• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

চাকরির কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ, চক্রের হোতাসহ গ্রেফতার দুই

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১৮ মে ২০২২  

মো. ইসহাক আলী (৪৭)। তিনি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আনসার সদস্য হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গত ২৩ মার্চ সকাল ১০টার দিকে নিজ কর্মস্থলে ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের পঞ্চম তলার শিশু ওয়ার্ডের গেটে ডিউটি করার সময় পূর্বপরিচিত মোস্তফা ও তার সঙ্গে অন্য এক ব্যক্তি আসেন। ওই ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে একজন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য তাকে অনুরোধ করেন। ইসহাক রোগী ভর্তিতে সহায়তা করেন।

এরপর ওই ব্যক্তি বলেন, আপনার (ইসহাক আলী) কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে সন্তান থাকলে আমাকে জানাবেন। আমি তাকে সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন পদে চাকরি পাইয়ে দিতে পারবো। এরপর গত ২৪ মার্চ ইসহাক ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেলে পরদিন ২৫ মার্চ ওই ব্যক্তি ইসহাক আলীকে ফোন করে বলেন, সেনাবাহিনীর স্টোরকিপার পদে লোক নিচ্ছে। আপনার ছেলের কাগজপত্র এবং কিছু খরচপাতি দিয়েন।

এরপর ২৬ মার্চ ইসহাক স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকানের ই-মেইল থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ই-মেইলে ছেলে ও ভাগিনার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পাঠান। এসময় প্রতারক ব্যক্তি দুজনের জন্য মোট ৩ লাখ টাকা দাবি করে আপাতত ৪০ হাজার টাকা বিকাশ ও রকেট নম্বরে পাঠাতে বলেন। তখন ইসহাক স্থানীয় একটি বিকাশের দোকান থেকে মোট ২০ হাজার টাকা পাঠান। ফিরতি ই-মেইলে ইসহাক আলীর ছেলে মো. হিমেলের (২০) নামে স্টোরকিপার পদের একটি নিয়োগপত্র পাঠায়। পরে আরও টাকা দাবি করলে ইসহাকের কাছে টাকা না থাকায় আর টাকা দিতে পারেননি। টাকা না দিতে পারায় ইসহাকের ছেলেকে ওই ব্যক্তি ফোনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।

পরে ওই ব্যক্তির পাঠানো নিয়োগপত্রটি ইসহাক এলাকার সেনাবাহিনীর একজন মেজরকে দেখালে তিনি ঘটনা শুনে এবং নিয়োগপত্রটির বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জানান, নিয়োগপত্র ভুয়া। এরপর ইসহাক ওই ব্যক্তিকে ফোন করে ভুয়া নিয়োগপত্রের বিষয়ে জানতে চান এবং তার দেওয়া টাকা ফেরত দিতে বলেন। এরপর ওই ব্যক্তি ফোন বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে ইসহাক প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বনানী থানায় মামলা করেন।

মঙ্গলবার (১৭ মে) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ এ তথ্য জানান।

মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, সোমবার (১৬ মে) রাতে রাজধানীর দারুস সালাম থানার আনন্দনগর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। তাদের কাছ থেকে তিনটি মোবাইল ফোন, সাতটি সিম কার্ড, বিভিন্ন চাকরির ভুয়া প্রশ্নপত্র ও ভুয়া প্রবেশপত্র এবং ভুয়া নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. মোশারফ হোসেন (৪৩) ও মো. জিয়া উদ্দিন (১৯)। তারা বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার নামে ভুয়া প্রশ্নপত্র ও নিয়োগপত্র প্রদানের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন।

অভিযানের নেতৃত্বে দেওয়া অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিমলিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল হক বলেন, প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন দপ্তরের একাধিক পদে চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো তাদের সংগ্রহে রাখে। পরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে নিজেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেয়।

তিনি বলেন, প্রথমে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশীর জীবন-বৃত্তান্ত, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি ও অন্য সব ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে। পরে একটি ভুয়া প্রবেশপত্র তৈরি প্রার্থীর ই-মেইলে পাঠায় এবং বিকাশ/রকেটের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ভাইভার জন্য মনোনীত হয়েছেন বলে জানান। এর কিছুদিন পরে ভুয়া নিবন্ধিত সিমকার্ডের মাধ্যমে অপর এক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পুনরায় ফোন করে জানান, মেডিকেল ও অন্যান্য খরচ বাবদ আরও কিছু টাকা বিকাশ/রকেটের মাধ্যমে দিতে হবে।

এডিসি মো. নাজমুল হক বলেন, টাকা পাওয়ার পর প্রতারকচক্র একটি ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য চাকরিপ্রত্যাশীদের ‘কিউআর কোড জেনারেটর’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রার্থীর নাম ঠিকানা সম্বলিত একটি ‘কিউআর কোড জেনারেটর’ তৈরি করে ভুয়া নিয়োগপত্রে সেটি স্থাপন করে। এরপর চাকরিপ্রার্থীকে বলা হয়, ‘কিউআর কোড জেনারেটর’ দিয়ে আপনার নিয়োগপত্রটি সঠিক কি-না যাচাই করুন। প্রার্থী যখন তার মোবাইলের ‘কিউআর কোড জেনারেটর’ দিয়ে চেক করে তখন সেখানে নিজের তথ্য দেখায় এবং ওই প্রার্থী চুক্তির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে এ নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গেলে জানতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া।

তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ফজলুর রহমানের তত্ত্বাবধানে সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) জুয়েল রানার নেতৃত্বে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে।

সরকারি চাকরিতে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের পরামর্শ:
> আবেদনপত্রে উল্লেখিত ফি ছাড়া সরকারি চাকরির জন্য অতিরিক্ত অর্থ কাউকে না দেওয়া।
> যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়া নিজেদের তথ্য কাউকে না দেওয়া।
> চাকরি পাওয়ার জন্য কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করা।
> চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র কোনোভাবেই আগে পাওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং কোনো ধরনের অবৈধ/অনৈতিক পন্থায় তা সংগ্রহের চেষ্টা না করা। যদি কেউ প্রশ্নপত্র দেওয়ার প্রস্তাব দেয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তা জানানো।
> প্রতিটি চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধাপে পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগপত্র লাভ করতে হয়। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপত্র লাভের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সতর্ক থাকা।

বরগুনার আলো