• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

চাকরি হবে যোগ্যতায়, সুপারিশে নয়: বঙ্গবন্ধু

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

 

 


প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেছেন, মেধা অনুসারে যোগ্য ব্যক্তিকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। চাকরিতে নিয়োগ, বদলি এবং পদোন্নতির ব্যাপারে সুপারিশ না করার জন্য তিনি জননেতা ও পরিষদ সদস্যদের অনুরোধ করেন।
একাত্তরে নির্যাতনের শিকার নারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের সাহস যোগান বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। এইদিনে তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। আর পূর্বের ঘোষণার পথ ধরে মুজিব বাহিনীসহ সব মুক্তিফৌজ সংস্থার বিভিন্ন পদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে এ সময়ে বঙ্গবন্ধু তার সহযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে দেশ গঠনে জরুরি সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বেশি গুরুত্ব দেন।
সুপারিশসহ আবেদন গৃহীত হবে না
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলার নগরবাড়ী ঘাটে এক জনসভায় বলেন, ‘কোনও পরিষদ সদস্যর সুপারিশ নয়, একমাত্র সুযোগ্য কমিশনের মাধ্যমে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচিত ও উপযুক্ত সরকারি কর্মচারীদের দ্বারা সরকারি প্রশাসন যন্ত্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে।’
সরকারি দফতরগুলোতে এই ঘোষণার আগেই নির্দেশ জারি করা হয়েছিল যে, সুপারিশ সহকারে কোনও আবেদনপত্র যেন গ্রহণ না করা হয়।’ সুপারিশসহ আবেদনপত্র বাতিল বলে গণ্য করার জন্য সব সরকারি অফিসে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেধার ভিত্তিতে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচিত সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগের জন্য সরকার কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে ঘুরে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন করবে। দলের লোকজনকে খুশি করার জন্য কেউ যেন কাউকে সুপারিশ না করেন।’ তিনি বলেন, ‘সুপারিশ করলেই প্রার্থীর আবেদনপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে।’

ঘাটে জনসভায় ব্ক্তৃতাকালে বঙ্গবন্ধু (১৯৭২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির পত্রিকার ছবি)
সমাজবিরোধীদের তৎপরতা রুখে দিতে আহ্বান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা অটুট রাখার জন্য জনগণকে সমাজবিরোধীদের তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন আমি করেছি, দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে নিয়ে। তাই সমাজবিরোধী ও বিশৃঙ্খলাকারীদের তৎপরতা বন্ধের জন্য আমি জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘পুলিশ দিয়ে আমি আন্দোলন করিনি। তাই পুলিশ ব্যবহার করতে চাই না। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ সব সমাজবিরোধী তৎপরতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’ দুর্বৃত্ত ও সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব সমাজবিরোধী ব্যক্তি শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের হয়রানি করছে এবং যারা দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা স্থাপনে বাধা সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকার ইতস্তত করবে না।’ সমাজের সব অপতৎপরতার বিরুদ্ধে অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু।
পাকিস্তানে দুর্দশায় রয়েছে বাঙালিরা
পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের নিয়ে এ সময়ে একটানা কথা বলছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। জাতিসংঘ, আশেপাশের এলাকার রাষ্ট্রপ্রধানদের সবার মাধ্যমে পাকিস্তানের ওপর চাপপ্রয়োগ এবং আটকে পড়া বাঙালিদের জন্য যা যা করণীয় ছিল, সেসবই তিনি করছেন। তিনি বিষয়টি পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের স্বজনদেরও জানান। বাসস তাদের সংবাদে উল্লেখ করে যে, নগরবাড়ী ঘাটে এই জনসভায় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে অবস্থানকারী বাঙালিদের ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গে বলেন, ‘পাকিস্তানে আটকদের নিজ বাসভূমে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার সবরকম চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে কয়েক লাখ বাঙালি আটক অবস্থায় রয়েছে। সেখানে তাদের অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’ পাকিস্তানের প্রধান সামরিক প্রশাসক ও জুলফিকার আলী ভুট্টোর আগেকার আহ্বানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার দেশের মানুষকে তাদের বাড়িতে ফিরে আসতে দিন ও আপনার দেশের মানুষকে আপনি তাদের ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যান।’

১৯৭২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির পত্রিকার ছবি
মুক্তিফৌজ সংস্থা বাতিল
বাংলাদেশ সরকার মুক্তিফৌজ এবং মুজিব বাহিনীর সব সংস্থা ও বিভিন্ন পদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে। ১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি এক সরকারি প্রেসনোটে বলা হয়, এখন থেকে এসব সংস্থার দায়িত্ব বেসামরিক সংস্থার ওপর বর্তাবে। প্রেসনোটে আরও বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ও তৎপরবর্তী সময়ে গঠিত জোনাল কাউন্সিল, জোনাল অ্যাডমিন, সিভিল লিয়াজোঁ অফিসার, মুজিব বাহিনীর সংস্থাসহ সব সংস্থা— তা সেটা যে নামেই পরিচিত হোক না কেন, বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধরনের সংস্থা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এসব সংস্থা কোনোভাবেই কোনও সম্পত্তি দখল বা অধিকারে রাখতে পারবে না এবং তাদের বিলুপ্ত অফিসের নামেও আদেশ জারি করতে পারবে না।
নির্যাতনের শিকার নারীদের পাশে বেগম মুজিব
১৯৭২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত নির্যাতনের শিকার নারীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বলেন, ‘আমি তোমাদের মায়ের মতো। তোমাদের সব সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসতে পারো।’ তিনি নির্যাতনের শিকার নারীদের দুটি ক্লিনিক পরিদর্শন করেন। বেগম মুজিব বলেন এবং তাদের আশ্বাস দেন যে, পুনর্বাসনে ব্যাপারে সরকার সম্ভাব্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ‘জাতি আপনাদের জন্য গর্বিত। আপনারা সম্মান ও মর্যাদা ভোগ করবেন।’ খবরটি বাসস পরিবেশন করে।
বঙ্গবন্ধুর হাতে চেক হস্তান্তর
তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের সচিব হোসেন আলী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ছয় লাখ টাকার একটি চেক হস্তান্তর করেন। ভারতে বাংলাদেশ মিশনের প্রধান থাকাকালে হোসেন আলী ১৫ লাখ ২৮ হাজার ৪২২ টাকা দান হিসেবে পান। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রয়োজনীয় এবং আনুষঙ্গিক খরচ বহনের পর, বাকি ছয় লাখ টাকার চেক প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য তহবিলে দেওয়া হয়।

বরগুনার আলো