• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
রোহিঙ্গাদের জন্য বৃহত্তর তহবিল সংগ্রহে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান লেখাপড়ার নামে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি না করার আহ্বান বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি বিশ্বে অনেক বাজার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে: প্রধানমন্ত্রী ট্রাস্ট করে ভাষা সংরক্ষণ-উন্নয়নের উদ্যোগ, হচ্ছে আইন ‘কিডনি রোগীদের চিকিৎসায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার’ ইফতার পার্টি না করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে দেশে ফিরেছেন রাষ্ট্রপতি রোজার তাৎপর্য অনুধাবন করে সমাজ জীবনে প্রতিফলন ঘটানোর আহ্বান পবিত্র মাহে রমজানে বাংলাদেশসহ মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা ‘নভোথিয়েটার করার জন্য খালেদা জিয়া দুটি মামলা দিয়েছিল’ কোস্ট গার্ডকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলছে সরকার প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতির শোক আমরা সমুদ্র সীমার অধিকার নিশ্চিত করেছি: প্রধানমন্ত্রী ৪১ সালের মধ্যে দুর্যোগ সহনশীল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আশা গবেষণা জাহাজ সংগ্রহের পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী ট্রাস্টের চলমান প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সভা ৭ মার্চের ভাষণ মানুষকে উদ্বুদ্ধই করেনি, স্বাধীনতাও এনে দিয়েছে

যে গ্রামের কোনো বাড়িতে দরজা নেই ব্যাংকে নেই তালা

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

আমরা আমাদের ঘর বাড়িতে তালা দিয়েও চিন্তায় থাকি সব কিছু ঠিক আছে তো। অফিস যাওয়ার সময়, কোথাও বেড়াতে গেলে এমনকি, রাতে শুতে যাওয়ার সময় চোর-ডাকাতের দুশ্চিন্তা ভীষণ থাকে আমাদের। বারবার দেখে নিই, দরজাটা ঠিক করে তালাবন্ধ করেছি তো? কোলাপসিবল গেট লাগিয়েছি? ভারতের কোনও জায়গা বোধহয় এমন নেই যেখানে চোর-ডাকাতের ভয় নেই। ব্যতিক্রম মহারাষ্ট্রের একটি গ্রাম।

ঠিকই পড়ছেন। মহারাষ্ট্রে এমন একটা গ্রাম রয়েছে, যেখানে নির্ভয়ে জীবন কাটান মানুষেরা। এই গ্রামের কোনও বাড়িতেই দরজা লাগানো নেই। তা-ও ভিতরে টাকা-পয়সা, গয়না, দামি জিনিসপত্র চুরি যায় না!

গ্রামের নাম শনি-শিঙ্গাপুর। মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার একটি গ্রাম। এই গ্রামেরই কোনও বাড়িতে দরজা নেই। শুধু বাড়িতে কেন, এলাকার দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, সরকারি বিল্ডিং, ব্যাঙ্ক— কোথাও কোনও দরজা নেই।

এখানকার মানুষের বিশ্বাস, শনি দেবতা তাদের রক্ষা করবেন। শোনা যায়, আজ পর্যন্ত কোনও দিন চুরি হয়নি এই গ্রামে। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, কেউ যদি চুরি বা অপরাধ করার সাহস দেখায় তার জন্য তাকে পস্তাতে হবে। সারা জীবনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারাবেন তিনি।

গ্রামবাসীরা শনি দেবতাকে এতটাই মানেন যে, গ্রামের পাবলিক টয়লেটেও গোপনীয়তা বজায় রাখতে কোনও দরজা লাগাননি। কোনও ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য কাপড়ের পর্দা লাগানো থাকে। যাঁদের পর্দা দেওয়া দেখে অন্যেরা বুঝতে পারেন ভিতরে কেউ রয়েছেন।

এই বিশ্বাস রাতারাতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল গ্রামবাসীদের মনে। শোনা যায়, ৩০০ বছর আগে গ্রামের প্রান্তে পানাস্নালা নদীতে একটা কালো পাথর ভেসে এসেছিল। এক গ্রামবাসী তাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করার পরই পাথর থেকে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করেছিল।

