• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় স্কাউট আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান

‘মরিয়ম ফুল’ এবং কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

ইসলাম হলো স্বভাব ধর্ম। ইসলাম এমন এক জীবন ব্যবস্থা যা মানুষের মেজাজ মর্জির সঙ্গে শতভাগ সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসলাম তার অনুসারীদেরকে এমন কোনো কিছু করতে বলে না, যা তার মানবিয় প্রকৃতির বিরুদ্ধে যায়।

সম্পূর্ণ কোরান এবং রাসূলের (সা.) হাদিস ভাণ্ডার খুঁজে ইসলামের এমন একটি বিধান কেউ দেখাতে পারবে না, যা মানব প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইসলাম কখনো আমাদেরকে তা করতে বলে না যা করার ক্ষমতা মানুষ হিসেবে আমাদের নেই। কিংবা যা করলে নিজেদের ব্যক্তিত্ব, টাকা-পয়সা, সামাজিক জীবন সবকিছুকে বিলিয়ে দিতে হয়।

মানব জাতির সব কল্যাণময় কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ইসলামি শরীয়তে বর্ণিত হয়েছে। মানব জাতির সাধ্যের বাইরে কোনো বিষয়কে চাপিয়ে দেয়া হয়নি। পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে,

لاَ يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا

‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ২৮৬)।

তাই নিষিদ্ধ, গর্হিত ও শিরক হয় এমন সব পদ্ধতি ব্যতীত বৈধ পদ্ধতিতে চিকিৎসা গ্রহণ করায় কোনো বাধা-নিষেধ নেই। সুতরাং ডাক্তারি পরামর্শের ভিত্তিতে চিকিৎসা হিসেবে ‘মরিয়ম ফুল’ ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু এর ধর্মীয় বিশেষ কোনো তাৎপর্যে বিশ্বাস করা যাবে না।

তো চলুন জেনে নিই ‘মরিয়ম ফুল’ সম্পর্কে-

‘মরিয়ম ফুল’ সম্পর্কে সমাজে অনেক ভ্রান্ত বিশ্বাস চালু আছে। অনেকে হজ করতে গিয়ে এই ফুল কিনে নিয়ে আসেন এবং এর পানি দ্বারা উপকার গ্রহণ করে থাকেন। অনেকে মনে করেন, মরিয়ম ফুলের পাপড়ি ভিজিয়ে পানি পান করলে প্রসবকালীন ব্যথা লাঘব হয় এবং সহজে প্রসব হয়। আবার কারো কারো বিশ্বাস, এই ফুল শুঁকেই নাকি মারইয়াম (আ.) গর্ভে সন্তান লাভ করেছিলেন।

আবার কোনো কোনো ব্যবসায়ী এটিকে ‘প্রফেটিক মেডিসিন’ তথা নবী (সা.) নির্দেশিত ঔষধ হিসেবেও প্রচার করে থাকেন। চলুন জেনে নেয়া যাক এ ব্যাপারে ইসলাম কী বলে?

ইসলামি শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই। কোরআন ও হাদিস দ্বারা এর কোনো গুরুত্ব ও তাৎপর্য প্রমাণিত নয়। উপরোল্লিখিত কথাবার্তা পুরোপুরিই আজগুবি, সামাজিক কুসংস্কার মাত্র।

তবে হ্যাঁ, ভেষজ উদ্ভিদীয় চিকিৎসা হিসেবে এটি ব্যবহার করা যায়। এটি শারীরিক চিকিৎসার বিষয়, যা ওহির ওপর নির্ভর করে না। বরং পরীক্ষা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানা যায়। সুতরাং ঔষধি গাছ হিসেবে চিকিৎসার জন্য এই ফুল থেকে উপকার গ্রহণ করা যাবে। কিন্তু এর ধর্মীয় বিশেষ কোনো ‘ফজিলত’ বা তাৎপর্য আছে বলে বিশ্বাস করা যাবে না। 
 
মরিয়ম ফুল পরিচিতি:

