• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জয়-পরাজয় নয়, সবার চোখ ভোট পরবর্তী অনিশ্চয়তায়

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০২০  

ল্যাটিন আমেরিকা থেকে ইউরোপ, কিংবা আফ্রিকা থেকে এশিয়া-মধ্যপ্রাচ্য, দুনিয়াজুড়ে যাদের সামরিক-বাণিজ্যিক আধিপত্য; সেই যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নেতা নির্বাচনের এই দিনটিতে (৩ নভেম্বর) সারা বিশ্বের চোখই আমেরিকায়। তবে প্রতিবার যেমন করে নজর থাকে কে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন তা দেখার জন্য, এবার তা হচ্ছে না। কারণ, পরাজয় মেনে নেবেন কিনা; নির্বাচনি প্রচারকালে তা নিয়ে বিপুল পরিমাণ সংশয়ের জন্ম দিয়ে রেখেছেন ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার সবার চোখ তাই ভোট পরবর্তী অনিশ্চয়তায়। বিশ্লেষকরাও ট্রাম্পের শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে সন্দিহান।

বিগত প্রায় ৬ মাস ধরেই ট্রাম্প নির্বাচনের পর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে সংশয় সৃষ্টি করে আসছেন। অজুহাত আকারে হাজির করছেন ডাকযোগে ভোটকে (মেইল-ইন ভোট)। যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক কর্মদিবসে নির্বাচন হয় বলে অনেক মানুষ সশরীরে ভোট দিতে পারেন না৷ কাজের সূত্রে দূরে থাকার কারণেও কারও কারও ভোট দিতে সমস্যা হয়৷ এমন সব মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে সেদেশে ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর বিধান রয়েছে৷

এবার করোনাভাইরাস মহামারির প্রেক্ষাপটে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে মেইল ইন ভোটের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেওয়া হলেও ট্রাম্প শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করছেন। ভোট জালিয়াতি হতে পারে, এই অজুহাতে মেইল ইন ভোট বাধাগ্রস্ত করতে নানামুখী পদক্ষেপ নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ডাক বিভাগের ব্যয় সংকোচন করেন এবং স্পষ্ট করে বলেন, তিনি ডাকযোগে ভোট প্রতিহত করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সব বাধা উপেক্ষা করে এবারের নির্বাচনে ডাকযোগে রেকর্ড সংখ্যক আগাম ভোট পড়েছে। মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএন-এর তথ্য বলছে, এরইমধ্যে অন্তত ৯ কোটি ৬০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার ডাকযোগে তাদের রায় জানিয়ে দিয়েছেন। মোট ভোটের সংখ্যায় যা ২০১৬ সালের নির্বাচনের দুই তৃতীয়াংশ।

ডাকযোগে এই বিপুল পরিমাণ ভোট ঠেকাতে পারেননি ট্রাম্প। তবে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই তিনি এই পদক্ষেপকে বিতর্কিত করতে সব ধরনের চেষ্টাই অব্যাহত রেখেছেন ভোটের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। আগস্টে তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন হলেও ডাক ভোটের বিলম্বের কারণে ফল হয়তো কোনোদিন জানা যাবে না। সেপ্টেম্বরেই তিনি নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত হলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কিনা; এ ব্যাপারে কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তার ভাষ্য, পরাজিত হলে আগে দেখতে হবে আসলে কী ঘটেছে।

সবশেষ  ২৮ অক্টোবর (বুধবার) ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট হিসেবে পরিচিত অ্যারিজোনায় এক সমাবেশে ট্রাম্প দাবি করেন, সম্প্রতি যেসব জনমত জরিপে তার চেয়ে বাইডেনের এগিয়ে থাকার আভাস এসেছে, সেগুলো ভুয়া। সমাবেশে উপস্থিত সমর্থকরা ট্রাম্পের দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন।  সোমবার (২ নভেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান শনিবার নিউজ পোর্টাল অ্যাক্সিওসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে দাবি করেছে, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে ‘এগিয়ে থাকার’ আভাস মিললেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারেন ট্রাম্প। এই দাবি অস্বীকার করেছেন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট। তবে নর্থ ক্যারোলিনা ও পেনসিলভানিয়ায় মেইল ইন ব্যালট পৌঁছানোর সময়সীমা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রুলের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী ওই দুই অঙ্গরাজ্যে যারা মেইল ইন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিচ্ছেন তারা নির্বাচন শেষ হওয়ার আগেই ভোট দিয়ে সেগুলো পোস্ট করলেও ব্যালটগুলো মঙ্গলবার পৌঁছাবে না। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের দেশের জন্য এটি এক ভয়াবহ সিদ্ধান্ত। এবং আমি মনে করি এটি আমাদের দেশের জন্য বিপজ্জনক সিদ্ধান্তও। কারণ, কীভাবে ভোট শেষ হচ্ছে, কোথায় ব্যালট গণনা হচ্চে তার ওপর নির্ভর করে সেদিন একটি, দুইটি কিংবা তিনটি অঙ্গরাজ্যের ফল হয়তো জানতে পারবেন, বাকিগুলোর জন্য বিশ্বকে অপেক্ষায় থাকতে হবে। আমি মনে করি এটা খুবই ভয়াবহ। অনেক জালিয়াতি ও অপব্যবহার হতে পারে বলে আমার শঙ্কা হচ্ছে। আমি মনে করি সুপ্রিম কোর্ট ভয়ঙ্কর এক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ভয়ঙ্কর সিদ্ধান্ত এটি।’

