাষি মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিলের সরিষার ক্ষেতের পাশে ৮৮ হাজার ৪৩২ মৌ-বাক্স বসিয়েছেন। তাদের হিসাবের বাইরেও  আরো কিছু মৌবাক্স স্থাপতি হয়েছে। চলতি মৌসুমে এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকার মধু সংগ্রহ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চলনবিল কেন্দ্রিক  পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে চলনবিলের ১৩ উপজেলায় ১ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীলসহ বিভিন্ন জাতের সরষের চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে। 

পাবনা জেলা ও উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চলতি মৌসুমে চলনবিল অঞ্চল  থেকে ২ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি মধু পাওয়া যাবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ কোটি টাকা। 

তিনি জানান, ব্যক্তিগতভাবে তার মোট ৫০টি মৌ-বাক্স রয়েছে। সংগৃহীত এসব মধু পাইকারি প্রায় ২শ’ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গতবারের চেয়ে এবার মধুর দাম বেশি। ফলে মধু সংগ্রহকারীরা ভালো দাম পাবেন বলে তিনি জানান। 

উত্তরবঙ্গ মৌচাষী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহাদ আলী জানান, তিনি ১০০টি মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন। এ প্রতি সপ্তাহে মধু উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২ মন।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএ মাসুম বিল্লাহ জানান, কৃষি বিভাগও মধু সংগ্রহের বাক্স প্রদান করেছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে চলতি মৌসুমে চলনবিলের সরষে ফুল থেকে বাণিজ্যিকভাবে এবং বিভিন্ন গাছ-পালায় প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মৌচাক থেকে প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টন মধু সংগৃহীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। 

ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এনামুল হক জানান, সরষে একটি আগাম ফসল। এ উপজেলায় এবার বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় কৃষকেরা সরষে চাষ করেছেন। এরপর একই জমিতে ইরি-বোরো আবাদ হবে। এ বছর কৃষকদেরকে সরষে চাষে ব্যাপক সচেতন করা হয়েছে। কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সরষের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

চলনবিল পাড়ের আলাইপুর গ্রামের কৃষক সুশান্ত কুমার শান্ত বলেন, এ বছর তিনি ৭৫ বিঘা জমিতে সরষে চাষ করেছেন। প্রতি বিঘায় আট থেকে নয় মণ সরষের ফলন পাওয়ার আশা করছেন। সরষে চাষে প্রতি বিঘা থেকে ২০ হাজার থেকে ২৪ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তার আশা। তিনিও মৌবাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন বলে জানান। 

চলনবিল পাড়ের দলগাসা  গ্রামের আরেক কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, সরষে চাষ খুবই লাভজনক। তিনি এ বছর বারি-১৪ জাতের সরষে চাষ করেছেন। তার ক্ষেতেও বসেছে মৌবাক্স। এতে সরষের ফলন ভাল হওয়ার আশা করছেন তিনি।

চলনবিলের বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান চলনবিলে থেকে আসা মধু আহরণকারীরা মৌমাছি পালন ও মধু আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন।  

সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার বড়ভেটখালী গ্রামের মৌখামারী ইমদাদ হোসেন চলনবিলে এসেছেন সরষের মধু সংগ্রহে। পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া মাঠের সরষে ক্ষেতে ১৮০ টি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতি সপ্তাহে অন্তত: একবার করে মধু সংগ্রহ করেন। প্রায় দু’মাস ধরে তিনি চলনবিলে মধু সংগ্রহ করেন বলে জানান। এ দুই মাসে ছয় থেকে সাতবার মধু সংগ্রহ করতে পারেন। এক এক বারে ৪ - ৫ মন মধু পাওয়া যায় বলে তিনি জানান।  তিনি এ মৌসুমে  প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মণ মধু পাবেন বলে আশা করছেন। তিনি জানান  বর্তমান প্রতি মন মধুর পাইকারি দাম প্রায়  আট হাজার টাকা।

পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইফুল ইসলাম স্বপন চৌধুরি  বলেন, সরষে চাষ ও মধু আহরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। বিশেষ করে চলনবিলে সরষে আবাদের সময় শত শত টন টন মধু পাওয়া যায়। সরষে ফুলের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মধু আহরণকারীরা চলনবিলে আসেন মধু সংগ্রহের জন্য। তারা সেখানে সমিতির পক্ষ থেকে বণ্টনকৃত এলাকায় বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করে থাকেন। সেই মধু ওই সমিতির কাছেই তারা বিক্রি করতে বাধ্য। ফলে মধু সংগ্রহকারীরা মধুর দাম বেশি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন। এছাড়া সরকারের কোনো নীতিমালা না থাকায় সরকার এ খাত থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে সরকারকে এ খাতটিকে পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) পাবনার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, চলনবিল ঘিরে পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলা রয়েছে। এসব উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সরষে আবাদ হয়ে থাকে। সরষে ক্ষেতে মধুর বাক্স স্থাপনে মৌমাছি পরাগায়নে সহায়তা করে। এতে সরষে ফলন বেড়ে যায়। চাষি ও মৌচাষি উভয়েই লাভবান হয়ে থাকেন।

বরগুনার আলো