• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী

সমকামিতায় জোরাজুরি, নিজ বাসায় লাদেনের হাতে খুন হন ডায়না

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২৫ মার্চ ২০২৪  

মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়নার (৪৮) পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তাদের সবারই রয়েছে বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিকত্ব। মাকসুদুর ওরফে ডায়না নিজেও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে তারও। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী হলেও তিনি বেশিরভাগ সময় বাংলাদেশেই থাকতেন। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ এলাকায় নিজের একতলা বাড়িতে একার বসবাস ছিল তার।

মাকসুদুর ওরফে ডায়না জন্মগতভাবে পুরুষ হলেও আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিজেকে শারীরিকভাবে পরিবর্তন করেন। এরপর এই রূপান্তরকামী নারী ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়েন সমকামিতায়। তিনি যে বাসায় থাকতেন এর কাছাকাছিই ছিল তার বোন মরিয়মের বাসা। সেই বাসায় গৃহপরিচারকের কাজ করতেন শোয়েব আক্তার লাদেন নামের এক যুবক। এক পর্যায়ে বোনের বাসার গৃহপরিচারক লাদেনের সঙ্গে জোরপূর্বক সমকামিতায় জড়াতে চান ডায়না। পরে তিনি লাদেনের হাতেই খুন হন।

জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই মরিয়মের বাসায় গৃহপরিচারকের কাজ করতেন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাশিঘাটের বাসিন্দা জাহেদ আলীর ছেলে লাদেন। ওই বাসায় কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনাটাও চালিয়ে যেতেন তিনি। এক দশক আগে সেখানেই বাড়ির মালিক মরিয়মের ভাই মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়নার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। ডায়না তখন বোনের বাসার পাশেই গোলাপবাগের একতলা বিশিষ্ট নিজ বাড়িতে একা বসবাস করতেন।

ডায়নার বাসায় পানির সমস্যা ছিল। সে কারণে পানি দিয়ে আসতে মাঝেমধ্যেই সেই বাসায় যাওয়া-আসা করতে হতো লাদেনকে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে চান ডায়না। তিনি বিভিন্ন সময়ে বোনের বাসা থেকে লাদেনকে ডেকে এনে সমকামিতায় বাধ্য করতেন। লাদেনের নগ্ন ভিডিও ধারণও করতেন। সমকামিতা থেকে বাঁচতে একপর্যায়ে মরিয়মের বাসার কাজ ছেড়ে দেন লাদেন। চলে যান কদমতলী থানার সাদ্দাম মার্কেট এলাকায়। এরপর বিয়ে করে স্ত্রীসহ সেই এলাকায় বসবাস শুরু করেন।

গোলাপবাগে মরিয়মের বাসার কাজ ছেড়ে আসার পর নতুন পেশা হিসেবে ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ বেছে নেন লাদেন। কিন্তু তখনও তার পিছু ছাড়েননি ডায়না। হঠাৎ একদিন ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে লাদেনকে গোলাপবাগের নিজ বাসায় ডেকে নেন ডায়না। এরপর সমকামিতার জন্য জোরাজুরি শুরু করেন। এরই একপর্যায়ে সেখানেই তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন শোয়েব আক্তার লাদেন।

হত্যার ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা দায়ের করেন নিহত ডায়নার মামাতো ভাই কাজী জামাল হোসেন (৫৮)। মামলার তদন্ত শেষে সম্প্রতি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মুকিত হাসান। চার্জশিটেই হত্যার নেপথ্যের চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে।

