• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ইসলামের সেবক হিসেবে আবির্ভূত হলেন চেঙ্গিস খানের পৌত্র বারকি খান

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ৬ নভেম্বর ২০১৯  

বারকি খান ছিলেন চেঙ্গিস খানের পৌত্র। অন্যান্য মোঙ্গল পরিবারের মতো শৈশবেই তিনি সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন এবং অস্ত্র পরিচালনায় দক্ষ হয়ে ওঠেন। যুদ্ধের ময়দানে সাহসিকতা ও বীরত্বের জন্য জীবনে বহুবার পুরস্কৃত হন। তবে তাঁর ‘গোল্ডেন হর্ড’-এর শাসন (১২৫৭-৬৬ সাল) তাঁকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে। ‘গোল্ডেন হর্ড’ ছিল তৎকালীন মোঙ্গল সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ, যা বর্তমানে তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তানসহ মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়।

মোঙ্গলীয় নেতা হালাকু খানের হাতে বাগদাদের পতনকে ‘ইসলামী সভ্যতার সূর্যাস্ত’ আখ্যা দিয়েছেন আল্লামা ইবনে আসির (রহ.)। ইসলামী খিলাফতের রাজধানী বাগদাদে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালান তিনি। শুধু বাগদাদ নয়, মধ্য এশিয়ার মুসলিম শাসিত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক গণহত্যা চালায় হালাকু খান ও তাঁর বাহিনী। কিন্তু সেই রক্তপিয়াসি মোঙ্গল জাতির কোনো কোনো নেতাকে আল্লাহ ইসলামের সেবক হিসেবে আবির্ভূত করেন। তেমনি একজন হলেন বারকি খান বা বিরখাই খান।

ধারণা করা হয়, বারকি খান ১২৫২ সালে বোখারায় ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে বলা হয়, মরুযাত্রীদের একটি দল শহরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদের আটক করে ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বারকি খান তখন ইসলামের একত্ববাদ ও অন্যান্য বিশ্বাসের ধারণা পান এবং মুগ্ধ হন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ধার্মিক জীবন যাপন করেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে আল্লাহর পরিকল্পনা ছিল আরো সুদূরপ্রসারী।

হালাকু খান ছিলেন চেঙ্গিস খানের অপর পৌত্র ও বারকি খানের চাচাতো ভাই। তিনি ছিলেন অর্ধস্বায়ত্তশাসিত মোগল অঞ্চল ইলখানেতের শাসক। হালাকু খান তাঁর অনিন্দ্য সুন্দরী খ্রিস্টান স্ত্রী ডোকজ খাতুন দ্বারা প্রচণ্ড রকম প্রভাবিত ছিলেন। হালাকু খানের পছন্দ-অপছন্দ ও রাজ্য পরিচালনায় তাঁর বিশেষ নিয়ন্ত্রণ ছিল। হালাকু খান যখন নেস্টোরিয়ান চার্চ পরিদর্শনে যান তখন ‘অবিশ্বাসী মুসলিমদের’ বিরুদ্ধে খ্রিস্টান নেতারা তাঁকে খেপিয়ে তোলেন। তিনি তাঁর স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করার জন্য মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন, যে ধ্বংসাত্মক অভিযান কয়েক বছর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ১২৫৬ সালে পারস্যের বিরুদ্ধে অভিযানের মধ্য দিয়ে হালাকু খানের মুসলিমবিরোধী অভিযান শুরু হয় এবং তা শেষ হয় ১২৫৮ সালে বাগদাদ পতনের মধ্য দিয়ে। বাগদাদ দখল করার পর আব্বাসীয় খলিফা আল মুস্তাসিম বিল্লাহ ও তাঁর সন্তানদের হত্যা করেন। দামেস্কের আইয়ুবি শাসকরাও হালাকু খানের নির্দয় আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। এ সময় একটি অপ্রতিরোধ্য শক্তি এবং ‘আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’ মূলনীতির আলোকে ক্রুসেডার রাষ্ট্রসহ (খ্রিস্টান-মুসলিম যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী) অনেক খ্রিস্টান রাজ্য হালাকু খানকে সমর্থন জানায়।