ট্রাম্প যাই বলুন, সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক ট্রাম্পেরই পক্ষে। আর ডাকবিভাগের প্রধান লুই ডিজয় তারই সমর্থনপুষ্ট। রিপাবলিকান শিবিরের একজন অর্থদাতাও তিনি। ডিজয়ের নেতৃত্বে ডাকবিভাগে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের কথা ভাবা হয়েছিল। তার মধ্যে ছিল সব মেইল বক্স সরিয়ে নেওয়া, ডেলিভারি দেওয়ার সময় কমিয়ে আনা এবং সর্টিং মেশিন বন্ধ করে দেওয়া। ডেমোক্র্যাটরা আশঙ্কা জানিয়েছিল, এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে। চাপের মুখে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের সে সিদ্ধান্ত বাতিল করেন তিনি।

তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নির্বাচনের মাত্র কয়েক দিন আগে ফল নির্ধারণে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মিশিগান অঙ্গরাজ্যের কয়েকটি শহর থেকে প্রথম শ্রেণির চিঠি বিলির গতি স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ধীর হয়ে পড়েছে। দ্য গার্ডিয়ান বলছে, নতুন করে নেওয়া ব্যয় সংকোচন নীতির কারণেই এই ধীরগতি। বিশেষত ডেট্রয়েট শহরে চিঠি বিলির এই বিলম্ব ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী এবং জো বাইডেনের প্রচার দলের জন্য সমস্যা বলে দেখা যেতে পারে। তবে ডাক বিভাগ দ্য গার্ডিয়ানের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। পোস্টাল শ্রমিক ইউনিয়ন বলছে, সময়মতো পোস্টাল ব্যালট পৌঁছে দিতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

গত নির্বাচনে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতলেও ভোটের ব্যবধান ছিল মাত্র দশ হাজার। সম্প্রতি মিশিগানের এক বিচারক রায় দিয়েছেন ডাকযোগে পাঠানো ভোট বিলম্বে পৌঁছালে তা গণনা করা হবে না। অথচ নির্বাচনের চূড়ান্ত সপ্তাহেও প্রায় ৭০ হাজার ডাক ভোট পৌঁছাতে পারেনি ডেট্রয়েট শহরের পোস্টাল কর্তৃপক্ষ। দ্য গার্ডিয়ান বলছে, মহামারির আগে ট্রাম্প নিযুক্ত পোস্ট মাস্টার জেনারেল লুইস ডিজয় এই গ্রীষ্মে যে পরিবর্তন আনেন তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ডাক ব্যবস্থায় সময়মতো চিঠি পৌঁছানোর হার প্রায় ৯৫ শতাংশ। তবে ব্যয় কমানোর নতুন কৌশলের কারণে চিঠি বিতরণের গতি ধীর হয়ে পড়েছে।

ট্রাম্প শুরু থেকেই বলে আসছেন, ডাকে ৩ নভেম্বর নির্বাচনের পরে পৌঁছানো কোনও ভোট গণনায় নিলেই জালিয়াতির আশঙ্কা থাকবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত ৩টি রাজ্যের মেইল ইন ভোট নিয়ে তাদের রায় দিয়েছেন। নির্বাচনি কর্মকর্তা কিংবা রাজ্য আদালতের রায় মেনে নিয়ে পেনসিলভানিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনার ক্ষেত্রে সময়সীমা বাড়ানোর পক্ষে রায় দেন সুপ্রিম কোর্ট। তবে উইসকিনসনের সময়সীমা বাড়ানো প্রত্যাখ্যান করেছেন একটি ফেডারেল আদালত।

তবে আদালত যাই বলুন, ট্রাম্প বলেই যাচ্ছেন বিলম্বিত ফলাফল মানেই জালিয়াতি। যদিও বিশেষজ্ঞ এবং ভোট কর্মকর্তারা ট্রাম্পের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বলছেন এই প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি কিংবা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এই প্রক্রিয়া নিয়মিত ব্যবহার করেছেন। তা সত্ত্বেও ট্রাম্প হারলেই জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ঝামেলা সৃষ্টি করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মায়ামি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দুই অধ্যাপক জোসেফ ই উসিনস্কি ও ক্যাসি ক্লফস্টাড মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউজউইকে প্রকাশিত এক মন্তব্য প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বছর এমনিতেই শঙ্কা আর উদ্বেগ থাকে। তবে এবারের নির্বাচনে এ ধরনের উদ্বেগ প্রকাশকারীর সংখ্যা অনেক। মহামারির কারণে ভোট দেওয়ার পদ্ধতিতে আসা পরিবর্তন এর একটি কারণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডাক বিভাগের ব্যয় সংকোচন ও এর সেবার মানে হঠাৎ করে নেমে যাওয়ার বিষয়টি। আর যখন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ও তার ঘনিষ্ঠ  আইনপ্রণেতারা এ বিষয়ে নিজেদের বিতর্কিত অবস্থান তুলে ধরতে কুণ্ঠিত হন না, তখন এই উদ্বেগ ও শঙ্কার আকাশ স্পর্শ করাটাই স্বাভাবিক। তাই  ফল যাই হোক না কেন, তা এবার সংশয়ের ঊর্ধ্বে থাকবে না। আর  ফল আসতে বিলম্ব হলে তো কথাই নেই।’

বরগুনার আলো