নকল প্রসাধনীতে সয়লাব সুপারশপ, বিপণিবিতান

নেই কারখানার অনুমোদন; নেই রসায়নবিদ; এমনকি নেই পরীক্ষাগারও। তবুও দেদারসে চলছে কর্মযজ্ঞ। তৈরি হচ্ছে নকল প্রসাধনী সামগ্রী। তবে মোড়ক দেখে উপায় নেই বোঝার। কারণ, ব্যবহার করা হচ্ছে নামিদামি ব্র্যান্ডের নকল মোড়ক। উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে আটা, ময়দা, সুজি আর ক্ষতিকর কেমিক্যাল। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে এমন একটি কারখানায় অভিযানের পর গোয়েন্দারা বলছেন, এ পণ্য ছড়িয়ে পড়ছে বড় বড় সুপারশপ, বিপণিবিতান আর মফস্বল শহরে।

খুব যত্নের সঙ্গে আটকানো হয় এসব প্রসাধনীর প্লাস্টিকের কৌটার মুখ। ভেতরে আছে ত্বকের রং ফর্সাকারী বিদেশি ক্রিম। এক ক্রিমই কাজ করে চার ধরনের। চাহিদাও বেশ। এমন সব চটকদার কথা লেখা আছে প্লাস্টিকের কৌটার গায়ে। কী দিয়ে তৈরি হয় বিশেষ এ ক্রিম- গোয়েন্দা অভিযানে উঠে এসেছে সেসব তথ্য।

প্লাস্টিকের ড্রাম ভর্তি কেমিক্যাল। তাতে মেশানো হয় তিন ধরনের কাপড়ের রং। কয়েক মিনিটেই হয়ে যায় ফেসপ্যাক। রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে ওই কারখানায় এভাবেই তৈরি হয় নকল প্রসাধনী।

অল্প বয়সে যাদের চুল পড়ে গেছে কিংবা পাক ধরেছে তাদেরও নিরাশ হওয়ার কারণ নেই। আছে অনিয়ন অয়েল। পানি আর ক্ষতিকর কেমিক্যালের মিশ্রণে তৈরি শত শত তেলের বোতল পাওয়া গেছে কারখানাটিতে।

বিশ্ববিখ্যাত ব্র্যান্ডের হেয়ার স্পা, অ্যালোভেরা জেল থেকে শুরু করে ত্বকের চর্চায় ব্যবহৃত ডজনখানেক প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি হয় কারখানাটিতে। মোড়ক দেখে বোঝার উপায় নেই সবই নকল। কারখানাটিতে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ বিপুল পরিমাণ নকল পণ্য আর পণ্য তৈরির কাঁচামাল উদ্ধারের পাশপাশি আটক করেছে সাতজনকে।

ক্রেতার আস্থা কিংবা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে চেষ্টার কমতি রাখেনি অসাধু কারবারিরা। পণ্যের গায়ে বসানো বারকোড স্ক্যান করতেই দেখা যায় বিস্তারিত। অর্থাৎ নকল করা হয়েছে বারকোডও।

কী নকল হয় না এ কারখানাতে! শিশুখাদ্য থেকে শুরু করে প্রসাধনী সামগ্রী; ভেজাল সেমাই কিংবা ওষুধ। এখানকার অলিগলির বিভিন্ন কারখানায় প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে ভেজাল পণ্য। পরে কয়েক হাত ঘুরে এসব পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বড় বড় সুপারশপ, বিপণিবিতান এমনকি মফস্বল শহরেও।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মশিউর রহমান বলেন, এসব নকল পণ্য প্রথমে যায় চকবাজারে। সেখান থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সুপারশপসহ হয়ে সারাদেশে।

এসব ভেজাল পণ্যের খালি মোড়ক বেশির ভাগ সময়ই আমদানি করা হয় চীন থেকে। তবে চাহিদা বেশি থাকায় এখন দেশেই তৈরি হয় বিভিন্ন মোড়ক।