তবে ডায়না সমকামিতায় আসক্ত ছিলেন তা মানকে নারাজ মামলার বাদী কাজী জামাল হোসেন। তিনি বলেন, আমার ভাই মুসলিম পরিবারের সন্তান। সে আমেরিকায় একটি স্কুলের শিক্ষক ছিল। ছোটবেলায় আমি তাকে সুন্নতে খতনার সময় ধরে রেখেছিলাম। সে বিয়ে করেছিল। কিছুদিন সংসারও করে। তার চলাফেরা কিছুটা মেয়েলি স্বভাবের হওয়ায় তাকে ক্লীব (পুরুষত্বহীন) লিঙ্গ বলছে পুলিশ। আমার ভাই কখনোই ক্লীব ছিল না। আমি চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেবো।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আই.ও) মুকিত হাসান বলেন, মামলায় আসামি শোয়েব আক্তার লাদেন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়না যে সমকামিতায় আসক্ত ছিলেন আসামির জবানবন্দিতে সে তথ্য উঠে এসেছে। ঘটনার সত্যতা পেয়ে আসামি লাদেনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, নিহত মাকসুদ ওরফে ডায়নার ভাই-বোনসহ পরিবারের লোকজন আমেরিকা প্রবাসী হওয়ায় মামাতো ভাই মামলার বাদী জামাল হোসেন তার ভাইবোনদের সম্পত্তি দেখাশুনা করতেন। ঘটনার দিন, অর্থাৎ ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট জামালের সঙ্গে মাকসুদের সৎ বড় বোন হাসিনা বানুর মোবাইল ফোনে কথা হয়। তখন হাসিনা বানু মাকসুদকে দেখাশোনা করে রাখতে বলেন জামালকে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার ১১ দিন পর ২৭ আগস্ট দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে বাদী মাকসুদের বাসায় গিয়ে দরোজায় নক করেন। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে তিনি চলে যান। ওইদিনই বাদী নিজে ও এলাকার স্থানীয় লোকজন বিকেল ৩টার দিকে কক্ষের দরোজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে মাকসুদুর ওরফে ডায়নার অর্ধগলিত মরদেহ দেখতে পান। এরপর পুলিশ সেখানে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহৃত হাতুড়ি উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশের চার্জশিটে আরও উঠে আসে, ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট আনুমানিক বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে মাকসুদ ওরফে ডায়না আসামি লাদেনকে ফোন করে তার বাসায় যেতে বলেন। ডায়নার জোরাজুরিতে লাদেন সেই বাসায় যেতে বাধ্য হন। লাদেন বাসায় প্রবেশ করলে ডায়না তাকে রুমে নিয়ে ভেতর থেকে দরোজা বন্ধ করে দেন এবং লাদেনকে জোরপূর্বক খাটের ওপর শুইয়ে দেন। তখন খাটের মাঝ অংশের কাঠ ভেঙে যায়। লাদেন সমকামিতায় রাজি না হলে ডায়না তার অণ্ডকোষ চেপে ধরেন।

এরই এক পর্যায়ে লাদেন খাটের পাশে টেবিলের ওপর রাখা হাতুড়ি দিয়ে ডায়নাকে আঘাত করলে তিনি তাকে ছেড়ে দেন। তখন আসামি কক্ষ থেকে বের হতে চাইলে ডায়না আবারও তাকে খাটের ওপর শুইয়ে অণ্ডকোষে কামড় দেন। তখন আসামি হাতুড়ি দিয়ে ডায়নার মাথায় ও নাকে-মুখে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে তাকে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত ও জখম করেন।

এক পর্যায়ে ডায়না অজ্ঞান হয়ে খাটের ওপর পরে গেলে আসামি লাদেন ভিকটিমের পকেটে থাকা নগদ তিন হাজার টাকা এবং ঘরে থাকা ইমিটেশনের দুটি চুড়ি ও দুটি মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যান। পরদিন ১৭ আগস্ট সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে আসামি পুনরায় ডায়নার বাসায় যান এবং তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখে পালিয়ে যান। আসামি শোয়েব আক্তার লাদেন কর্তৃক হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাতের ফলে মাকসুদ ওরফে ডায়না মারা যান বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

চার্জশিটে আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২, ৩৮০ ও ৪১১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে, ঘটনার পর গ্রেফতার হয়ে ওই বছরের ৩০ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি শোয়েব আক্তার লাদেন। সেখানে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন।

বরগুনার আলো