আইনে জালুত যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতে ১২৬২ সালে হালাকু খান মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে আবার অভিযানের ঘোষণা করেন। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে হালাকু খান মামলুকদের তুলনায় অনেক বড় বাহিনী গড়ে তোলেন; যদিও হালাকু খানের বাহিনীই মামলুকদের শায়েস্তা করতে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু এবার তাঁকে প্রতিহত করার উদ্যোগ নেন বারকি খান। মোঙ্গল নেতা ‘গ্রেট খান’-এর উদ্দেশে এক চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘হালাকু খান মুসলিম শহরগুলো দখল করেছেন এবং খলিফাকে হত্যা করেছেন। আল্লাহর সাহায্যে আমি তাঁকে নিরপরাধ মানুষের রক্তের জবাবদিহি করতে ডাকব। হালাকু খান যেন আর কোনো মুসলিম অঞ্চলে আগ্রাসন না চালান।’

বারকি-হালাকু যুদ্ধ ১২৬২ ছিল পশ্চিমাঞ্চলীয় মোঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রথম গৃহযুদ্ধ। ককেশাস পাহাড়ের পাদদেশে দুই বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে কোনো পক্ষই চূড়ান্ত জয় বা পরাজয়বরণ করেনি। তবে এর মাধ্যমে হালাকু খানের ক্ষমতার অবসান হয়। তেরেক নদীর তীরে বারকি খানের ভ্রাতুষ্পুত্র নোগাইয়ের সঙ্গে হালাকু খানের শেষ যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের পর তিনি ফিরে যেতে বাধ্য হন। ১২৬৫ সালে হালাকু খানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মুসলমানের বিরুদ্ধে তাঁর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অবসান ঘটে।

বারকি খানও এই সংঘাতের অবসান চাচ্ছিলেন। চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে তিনিও দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আজ মোঙ্গলদের তলোয়ারে মোঙ্গলরা কাটা পড়ছে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, তাহলে আমরা পৃথিবী শাসন করতে পারব।’ হ্যাঁ, বারকি খান বসে বসে কোটি কোটি মুসলিম হত্যার দৃশ্য দেখতে চাননি। মানবিক প্রয়োজনে তিনি হালাকু খানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ান এবং তাতে তিনি সফলও হন।

হালাকু খানের মৃত্যুর আনুমানিক এক বছর পর ১২৬৬-৬৭ সালে বারকি খান ইন্তেকাল করেন। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে তাঁর বড় ভ্রাতুষ্পুত্র তৈমুরের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তিনি বারকি খানের নীতি অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করেন। ইলখানাতের বিপরীতে মামলুকসহ মুসলিম শাসকদের সঙ্গে মৈত্রী গড়ে তোলেন।

বারকি খান তাঁর সংক্ষিপ্ত শাসনামলে যে কাজ করেন তার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। বিশেষত হালাকু খানের ধ্বংসযাত্রা থামিয়ে তাঁর হাত থেকে মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার মুসলিম গোত্রগুলোকে রক্ষা করেন; যদিও বেশির ভাগ ঐতিহাসিক আইনে জালুতের যুদ্ধকেই ইতিহাসের বাঁকবদলকারী আখ্যা দেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ছিল একটি প্রাথমিক জয়। এর পরও মুসলিমবিশ্ব হালাকু খানের আক্রমণঝুঁকিতে ছিল। তা ছাড়া হালাকু খান নিজেও সেই যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন না। তবে অসম যুদ্ধে মামলুকদের বিজয় অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এই কৃতিত্বের প্রকৃত দাবিদার বারকি খান। তাঁর বাহিনীই হালাকু খানকে ডেরায় ফিরে যেতে বাধ্য করেছিল। তিনি আরেকটি মুসলিম গণহত্যা রোধ করতে সক্ষম হন। তিনি যদি হালাকু খানকে রোধ না করতেন হয়তো ইসলামের পবিত্র ভূমিও বাগদাদের মতো রক্তে ভেসে যেত। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, বর্তমান সময়ের মুসলিম ঐতিহাসিকরা বারকি খানের এই অবদান স্মরণ করেন না।

যদিও বারকি খান কোনো দরবেশ ছিলেন না, তবে তিনি মুসলিম ভ্রাতৃত্ব লালন করতেন। সংকটপূর্ণ সময়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। বর্তমান সময়ের নেতাদের মতো মিথ্যা জাতীয়তাবাদ, সীমানা, রাজনীতির কূটকৌশল ও ব্যক্তিস্বার্থ বারকি খানকে ‘উম্মাহ চিন্তা’ থেকে দূরে ঠেলে দেয়নি। এটিই বারকি খানের শ্রেষ্ঠত্ব। আল্লাহ তাঁকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন।

বরগুনার আলো