• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলে যুদ্ধটা করলো কে? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গভবনে স্বাধীনতা দিবসের সংবর্ধনায় ভুটানের রাজার যোগদান বাংলাদেশ-ভুটান তিন সমঝোতা স্মারক সই ইফতার পার্টি না করে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহযোগিতা করুন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বাংলাদেশ মিশনগুলোর ভূমিকা রাখার আহ্বান সমরাস্ত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস উপজেলা নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া উন্নয়ন হয় না প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আধুনিক কারিগরি ও প্রযুক্তি সন্নিবেশ করা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তি ব্যবহারে জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে চায় ডব্লিউএইচও পুতিনকে অভিনন্দন জানালেন শেখ হাসিনা এ বছর ফিতরার হার নির্ধারণ ২০৩২ সাল পর্যন্ত ইইউতে জিএসপি সুবিধা পেতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পাশে আছি: প্রধানমন্ত্রী জনসমর্থন থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব

দেশে গেম খেলার শীর্ষে পাবজি, ফোর্টনাইট, ফ্রি-ফায়ার, ভ্যালোরেন্ট

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০  

দেশে করোনাভাইরাসের এই সময়ে কম্পিউটার ও মোবাইল গেম খেলা আগের চেয়ে আরও জনপ্রিয় হয়েছে, তেমনি খেলার হারও বেড়েছে। তবে খেলার শীর্ষে রয়েছে বিদেশি গেমস। দেশে এই মুহূর্তে গেমারদের কাছে শীর্ষ গেমের তালিকায় রয়েছে পাবজি, ফোর্টনাইট, ফ্রি-ফায়ার, ভ্যালোরেন্ট ইত্যাদি গেমস। বিদেশি গেমের বাজার, গেমসের প্রতি গেমারদের আগ্রহ আকর্ষণ তীব্র হলেও দেশীয় গেমের প্রতি তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি গেমারদের। দেশীয় গেম নির্মাতারা এ সময়ের গেমের বাজারকে গতানুগতিক বলেছেন। দেশীয় গেমের স্বল্পতা, প্রচার প্রচারণা না থাকা, নিয়মিত আপগ্রেড না হওয়া, বৈচিত্র্য না থাকায় গেমের প্রতি গেমারদের আগ্রহ কম। অন্যদিকে বৈশ্বিক গেমের বাজার বলছে, এ বছরের গেমের বাজার আকার অন্যান্য সব সময়কে ছাপিয়ে যাবে।

দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে জানা গেছে, দেশে এই মুহূর্তে গেমসে ব্যয় হচ্ছে সাড়ে ৫০০ জিবিপিএস’র বেশি (আপ ও ডাউন স্ট্রিম মিলিয়ে) ব্যান্ডউইথ। করোনাকালের আগে যার পরিমাণ অনেক কম ছিল। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আম্বার আইটি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী আমিনুল হাকিম জানান, তার প্রতিষ্ঠানে গেমের জন্য ৫ জিবিপিএস (আপস্ট্রিম)ও ৩ জিবিপিএস (ডাউনস্ট্রিম) ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয়। তিনি মনে করেন, পাড়া ও মহল্লায় বা স্থানীয় পর্যায়ে যেসব আইএসপি ইন্টারনেট সেবা দেয় তাদের ক্ষেত্রে গেমের পেছনে ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের শতাংশ বা হার আরও বেশি। আইএসপিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, এ সময়ে খুব খেলা হচ্ছে পাবজি, ফোর্টনাইট, ফ্রি-ফায়ার, ভ্যালোরেন্ট, লিগ অব লেজেন্ড, ফিফা-২০২০, কাউন্টার স্ট্রাইক ইত্যাদি গেমস। এরমধ্যে ভ্যালোরেন্ট গেমটি গত ৩-৪ মাস আগে এসেছে। এসেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে চলে এসেছে। ফ্রি-ফায়ার বেশ আগে এলেও সম্প্রতি গেমটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে জানালেন একটি শীর্ষস্থানীয় আইএসপির একজন কর্মকর্তা।

