• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিভিন্ন ব্যাংকে গোল্ডেন মনিরের লেনদেন ৯৩০ কোটি ২২ লাখ টাকা

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর ২০২০  

নব্বই দশকে গাউছিয়ার একটি কাপড়ের দোকানে সেলসম্যান ছিলেন মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনির। সময়ের বিবর্তনে লাগেজ ব্যবসা, হুন্ডি ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাকারবারি ও ভূমি দখলের মাধ্যমে এক হাজার ৫০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন গোল্ডেন মনির।

গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ২৫ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ৯৩০ কোটি ২২ লাখ টাকার লেনদেন করেছেন গোল্ডেন মনির। এর মধ্যে ৪১২ কোটি ২ লাখ টাকা জমা রয়েছে এবং ৫১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা বিভিন্ন সময় উত্তোলন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১১০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে গোল্ডেন মনির।

যদিও গত অর্থ বছরে (২০১৯-২০) আয়কর রির্টানে তার সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন মাত্র ২৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এছাড়াও গত অর্থ বছরে গোল্ডেন মনিরের বাৎসরিক আয় ১ কোটি ৪ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে।

সূত্রটি জানায়, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর‌্যন্ত সময়কালে গোল্ডেন মনির বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এবং তৎকালীন প্রভাবশালী মন্ত্রী, গণপূর্ত ও রাজউকের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আর তাদের ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তোলেন। জাল-জালয়াতির মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ২০২টি প্লট ও জমি দখল করে নেয় গোল্ডেন মনির। এছাড়াও হুন্ডির মাধ্যমে দেশের বাইরেও বিপুল পরিমাণে অর্থ পাচার করেছে গোল্ডেন মনির।

র‌্যারের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মনির হোসেন একদিনে ‘গোল্ডেন মনির’ হয়ে ওঠেননি। সে মূলত একজন সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদ ছিলেন। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা, রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। মনিরের এই উত্থানের পেছনে যারা জড়িত ও সহায়তা করেছেন তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, র‌্যাব শুধুমাত্র ফৌজদারি কার্যবিধি নিয়ে কাজ করে। গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলো র‌্যাবের কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয় বিধায় আমরা সরকারের চার সংস্থাকে তদন্ত করতে অনুরোধ জানিয়েছি।

তিনি বলেন, গোল্ডেন মনির দেশের বাইরে কি পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন বা কি পরিমাণ সম্পদ তার রয়েছে, সে বিষয়ে তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ করবো। তিনি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধ পথে কসমেটিকস পণ্য ও চোরাচালানির মাধ্যমে কি পরিমাণ স্বর্ণ দেশে এনেছিলেন, সে বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুসন্ধান করতে অনুরোধ করবো।  

এদিকে অনুমোদনহীন বিলাসবহুল গাড়ি (প্রত্যেকটি  তিন কোটি টাকা মূল্যের) আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিকে (বিআরটিএ) অনুসন্ধানের জন্য আমরা বলবো। এছাড়া গোল্ডেন মনির জাল-জালিয়াতি করে ভূমি দখল করেছে সেসব বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) অনুসন্ধানের জন্য আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবো।

অবৈধ অর্থে গড়া গোল্ডেন মনিরের যত সম্পদ

রাজধানীর উত্তরা সোনারগাঁও জনপথ সড়কের ১৩ নম্বর সেক্টরের জমজম টাওয়ারের অংশীদারী চার মালিকের মধ্যে একজন গোল্ডেন মনির। গত এক মাস আগে এই জমজম টাওয়ারের মালিকানা বাকি অংশীদারদের কাছে ৬০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন তিনি। এছাড়াও উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরে সাফা টাওয়ারের মালিক গোল্ডেন মনির। তবে ওই টাওয়ারটি এখনও নির্মাণাধীন। বারিধারায় রয়েছে তার আলিশান অফিস কার‌্যালয়। অটোকার সিলেকশন নামে একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে তার। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে উমা জুয়েলার্স নামে একটি জুয়েলারি দোকান রয়েছে তার। রাজউক’র পূর্বাচলে, বাড্ডা, মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টে, নিকুঞ্জে, উত্তরায় এবং কেরানীগঞ্জে রয়েছে ২০২টি প্লট ও জমি। এর মধ্যে শুধুমাত্র মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্টে রয়েছে ৩৯টি প্লট ও বাড়ি।