মরিয়ম ফুল জন্মে মরু অঞ্চলে। মধ্যপ্রাচ্য ও সাহারার বিস্তীর্ণ মরু অঞ্চলে বছরের পর বছর শুকনো গাছ মাটি আঁকড়ে থাকে। এর বৈজ্ঞানিক নাম Anastatica hierochuntica। মরুভূমির অসহনীয় গরমের মধ্যে থাকা শুকনো এই গাছ ক্রমে নির্জীব পাথরের মতো হয়ে পড়ে। কখনো বৃষ্টির পরশ পেলে জীবন ফিরে পায় এবং এর বংশবিস্তার ঘটে। এই গাছের ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, দস্তা এবং লোহা। বিশেষত, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম একসঙ্গে পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে। এর কোনো নেতিবাচক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

উক্ত বিষয়ে মাও. মো. আসাদুজ্জামান (ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা। হাদিস বিভাগ, ২য় বর্ষ।)  এর প্রশ্নোত্তরটি হুবুহু তুলে ধরা হলো- 

প্রশ্ন: মরিয়ম ফুলের পাপড়ি ভিজিয়ে রেখে সেই ফুলের পানি পান করলে প্রসব বেদনা উঠে, সহজে নরমাল ডেলিভারী হয়, এ ধরনের কথা প্রচলিত আছে। এসব কথার কোনো ভিত্তি আছে কি?

প্রশ্নকারী: সাদাত।

উত্তর: উক্ত কথাটি কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। কারণ এটি একটি শারিরীক চিকিৎসার বিষয়, যা ওহীর ওপর নির্ভর করে না। বরং পরীক্ষা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জানা সম্ভব। আর রাসূলে করিম (সা.)-কে যেহেতু প্রেরণ করার মুল উদ্দেশ্য মানুষকে জান্নাতী পথের সন্ধান দেয়া, যা জ্ঞান ও চিন্তার মাধ্যমে অবগত হওয়া সহজ ছিল না। তাই শরীয়তের মুল লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কিছু চিকিৎসার পদ্ধতি বর্ণনা করার সঙ্গে সঙ্গে জায়েজ পদ্ধতিতে সর্বপ্রকার রোগের চিকিৎসা গ্রহন করার ওপর উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক রোগের ওষুধ রয়েছে। যখন তা ব্যবহার করা হয়, আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় রোগ থেকে প্ররিত্রান লাভ করা যায়।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর: ২২০৪)।

অপর বর্ণনায় হজরত জাবের (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.) এর নিকট বসা ছিলাম এমন সময় একদল গ্রাম্য লোক এসে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলুর্লাহ ! আমরা কি চিকিৎসা গ্রহন করতে পারি? উত্তরে তিনি বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহ বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা গ্রহন কর। (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নম্বর: ৩৮৫৫)।

অতএব, যদি কোনো বিজ্ঞ ডাক্তার স্বীয় অভিজ্ঞতার আলোকে জায়েয পদ্বতিতে কোনো রোগের চিকিৎসা সর্ম্পকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন, তাহলে তা গ্রহন করাই শ্রেয়। (যাদুল মাআদ: ১/১০,২৪)।

সুতরাং মনে রাখতে হবে আলোচ্য পদ্বতিটি কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত না হলেও তার অনুরূপ একটি পদ্বতি হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি গর্ভপাত আসন্ন নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, সাড়ে দশ মাশা (প্রায় ১০গ্রাম) পরিমান গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি ১২৫ গ্রাম পরিমান পানিতে ভিজিয়ে রেখে, ছাকার প্রয়োজন না হয় এমন ভাবে পিশে তার সঙ্গে মিসরি বা মিষ্টি জাতীয় কিছু মিশিয়ে সকালে শ্বাস বন্দ করে পান করালে গর্ভবতী নারীর দুই তিন গুন শক্তি বৃদ্বি পায়, ফলে সহজে ডেলিভারি হয়। (বেহেস্তি যেওর খন্ড: ৯, পৃষ্ঠা: ৫৪)।
আশা করা যায়, উক্ত পদ্বতি অবলম্বন করলে আল্লাহ তায়ালা গর্ভপাত সহজ করবেন ইনশাআল্লাহ! কারণ তিনি প্রত্যেক জিনিসকে বিভিন্ন গুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যা বর্ণনা করার অপেক্ষা রাখে না।

অতএব, অনুরূপ যে কোনো গাছ, পাতা, ফুল ইত্যাদি অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে ব্যবহার করা যেতে পারে।

বরগুনার আলো