• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় স্কাউট আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান তিন দেশ সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী লাইলাতুল কদর মানবজাতির অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনি শবে কদর রজনিতে দেশ ও মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা প্রধানমন্ত্রীর সেবা দিলে ভবিষ্যতে ভোট নিয়ে চিন্তা থাকবে না জনপ্রতিনিধিদের জনসেবায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে ভোটের চিন্তা থাকবে না দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রেসিডেন্টকে শেখ হাসিনার চিঠি রূপপুরে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আহ্বান রূপকল্প বাস্তবায়নে অটিজমের শিকার ব্যক্তিদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে

অপহরণের পর টাকা হাতিয়ে নেন ল্যাংড়া মামুন, রয়েছে টর্চার সেল

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২২  

মুফতি মামুন ওরফে ল্যাংড়া মামুন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ডান পা হারালেও অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে ছিলেন। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষকে আটকে রেখে আপত্তিকর ছবি তুলে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। তার রয়েছে দুটি টর্চার সেলও।

মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা ও গুলিস্তান এলাকায় অভিযান চালিয়ে পটুয়াখালীর ব্যবসায়ী শিবু লাল দাসকে অপহরণের মূলহোতা ল্যাংড়া মামুন ওরফে মুফতি মামুনসহ চারজনকে গ্রেফতার করে ডিবি (গোয়েন্দা শাখা) গুলশান বিভাগ।

বুধবার (২০ এপ্রিল) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ, ডিবি গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান।

গ্রেফতার অন্য ব্যক্তিরা হলেন- ল্যাংড়া মামুনের সহযোগী পিচ্চি রানা, বিআরটিসির গাড়িচালক জসীম উদ্দীন ও রেন্ট-এ-কারের দালাল আশিকুর রহমান। এসময় তাদের কাছ থেকে অপহরণকাণ্ডে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার, মোবাইল ফোন, গামছা ও চার হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধ স্বীকার করেছে এবং অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ আক্তার বলেন, বিভিন্ন অপকৌশলে পটুয়াখালী জেলা শহরে মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক বনে যান মামুন। তার অর্থের প্রধান উৎস মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। এলাকায় বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে বড় ব্যবসায়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মামুন।

অপহৃত শিবু লাল দাস পটুয়াখালী জেলা শহরের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তিনি ঠিকাদারিসহ বিভিন্ন ব্যবসায় সম্পৃক্ত। গত ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টার দিকে গলাচিপার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নিজের গাড়িতে পটুয়াখালী শহরের বাসায় ফেরার পথে ড্রাইভারসহ নিখোঁজ হন তিনি। পরে দূরের একটি পেট্রল পাম্পের কাছে পরিত্যক্ত অবস্থায় তার পাজেরো জিপটি উদ্ধার করে জেলা পুলিশ।

এরপর ১২ এপ্রিল রাতে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় শিবু লালকে উদ্ধার করে পুলিশ। জেলা পুলিশের অনুরোধে এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে কাজ শুরু করে ডিএমপির গুলশান ডিবি।

হাফিজ আক্তার বলেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসে পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের কাছাকাছি ল্যাংড়া মামুনের পোশাক কারখানার অফিসে বসে পরিকল্পনা সাজায় অপহরণকারীরা। এতে অংশ নেয় ল্যাংড়া মামুন, পিচ্চি রানা, পাভেল ও বিআরটিসির গাড়িচালক জসিম। পরে একাধিকবার মিটিং ও অপারেশনাল পরিকল্পনা করে তারা।

‘এই মিটিংয়ে ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে যোগ দিতো জসীম উদ্দীন মৃধা ও তার ভাই গাড়ির দালাল আশিক মৃধা। আগাম ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা থেকে এক সপ্তাহের জন্য গাড়ি ভাড়া করা হয়।‘

‘এছাড়া অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগসহ অপারেশনাল কাজে ব্যবহার করার জন্য সাভার থেকে কেনা হয় পাঁচটি বাটন মোবাইল ফোন। বেশি দাম দিয়ে কেনা হয় অন্যজনের নামে নিবন্ধন করা সিম।’

