• বুধবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১২ ১৪৩০

  • || ১১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন কাল পর্যটন শিল্পের প্রসারে কাজ করছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী শপথ নিলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ট্রেনে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে ফরিদপুরের জনসভায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়ার ভেতর দিয়েই শিশুর সামাজিকীকরণ ঘটে: প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণের ৪৯তম বার্ষিকী আজ তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগে জনগণকে সম্পৃক্ত করার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির বিশ্বের ৩৫তম অর্থনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ চুরি করা অর্থ দিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী বিএনপি কি আসলেই নির্বাচন চায়, তাদের নেতা কে: প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী আগামী প্রজন্মের জন্য সমুদ্রগুলো যেন সমৃদ্ধির উৎস হয়ে থাকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছে বাংলাদেশ পুতুলের রাজনীতিতে আসার বিষয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, জনগণ সঠিকভাবে ভোট দেবে: শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণই তাদের ‘স্যাংশন’ দিয়ে দেবে: প্রধানমন্ত্রী কোরআন পোড়ানো নিয়ে শেখ হাসিনার নিন্দা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হলে বাংলাদেশও নিষেধাজ্ঞা দেবে: প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি ছাড়া দেশকে কিছুই দিতে পারেনি বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে চায় ভিয়েতনাম

আকাশপথে স্বপ্নদুয়ার খোলার অপেক্ষা

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

দেশের বিমানবন্দরের সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের আক্ষেপের অন্ত নেই। বিশ্বের নামিদামি বিমানবন্দরগুলোর উন্নত সেবা নিয়ে ঢাকায় বিমানবন্দরে নেমে পোহাতে হয় নানা ঝক্কি-ঝামেলা। সময়মতো লাগেজ পাওয়া, দ্রুত ইমিগ্রেশন শেষ করে ঘরে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা তো রয়েছেই। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে উন্নত যাত্রীসেবা দিতে সক্ষম—এমন একটি আকাশপথে স্বপ্নদুয়ার খোলার অপেক্ষাআধুনিক বিমানবন্দরের স্বপ্ন যাত্রীদের দীর্ঘদিনের।

এবার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সঙ্গে যাত্রীদের ভোগান্তির দিনও শেষ হতে চলেছে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে অত্যাধুনিক নানা ব্যবস্থা বিশ্বপরিমণ্ডলে দেশের এভিয়েশন সেবাকে নতুনভাবে তুলে ধরবে বলে আশা বিশেষজ্ঞদের।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বহু প্রতীক্ষার সংযোজনের নাম তৃতীয় টার্মিনাল।

আগামী ৭ অক্টোবর এই মেগাপ্রকল্পের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এর মধ্য দিয়ে বিমানবন্দরে উন্নতমানের সেবা দেওয়া শুরু হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
বেবিচকের কর্মকর্তারা জানান, নবনির্মিত এই টার্মিনালে থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা। বহির্গমনের জন্য ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ)।

এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। যাত্রী, ব্যাগসহ সব কিছু পরীক্ষায় থাকবে অটোমেটিক স্ক্যানিং সিস্টেম। এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে যাত্রীরা খুব কম সময়ে বিমানবন্দরে ঝামেলামুক্ত প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষ করতে পারবে।
বেবিচক কর্মকর্তারা বলছেন, এই টার্মিনাল চালু হলে যাত্রীরা আসা-যাওয়ায় এখনকার মতো ভোগান্তির শিকার হবে না। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ ও উড়াল সেতু যাতায়াতকে সহজ করবে।

একজন যাত্রী টার্মিনাল থেকে বের হয়ে সহজে গাড়িতে চড়ে মেট্রো রেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগে যুক্ত হতে পারবে।
তৃতীয় টার্মিনালের সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান  বলেন, ‘অত্যাধুনিক এই টার্মিনালের সফট ওপেনিংয়ের জন্য আমরা সব প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী ৭ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন। আমরা চেষ্টা করছি একজন যাত্রী যেভাবে বিমানবন্দরে প্রবেশ করে, সেভাবে তিনি প্রবেশ করে ইমিগ্রেশনের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে এই টার্মিনালের শুভ উদ্বোধন করবেন।’

বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘উদ্বোধনের আগে আমাদের প্রকল্পের প্রথম ধাপের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হবে। বিমানবন্দরে যন্ত্রপাতির বেশির ভাগই বসে গেছে। বাকিগুলো স্থাপনের কাজ চলছে। এখন ক্যালিব্রেশন, ট্রায়ালের পাশাপাশি যারা এগুলো পরিচালনা করবে তাদের প্রশিক্ষণের পর এটি হস্তান্তর হবে। ভালো মানের সেবা দিতে জাপানি ঠিকাদারকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই টার্মিনাল পুরোপুরি চালু করতে বছরখানেক লাগবে। তবে সফট ওপেনিংয়ের পরও কিছু কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। আগামী বছরের শেষ দিকে এই টার্মিনাল যাত্রীদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।’

তৃতীয় টার্মিনাল ভবনটির নকশা করেছেন রোহানি বাহারিন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিঙ্গাপুরের সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের স্থপতি। এর আগে এই স্থপতি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবনের নকশা করেছেন।

নান্দনিক এই টার্মিনালের কাজ করছে এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে জাপানের মিত্সুবিশি ও ফুজিটা এবং কোরিয়ার স্যামসাং। টার্মিনাল নির্মাণ ব্যয়ে সহযোগিতা করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। এতে ব্যয় হবে প্রায় ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। প্রকল্প শুরু হয় ২০১৭ সালে। এরপর ২০২০ সালে ঠিকাদারি চুক্তি হয়। চুক্তির পর ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ শুরু করে। তখন তারা কাজ বাস্তবায়নে সময় চায় ৪৮ মাস।

তৃতীয় টার্মিনালে মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে আগামী অক্টোবরে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। এ ছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা। বহির্গমনের জন্য মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ)। এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি পৃথক বেল্ট। এক হাজার ২৩০টি গাড়ি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে টার্মিনালটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হতে আরো অন্তত ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে (পিপিপি) টার্মিনালটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পরিচালিত হবে।

এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে তা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেওয়া হবে। তাদের যেহেতু আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কিভাবে এটি পরিচালনা করবে। তবে তাদের সঙ্গে চুক্তি হতে আগামী বছর সময় লেগে যাবে। চুক্তির আগে বেবিচকের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি এয়ারলাইনসের ১২০ থেকে ১৩০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটের ১৯ থেকে ২১ হাজার যাত্রী প্রতিদিন এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে। এই যাত্রীদের মানসম্মত সেবা দিতে বিমানবন্দরে বর্তমানে চালু থাকা কম আয়তনের দুটি টার্মিনাল যথেষ্ট নয়, যে কারণে নতুন টার্মিনাল করা হচ্ছে বিমানবন্দরের মূল টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে।

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর যাত্রা শুরু করে ১৯৮০ সালে। এখানে রয়েছে দুটি টার্মিনাল। পুরনো দুটি টার্মিনালের বছরে ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে সব মিলিয়ে বছরে দুই কোটি ৪০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া যাবে।

বরগুনার আলো