দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যেকোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা কিংবা নাশকতার মতো ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারি এবং দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে গণপরিবহনগুলোতে পুলিশি তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। গণপরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব বিষয় নাশকতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা।
বুধবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্র বলছে, রাজধানীসহ প্রায় ২০টির মতো জেলাকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পক্ষ থেকে তৎপরতা বাড়াতে পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারদের এরই মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কোথাও কোনও উসকানি দিয়ে কেউ যেন পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে না পারে; সে ব্যাপারেও তৎপরতা বাড়াতে প্রতিটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপর থাকতে বলা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, তফসিল ঘোষণার পরে সাধারণত নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখভালের জন্য নির্বাচন কমিশন তৎপর থাকে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করে থাকেন। কোথাও কোন ধরনের গুজবকে কেন্দ্র করে কিংবা সাম্প্রতিক পোশাক খাতের অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে চলমান আন্দোলন যেন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে না পারে; সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় গার্মেন্টস বন্ধ থাকলেও কিছু দিনের মধ্যে সেগুলো খুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গার্মেন্টস শ্রমিক মালিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত হয়। গার্মেন্টসগুলো খোলার পর অবস্থা বিবেচনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে তফসিল ঘোষণার পর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এলাকাজুড়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি টহল দিচ্ছেন বিজিবি সদস্যরাও। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিএনপি কার্যালয়ের কিছুটা দূরে কাকরাইল মোড়ে পাঁচটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহ উদ্দিন মিয়া বলেন, সন্ধ্যায় কাকরাইল মোড়ে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা যায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ প্রসঙ্গে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, রাজনৈতিক দলের রাজনীতি নিয়ে কোনও কথা নেই। তারা তাদের কর্মসূচি পালন করবে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে কেউ যদি বাস পোড়ানো-ভাঙচুরের চেষ্টা করে এবং অরাজকতার মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করলে ডিএমপি জিরো টলারেন্স নীতিতে আছে। বিন্দুমাত্র অরাজকতা সহ্য করা হবে না।
একদিকে বিএনপির ঘোষিত চলমান অবরোধ, অন্যদিকে রাজধানীসহ দেশে বিভিন্ন জায়গায় পরিবহনে আগুনের ঘটনা অনেকটাই ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। যদিও যাত্রীবেশে পরিবহনে আগুনের ঘটনা এড়াতে এরই মধ্যে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বেশ কিছু জায়গায় আগুন দিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ার ঘটনা ঘটেছে। যেকোনও পরিবহনে আগুনের ঘটনা প্রতিরোধে সাধারণ জনগণের সহযোগিতা কামনার পাশাপাশি দুর্বৃত্তকারীদের ধরিয়ে দিতে পারলে বা তাদের বিষয়ে তথ্য দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, কারা অনলাইন ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের নাশকতার চেষ্টা করছে বা করেছে তাদের তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি আছে, মামলার আসামি; তাদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক নিয়মিত অভিযান চলছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাবের স্পেশাল ফোর্স বিশেষায়িত যানবাহন এপিসি মোতায়েন করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় টহল দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় র্যাবের ৬০টি দল টহল দিচ্ছে। যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে দেশব্যাপী র্যাবের প্রতিটি ব্যাটালিয়ানকে টহল জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। যাদের কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার তথ্য পাওয়া যাবে, সেসব বিষয় খতিয়ে দেখে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে র্যাব।