• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
২০৩২ সাল পর্যন্ত ইইউতে জিএসপি সুবিধা পেতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পাশে আছি: প্রধানমন্ত্রী জনসমর্থন থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব রোহিঙ্গাদের জন্য বৃহত্তর তহবিল সংগ্রহে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান লেখাপড়ার নামে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করার আহ্বান বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিশ্বে অনেক বাজার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে: প্রধানমন্ত্রী ট্রাস্ট করে ভাষা সংরক্ষণ-উন্নয়নের উদ্যোগ, হচ্ছে আইন ‘কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার’ ইফতার পার্টি না করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে দেশে ফিরেছেন রাষ্ট্রপতি রোজার তাৎপর্য অনুধাবন করে সমাজ জীবনে প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান পবিত্র মাহে রমজানে বাংলাদেশসহ মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা ‘নভোথিয়েটার করার জন্য খালেদা জিয়া দুটি মামলা দিয়েছিল’ কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক আমরা সমুদ্র সীমার অধিকার নিশ্চিত করেছি: প্রধানমন্ত্রী ৪১ সালের মধ্যে দুর্যোগ সহনশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আশা গবেষণা জাহাজ সংগ্রহের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২০  

প্রথমেই একটা প্রশ্ন আসে-করোনা ভাইরাস কী এবং কীভাবে রোগের জন্ম দেয়?

করোনা ভাইরাস বা যেকোনো ভাইরাস একটি জীবাণু। কোনো জীব নয়। এটি একটি প্রোটিন কণা যার উপরে ফ্যাট বা চর্বির একটি প্রলেপ থাকে। যখনই চর্বির প্রলেপযুক্ত প্রোটিন কণা চোখ, নাক ও মুখের সংস্পর্শে আসে ও শরীরের কোষগুলোর মধ্যে ঢুকে পড়ে তখন আমাদের শরীরের কোষগুলোর জিনগত সংকেতের (জেনেটিক কোড) পরিবর্তন আনার কারণে শরীরের ওই কোষগুলো ভাইরাস তৈরির কোষে পরিণত হয়।

এদের বৃদ্ধি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। ফলে হাজার, লক্ষ ভাইরাস অতি অল্প সময়ে তৈরি হয়। জিনগত সংকেতের পরিবর্তনের ফলে এই কোষগুলো করোনা ভাইরাস সম্পৃক্ত বিভিন্ন উপাদান অনেক পরিমাণে পুরো শরীরে ছড়িয়ে দেয় এবং রোগের জন্ম দেয়। 

যেহেতু এটি জীবন্ত জীবাণু নয়, একটি প্রোটিন মলিকুল মাত্র। তাই এটি মেরে ফেলার মতো কোনো বিষয় নেই। স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী যেভাবে অন্য প্রোটিন কণা ক্ষয় হয় সেভাবে এটিও ক্ষয় হয় যায়। ক্ষয় হওয়ার সময় নির্ভর করে- তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও কোনো বস্তুর উপর এটি পড়ে আছে তার ওপর। 

এই ভাইরাসটি ভঙ্গুর। একটি ছোট চর্বির স্তর এটাকে রক্ষা করে। যেকোনো সাবান বা ডিটারজেন্ট কেবল ২০ সেকেন্ড ব্যবহারের ফলেই ভাইরাসটির চর্বির স্তর ভেঙে দিয়ে এটিকে অকার্যকর করতে সক্ষম। তবে মনে রাখতে হবে, প্রকৃতির দেওয়া সুরক্ষা অক্ষত ত্বক/চামড়া (এই সুরক্ষা কিন্তু নাকের ভেতরে, মুখের গহ্বর ও চোখের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। কেননা এদের বাইরের আস্তরণ দুর্বল, ত্বকের মতো না।) তাই অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করবেন না, যা হাতের চামড়া নষ্ট করে। 

আমরা জানি, তাপে চর্বি গলে। তাই ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এর অধিক তাপমাত্রায় পানি দিয়ে হাত ও কাপড় ধুলে এই ভাইরাসের চর্বির স্তর ধ্বংস হয়ে তা অকার্যকর হয়ে যায়। সবাই জানি গরম পানিতে সাবানের ফেনা বেশি হয়। তাই এই রকম গরম পানির সঙ্গে সাবান ব্যবহার খুবই কার্যকর।

এবার আসা যাক অ্যালকোহল বা অ্যালকোহলের সঙ্গে মিশ্রিত উপাদান যেমন- হ্যান্ড স্যানিটাইজার অ্যালকোহল প্যাড দিয়ে পরিষ্কার এসব প্রসঙ্গে। ৬৫ শতাংশের বেশি মাত্রার অ্যালকোহল যেকোনো ভাইরাসের চর্বির স্তর ভাঙতে সক্ষম। 

ভোদকা (vodka) মদ মাত্র ৪০ শতাংশ শক্তিশালী। এই মাত্রার মদ কোনো কাজে আসবে না। খেলেও কাজে আসবে না। অধিকন্তু খাদ্যনালীসহ পেটের সর্বনাশ করবে।