সেটা কী তখনও জানতেন না গ্রামের কেউ। তবে ওই রাতেই নাকি গ্রামের প্রধানকে স্বপ্ন দিয়েছিলেন স্বয়ং শনি দেবতা। তিনি বলেছিলেন, ভেসে আসা ওই পাথর তাঁরই মূর্তি। পাথরটাকে যেন গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়।

তবে স্বপ্নাদেশের একটি শর্তও ছিল তার। দেবতা নাকি তাকে আদেশ দিয়েছিলেন, এই পাথরের মূর্তি এতটাই শক্তিধর যে তাতে কোনও ছাদের তলায় রাখা যাবে না। চারপাশে কোনও দেওয়াল যেন না থাকে যাতে তিনি সারা গ্রামকে বিনা বাধায় চোখের সামনে দেখতে পান। এবং গ্রামকে সমস্তরকম বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন।

স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর গ্রাম প্রধানের মনে এতটাই ভক্তির উদ্রেক হয় যে গ্রামবাসীদের সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেন দরজা বয়কট করার। নিজেদের রক্ষার ভার তারা পুরোপুরি ওই ভেসে আসা পাথরের উপরই ছেড়ে দেন তারা।

এখনও যা কিছু তৈরি হোক না কেন তার কোনও দরজা থাকে না। ২০১১ সালে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাঙ্ক এই গ্রামে তাদের শাখা খোলে। এই ব্যাঙ্ক দরজা লাগিয়েছে যদিও, তবে দরজায় কোনও তালা লাগানো হয় না। এটাই ভারতের প্রথম এবং এখনও একমাত্র লকলেস ব্যাঙ্ক।

গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, যদি কোনও ব্যক্তি চুরি করেন বা কোনও অসৎ কাজ করেন তাহলে তার সাড়ে সাতি দশা চলবে। অর্থাৎ পরবর্তী সাড়ে সাত বছর ধরে তিনি এবং তার পরিবার দুর্ভাগ্য ভোগ করবেন। মামলা মোকদ্দমা ফাঁসা, পথ দুর্ঘটনা, মৃত্যু বা ব্যবসায় ক্ষতি— এরকম যে কোনও দুর্ভাগ্য তার পরিবারে নেমে আসবে।

একবার নাকি এক গ্রামবাসী তার ঘরের সামনে কাঠের দরজা লাগিয়েছিলেন, পরদিনই তার গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৫ সালে প্রথম পুলিশ স্টেশন তৈরি হয় এই গ্রামে। তারও কোনও দরজা নেই। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়েনি। যে কটা অভিযোগ হয়েছে প্রতিটাই পাশের গ্রাম থেকে এসেছে। এই গ্রামগুলো পুলিশ স্টেশনের আওতায় পড়ে।

সত্যিই কি এই গ্রামে কোনও অপরাধ হয় না? শনি দেবতা সত্যিই তাদের রক্ষা করে চলেছে? এই বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এককালে গ্রামবাসীদের মধ্যে এই বিশ্বাসটা এতটাই গাঢ় ছিল যে, ভয় থেকেই হয়তো কেউ অপরাধ করতেন না। কিন্তু বর্তমানে এটা একটা পর্যটনের জায়গা।

প্রচুর পর্যটক এই গ্রামে আসেন। পর্যটন শিল্পই প্রত্যন্ত এই গ্রামের অন্যতম উপার্জনের রাস্তা হয়ে উঠেছে। বিশ্বাসে আঘাত করে সেই পর্যটন শিল্পের কোনও ক্ষতি গ্রামবাসীরা করতে চান না। তাই এমনটা হতেই পারে যে, চুরি-ডাকাতি বা অন্যান্য অপরাধ তারা নিজেদের মধ্যেই চেপে যান। পুলিশের আর অভিযোগ জানান না।

ইউনাইটেড কমর্শিয়াল (ইউকো) ব্যাঙ্ক গ্রামের রীতি মেনে দরজা লাগায়নি ঠিকই, তবে প্রতিদিন ব্যাঙ্ক বন্ধ হওয়ার আগে সমস্ত নগদ টাকা তারা নাকি পাশের গ্রামের শাখায় স্থানান্তরিত করে দেয়।

বরগুনার আলো