এদিকে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. সাঈদ নুর আলম বলেন, ‘গোল্ডেন মনিরের নামে ২০০ প্লটের বরাদ্দের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা হবে। এগুলো আমরা তদন্ত করবো। তদন্তে মনির হোসেনের দুর্নীতির ঘটনায় রাজউক’র যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

গোল্ডেন মনিনের বিরুদ্ধে যত মামলা

ভূমি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২০১৯ সালে মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে একটি জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়- রাজউকের ৭০টি প্লটের নথি নিজ কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে আইনবহির্ভূতভাবে হেফাজতে রেখেছেন গোল্ডেন মনির। বর্তমানে এই মামলাটি চলমান রয়েছে। এছাড়াও জালিয়াতি ও অবৈধভাবে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জন করায় মনিরের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা দুর্নীতি দমন কমিশরে চলমান রয়েছে। এছাড়াও ২০০৭ সালের দিকে  চোরচালানের দায়ে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্প্রতি রাড্ডা ডিআইটি প্রজেক্টে তার নিজ বাসা থেকে ৬০০ ভরি স্বর্ণ, অস্ত্র, মাদকসহ বিপুল পরিমাণে নগদ অর্থ ও ১০টি দেশের বিদেশী মূদ্রাসহ গ্রেফতারের পর বাড্ডা থানায় মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরের বিরুদ্ধে র‌্যাব বাদি হয়ে অন্ত্র, মাদক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেছে। মনিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন মামলায় ১৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

লাগেজ ব্যবসা থেকে চোরাকারবারী

রাজধানীর মৌচাক মার্কেটে ক্রোকারিজের দোকানে চাকরি নেওয়ার পর একজন লাগেজ ব্যবসায়ীর সঙ্গে মনিরের পরিচয় হয়। এরপর তিনি লাগেজ ব্যবসা শুরু করেন। তাদের ব্যবসার মূল রুট ছিল ঢাকা-থাইল্যান্ড-ঢাকা। প্রথমে সে কাপড়, কসমেটিকস,ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার সামগ্রী, মোবাইল, ঘড়িসহ বিভিন্ন জিনিষপত্র ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে লাগেজে করে আনা-নেওয়া করতেন। পরে লাগেজ ব্যবসা থেকে তিনি স্বর্ণ চোরাচালানীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এর জন্য তিনি মোকাররম মার্কেটে উমা জুয়েলার্স নামে একটি জুয়েলারি দোকান দেন। এরপর থেকে মনির হোসেন  হয়ে ওঠেন ‘গোল্ডেন মনির’।

২১ নভেম্বর (শনিবার) সকালে রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় ডিআইট প্রজেক্টের ১৩ নম্বর রোডের নিজ বাসা থেকে মো. মনির হোসেন ওরফে গোল্ডেন মনিরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। অভিযানে ওই বাসা থেকে ৬০০ ভরি (আট কেজি) স্বর্ণ, ১টি বিদেশি পিস্তল-গুলি, মদ, ১০টি দেশর বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা ও নগদ ১ কোটি ৯ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এছাড়া, তার বাড়ি থেকে অনুমোদনহীন দুইটি বিলাশবহুল গাড়ি এবং 'অটো কার সিলেকশান' নামের তার গাড়ির শোরুম থেকে তিনটি অনুমোদনহীন বিলাশবহুল গাড়ি জব্দ করা হয়।

বরগুনার আলো