‘এরপর একটি খেলনা পিস্তল, দুটি সুইচ গিয়ার চাকু, তিনটি চাপাতি ও গরু জবাই করার একটি বড় ছুরি সংগ্রহ করে তারা। একাধিক দিন রেকি করে (আগে খোঁজ-খবর নেওয়া) ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় ফিল্মি স্টাইলে অপহরণ করা হয় শিবু লাল দাসকে।’

১১ এপ্রিল দুপুরে পটুয়াখালী বিমানবন্দরের কাছে মিলিত হয়ে সবাইকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয় ল্যাংড়া মামুন ও পিচ্চি রানা। শিবু লালের গতিবিধি জানানোর জন্য পিচ্চি রানা ও ল্যাংড়া মামুন মোটরসাইকেলে যায় গলাচিপা ঘাটে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্যারিকেড দেওয়ার জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা সড়কের শাঁখারিয়ার নির্জন জায়গায় একটা প্রাইভেটকার ও একটা ট্রলি নিয়ে অবস্থান নেয় তাদের পাঁচ সহযোগী।

ল্যাংড়া মামুনের সংকেত পাওয়ার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে ড্রাইভার বিল্লাল ট্রলিটি নিয়ে সুকৌশলে শিবু লাল দাসের জিপের সামনে আড়াআড়ি করে অবস্থান নেয়। পেছন থেকে অনুসরণ করতে থাকা আশিক মৃধা তার প্রাইভেটকার নিয়ে শিবু লালের গাড়ির পেছনে অবস্থান নেয়।

এরপর আশিক মৃধা প্রাইভেটকার ছেড়ে শিবু লালের গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়। গাড়িতে উঠেই বিল্লাল, পাভেল, সোহাগ মিলে আশিক শিবু লাল ও তার গাড়িচালককে বেঁধে ফেলে। গামছা, টিস্যু পেপার ও স্কচটেপ দিয়ে মুখ ও হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালাতে থাকে।

বরগুনার আমতলী এলাকার গাজিপুরায় গিয়ে শিবু লাল ও তার গাড়িচালককে তোলা হয় ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া প্রাইভেটকারে। সেখানে দুজনকেই বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ঢুকানো হয়। শিবু লালের জিপটি আমতলীর একটি ফিলিং স্টেশনে ফেলে আসে তারা। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ল্যাংড়া মামুন ও পিচ্চি রানা পটুয়াখালীর বাঁধঘাট এলাকায় ভিকটিমদের বহনকারী গাড়ি বুঝে নেয়।

এরপর পটুয়াখালী শহরের এইচডি রোডের নিজস্ব মেশিন ঘর কাম টর্চার সেলে নেওয়া হয় তাদের। সেখান থেকে পরে নিয়ে যাওয়া হয় এসপি কমপ্লেক্স সুপার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্থায়ী সেলে। সেখানে রাতভর নির্যাতন চালানো হয় শিবু লাল ও তার গাড়িচালকের ওপর।

পরদিন পিচ্চি রানার নির্দেশে বিল্লাল শিবু লালের সিম থেকে তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং বিষয়টি পুলিশকে জানালে শিবু লালকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয় সে।

এক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, গ্রেফতার হওয়া ল্যাংড়া মামুন অল্প বয়সে অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। নিজের ভগ্নিপতির টাকা মেরে দিয়ে পটুয়াখালী শহরে একাধিক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়েছে সে।

‘ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষকে তার টর্চার সেলে আটকে রেখে আপত্তিকর ছবি তুলত সে। এরপর তাদের ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নিত লাখ লাখ টাকা।’

মাওলানা হিসেবে তার বাবার সুখ্যাতি এবং বেপরোয়া আচরণের কারণে পঙ্গু এ ক্যাডারের ভয়ে এতদিন মুখ খোলেনি কেউ। মামুন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া তাদের নামে মাদক আইনে আরও একটি মামলা করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

বরগুনার আলো