চলমান অভিযান জনমনে প্রত্যাশার সৃষ্টি করবে: টিআইবি

ছাত্র ও যুবনেতাদের একাংশের দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি গৃহীত পদক্ষেপের ফলে দুর্নীতির যে চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে, তাকে ‘হিমশৈলের চূড়ামাত্র’ বলে আখ্যায়িত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চলমান অভিযান উৎসাহব্যঞ্জক ও জনমনে প্রত্যাশার সৃষ্টি করবে। এর ফলে দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণে কী ফল পাওয়া যাবে, তা নির্ভর করবে এটি কতটুকু সর্বব্যাপী ও টেকসই হয় তার ওপর।

আজ শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেছেন।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, মূলত রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় ও রাজনৈতিক পরিচয়ে দুর্নীতির শিকড় আরও গভীরতর ও ব্যাপকতর। চলমান অভিযানের ক্ষেত্রে সর্বাত্মক জবাবদিহি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

দুর্নীতির যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে, তা হতাশাব্যঞ্জক হলেও অবাক করার মতো কিছু নয় বলে মন্তব্য করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, রাজনীতি, ব্যবসা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাংশের দুর্নীতিবান্ধব যোগসাজশ সমাজের সব পর্যায়ে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছে। এখন জরুরি, কাউকে ছাড় না দেওয়া, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে যেকোনো পর্যায়ের অবস্থান ও পরিচয়ে প্রভাবিত না হয়ে এ ধরনের অনিয়মে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাম্প্রতিক অভিযানের ফলে যে উৎকণ্ঠাজনক চিত্র সামনে এসেছে, তা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। চলমান এ অভিযানের ব্যাপ্তি ও প্রসার অন্যান্য খাত এবং পর্যায়ে বিস্তৃত করতে পারলে একই চিত্র উদ্‌ঘাটিত হবে। রাজনৈতিক সংস্রবপ্রসূত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার শুধু রাজধানী ও এর আশপাশের যুব ও ছাত্রনেতাদের একাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিস্তৃত দেশব্যাপী সব পর্যায়ে। বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিসহ মূল রাজনৈতিক দল ও দলের অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতিম অঙ্গ–সংগঠনের একাংশেও এটা বিস্তৃত। প্রকৃতপক্ষে, ছাত্র ও যুবসংগঠনের নেতারা এ ক্ষেত্রে তাঁদের মূল দলের অগ্রজদেরই অনুসরণ করে থাকেন, যাঁরা এ ক্ষেত্রে তাঁদের এই চর্চার রোল মডেল।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, গণমাধ্যমে গতকাল প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী ‘কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না’ মর্মে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন, তার মধ্যেই মূলত সর্বব্যাপী জবাবদিহির গুরুত্ব নিহিত রয়েছে। এর আগে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতার’ যে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং সম্প্রতি দলীয় পরিচয় ও পদের অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে তার কঠোর ও অনমনীয় অবস্থান ব্যক্তির পরিচয় ও দলীয় বা প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান–নির্বিশেষে যথাযথভাবে পরিপালন হলেই কেবল প্রত্যাশিত সুফল পাওয়া যাবে।

একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সংশ্লিষ্ট খাতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের একাংশের অংশগ্রহণ, রক্ষকের ভূমিকা ও যোগসাজশ ব্যতীত এ–জাতীয় দুর্বৃত্তায়ন সম্ভব নয় বিধায় সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানেও বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যক্তিদের একইভাবে জবাবদিহির আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পেশাগত শুদ্ধাচার, নিরপেক্ষতা ও উৎকর্ষ নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজাতে হবে বলে মনে করে টিআইবি।