গেমস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ম্যাসিভ স্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, স্থানীয়ভাবে তৈরি গেমস তরুণরা ব্যাপকভাবে খেলছে না, এমনকি ব্যাপকভাবে প্লে-স্টোরগুলোতেও যাচ্ছে না। যেটা হচ্ছে বিদেশি গেম বেশি খেলা হচ্ছে। তিনি জানান, করোনার এই সময়ে দেশি গেম আগের চেয়ে বেশি খেলা হচ্ছে। তার প্রতিষ্ঠানের তৈরি যুদ্ধ ৭১ (৬টি পার্ট, প্রতিটি পার্টই পূর্ণ গেম) বেশি খেলা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি উল্লেখ করেন, তাদের তৈরি হাতিরঝিল গেমটি অনেকদিন প্লে-স্টোরে ছিল। তিনি বলেন, গেমস নিয়মিত আপগ্রেড করতে হয়, নতুন ভার্সন আনতে হয়। এ জন্য বড় বিনিয়োগ লাগে। আমাদের যে গেমের বাজার তাতে করে শুধু গেমস দিয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না। ফলে গেমস কোম্পানিগুলো দাঁড়াতে পারছে না।  দেশীয় গেমের মধ্যে রাইজ আপস ল্যাবসের তৈরি ট্যাপ ট্যাপ অ্যান্টস, এমসিসি লিমিটেডের তৈরি মিনা গেম সবসময়ই ভালো খেলা (প্লেস্টোর থেকে বেশিবার ডাউনলোড করে) হয় বলে জানা গেছে।

এদিকে শীর্ষ গেমিং ডিভাইস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গিগাবাইটের বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার খাজা মো. আনাস খান জানান, এই করোনাকালে তারা গেমারদের উৎসাহ দিতে গেমারস মিট করেছেন, অনলাইনে ৬টি টুর্নামেন্টেরও আয়োজন করেছেন। তিনি আরও জানান, করোনার সময়ে গেমারদের গেমিং সময় বেড়েছে। দেশের গেমিং কমিউনিটি বেশ বড় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিন দিন এর আকার বড় হচ্ছে। গেমাররা বিদেশে বড় বড় টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছে। একজন গেমার কানাডায় একটি টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন কিন্তু উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকের অভাবে যেতে পারছেন না। শুধু ‍গিগাবাইটই নয় আরও অনেক ব্র্যান্ড আছে গেমিং প্রোডাক্টের জন্য। সবার সম্মিলিত উদ্যোগ গেমারদের আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।  তিনি মনে করেন, গেমারদের পৃষ্ঠপোষকতা দিলে তারাও বিদেশে বিভিন্ন গেমিং টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারবে। তিনি জানান, বরাবরই গেমারদের কাছে গিগাবাইটের মাদারবোর্ড, গ্রাফিকস কার্ড, গেমিং চেয়ার, গেমিং মনিটর, মাউস পছন্দের শীর্ষে। করোনাকালেও এসবের বিক্রি কমেনি। বরং চাহিদা ছিল অন্য সময়ের তুলনায় বেশি।       

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অনেক মানুষ এখনও ঘরবন্দি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ার চাপ কম। এ অবস্থায় অন্যান্য কাজের পাশাপাশি ভিডিও গেমে সময় কাটানোদের সংখ্যা মোটেও কম নয়। বিশেষ করে তরুণরা এর প্রতি আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকেছেন।

বিশ্বের নামকরা সব প্রতিষ্ঠানের জরিপেও উঠে এসেছে মোবাইল গেমের জনপ্রিয়তার কথা। বাজার গবেষণা ইনস্টিটিউট সাইমন কুচার অ্যান্ড পার্টনারস ও দায়নাতার সমন্বিত উদ্যোগে বিশ্বের ১৭টি বাজারে ১৩ হাজার ব্যবহারকারীর মধ্যে একটি গবেষণা পরিচালনা করা হয়। এতে বৈশ্বিক গেমিং শিল্প বিষয়ে বেশ ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠান দুটির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিও গেমিং শিল্পের সব সূচক ঊর্ধ্বমুখী।

বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কনসালট্যান্সি-মি বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা রয়েছে জনসমাগমের ওপরও। ফলে মানুষের সামাজিক কার্যক্রমের একটি বিকল্প হয়ে উঠেছে ভিডিও গেম। মানুষ এখন গেমিংয়ের মধ্যেই বাস্তবিক প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার বিষয়টি খুঁজে নিচ্ছে।

বাজার গবেষণা ইনস্টিটিউট সাইমন কুচার অ্যান্ড পার্টনারস ও দায়নাতার গবেষণায় দেখা যায়, নমুনা হিসেবে নেওয়া ১৩ হাজার ব্যবহারকারীর মধ্যে করোনা শুরু হওয়ার আগে ভিডিও গেম খেলতেন ৬৩ শতাংশ। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাবের পরে  ৮২ শতাংশ ভিডিও গেম খেলা শুরু করেছেন। এমনকি করোনা শেষ হয়ে গেলেও ৭৪ শতাংশ ব্যবহারকারী ভিডিও গেম খেলা অব্যাহত রাখবেন বলেছেন।

যেসব গেমার সপ্তাহে ৫ থেকে ২০ ঘণ্টা গেমে সময় দেন তাদের ‘গেমারস’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে যারা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টারও বেশি ভিডিও গেমে সময় দেন তাদের বলা হয় ‘সিরিয়াস গেমারস’। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার সময়ে গেমারস ও সিরিয়াস গেমারস উভয়ের সংখ্যাই ৩০ শতাংশ করে বেড়েছে। এক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, আগের গেমাররা অনেকে সিরিয়াস গেমার পর্যায়ে গেছেন এবং নতুনদের মধ্যে বেশিরভাগই গেমার পর্যায়ে রয়েছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে বৈশ্বিক ভিডিও গেমিংয়ের বাজার ছিল ১৪৮ বিলিয়ন ডলার। পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, আগের বছরের চেয়ে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে এই বাজার ১৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। তবে করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর নতুন পূর্বাভাসে বলা হয়, ২০২০ সালে বৈশ্বিক গেমের বাজার হবে ১৭০ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার জানায়, করোনার কারণে বাসায় থাকার ফলে মার্কিনিদের মধ্যে ভিডিও গেমের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে। মার্কিনিরা যেসব গেমে বেশি সময় দিচ্ছেন তার মধ্যে আছে ‘অ্যানিমেল ক্রসিং: নিউ হরাইজনস’, ‘কল অব ডিউটি: মর্ডান ওয়ারফেয়ার’, ‘এমএলবি দ্য শো ২০’, ‘রেসিডেন্ট ইভিল ৩’ এবং ‘এনবিএ ২কে২০’।

বৈশ্বিক গেমিং বাজার সম্পর্কে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাইমন কুচারের গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ লিসা জাগের বলেন, করোনার আঘাতে অর্থনীতির বিভিন্ন শাখা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গেমিং শাখাটি বেশ সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে। গেমিং বাজার বৃদ্ধিতে জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে কোভিড-১৯। কোয়ারেন্টিন নীতি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং বাকিসব উপাদান মিলিয়ে ২০২০ সালে পূর্বাভাসের আয়কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে অনেক প্রতিষ্ঠান।

লিসা জাগের আরও বলেন, করোনার কারণে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের গবেষণা বলছে, মানুষ এখন যেভাবে চলছে, করোনা চলে গেলেও তা অপরিবর্তিত থাকবে। ফলে আগামী কয়েক বছর ঊর্ধ্বমুখী থাকবে গেমিং বাজার। সংক্ষেপে বলতে গেলে, দ্রুত বর্ধনশীল একটি বাজারকে আরও বেশি গতিশীল করেছে করোনাভাইরাস।

 

বরগুনার আলো