এই মদ খাওয়া ভাইরাস চিকিৎসার উপায় না। একইভাবে স্পিরিটও কার্যকর নয়। এটি কোনো স্যানিটাইজার নয়। অ্যালকোহল দিয়ে স্যানিটিইজার বানানোর প্রক্রিয়া অনেক ভিন্ন। সেখানে অ্যালকোহলের মাত্রা ৬৫ শতাংশের বেশি হতে হয় যা খাওয়া যাবে না। কিন্তু হাত বা ত্বক
পরিষ্কারে ব্যবহার করা যাবে।

এবার ব্লিচিং পাউডার: 
একভাগ ব্লিচিং পাউডার এবং ৫ ভাগ পানির মিশ্রণ ভাইরাসের প্রোটিন অংশ ভাঙতে পারে।

অক্সিজেনেটেড পানি কী কার্যকর?
হ্যাঁ, এটি সাবান, অ্যালকোহল এবং ক্লোরিনের মতই কার্যকর। কিন্তু পিউর বা বিশুদ্ধ অক্সিজেনেটেড পানি ত্বকের ক্ষতি করে। তাই ব্যবহার করা যাবে না। 

ব্যকটেরিয়ানাশক (Antibiotic) কোনো কিছু কী কার্যকর? 
ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার মতো জীবন্ত অনুজীব নয়। তাই এক্ষেত্রে কোনো এন্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। মনে রাখবেন- আপনি আপনার ব্যবহৃত কাপড়, বেডশিট ঝাঁকি দেবেন না। যখন এই ভাইরাস শুধু কাপড়ের উপর পড়ে থাকে বা কাপড়ের ছিদ্রে পড়ে থাকে তা তিন ঘণ্টার মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। তামার তৈরি কোনো জিনিসের উপর পড়ে থাকলে চারঘণ্টা, কাঠের উপর পড়ে থাকলে চার ঘণ্টা (কারণ কাঠে আর্দ্রতা নেই), হার্ডবোর্ডের উপর একদিন এবং লৌহ জাতীয় জিনিসের উপর দুইদিন থাকে। আর প্রায় তিনদিন থাকে প্লাস্টিকের উপরে। তাই যদি কাপড় বা এ সমস্ত জিনিসগুলোর ঝাঁড় বা পরিষ্কারের জন্য (Feather/Duster) ব্যবহার করেন তাহলে ভাইরাসের কণা বাতাসে ওড়ে এবং প্রায় তিন ঘণ্টা ভাসতে পারে এবং শ্বাসের সঙ্গে নাকে-মুখে ঢুকতে পারে। ঠাণ্ডায় ভাইরাসের কণা সুরক্ষিত থাকে। যেমন- ঠাণ্ডা আবহাওয়া, বাসা বাড়ি এবং গাড়িতে এসি (শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযত্র) ব্যবহার। এই ভাইরাস Molecule আবার আর্দ্রতাতেও সুরক্ষিত থাকে। যেমন- অন্ধকার। 

তাই শুকনা, গরম এবং আলোকিত স্থান, ঘরবাড়ির দরজা খুলে দিয়ে আলো আসতে দেওয়া এই ভাইরাস ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তাই বাসাবাড়ি ও গাড়িতে এসি ব্যবহার না করি। বাসাবাড়ি অন্ধকার না রাখি। আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখি। যত বদ্ধ জায়গা তত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই খোলামেলা জায়গা ব্যবহার করা ভালো।

আলট্রাভায়োলেট লাইট (Ultra violet) ভাইরাসকে ভাঙতে পারে। কিন্তু এটি ত্বকের ক্ষতি করে। তাই Ultra violet লাইট দিয়ে মাস্ক (Musk) পরিষ্কার করে আবার ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু এটা ত্বকের জন্য নয়। কেননা এটি ব্যবহারে ত্বরের ভাঁজ পড়তে পারে বা ক্যান্সার হতে পারে।

মনে রাখবেন, সুস্থ ত্বক (কোনো ক্ষত নেই) ভেদ করে ভাইরাস ঢুকতে পারে না। আর ভিনেগার কার্যকর নয়। কেননা এটি ভাইরাসের চর্বি স্তরকে ভাঙতে পারে না।

আমাদের করণীয়-
১.ঘরে থাকি।
২. বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি। মাস্ক ব্যবহার করি।
৩. তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক উপরের নিয়মে ধুয়ে ব্যবহার করতে পারি (যদি বাধ্য হই)।
৪. বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। বা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
৫. প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে (যদি বাধ্য হই)।
৬. কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পড়ি (যদি বাধ্য হই (কেননা এগুলো একবার ব্যবহারের জন্য তৈরি)।
৭. চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
৮. হাঁচি কাশি যাদের আছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাইল ফোন, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা এবং বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি।

কেননা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাস থেকে যায়। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকি। 

সবশেষ সেই পুরাতন উপদেশ। ধর্মীয় উপদেশও বটে। হাত পায়ের নখ ছোট করি। নিয়মিত কাটি ও ছোট রাখি। কেননা নখের নিচেও ভাইরাস লুকিয়ে থাকতে পারে। সবাই সবার জন্য চেষ্টা করি। দোয়া করি। সবাই ভালো থাকি। (সূত্র: জনস হফকিন্স ইউনিভার্সিটি)। 

লেখক: চেয়ারম্যান, রিউমাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়; চেয়ারম্যান, ডা. নজরুল ইসলাম রিউমাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

বরগুনার আলো