• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ফিরে আসবোই: শেখ হাসিনা জনগণের শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি: শেখ হাসিনা আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক ৭ মে: গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামী জননেতা : প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী

‘পৃথিবীর ফুসফুস’ আমাজনের গল্প

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০১৯  

সুন্দর আর আতঙ্কের মিশেলে তৈরি আমাজন বন। এক কথায় যাকে বলা যায় ভয়ঙ্কর সুন্দর। সৌন্দর্যের এক বিরান ভূমি আমাজন। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরক্ষীয় বন এটি। এর আয়তন প্রায় সাড়ে পাঁচ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার। 

যেসব দেশের সমন্বয়ে আমাজন গঠিত : ব্রাজিল (এই বনের মোট আয়তনের ৬০ শতাংশ ব্রাজিলে), পেরু (১৩ শতাংশ), বলিভিয়া, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া, ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, ফ্রেঞ্চ গায়ানা ও গায়ানা। দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের মোট আয়তনের ৪০ শতাংশ এই বনের দখলে।

আমাজনের আবহাওয়া : আমাজনকে রেইনফরেস্ট বলা হলেও এখানে সারাবছর বৃষ্টিপাত হয়। বরং রেইনফরেস্ট বলা হয় এখানকার অত্যধিক আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত (বর্ষা মৌসুমে) ও গরম আবহাওয়ার কারণে।

আমাজনের প্রাণিকুল : এখানে আছে ১২০ ফুট উঁচু গাছ, ৪০ হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ, ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন প্রজাতির কীট-পতঙ্গ, ১ হাজার ২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর, ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ হাজারো প্রজাতির অজানা জীব-অনুজীব। এখানকার প্রাণীবৈচিত্র্য অতুলনীয়। মজার বিষয় হলোÑ হাজারো রকমের প্রাণীর সমাহার থাকলেও এখানকার ইকোসিস্টেম অত্যন্ত শক্তিশালী, যা মিলিয়ন বছর ধরে টিকে আছে।

আমাজন বনের ইতিহাস : আমাজন বনের সৃষ্টি হয়েছিল ইওসিন (ঊড়পবহব) যুগে। বিশ্বব্যাপী যখন গ্রীষ্মম-লীয় তাপমাত্রা হ্রাস পায় এবং আটলান্টিক মহাসাগরের বিস্তৃতির ফলে আমাজন বেসিনে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর আবির্ভাব ঘটে, তখন আমাজন বনের উদয় ঘটে। কমপক্ষে ৫৫ মিলিয়ন বছর ধরে আমাজন বনের অস্তিত্ব বিরাজমান। ধরে নেওয়া হয়, মধ্য ইওসিন যুগে আমাজনের নিষ্কাশন অববাহিকা এবং মহাদেশের মধ্যভাগ বিভক্ত হয় ‘পুরুস আর্ক’ দ্বারা। পূর্ব দিকের পানি প্রবাহিত হতো আটলান্টিকে এবং পশ্চিমের পানি প্রবাহিত হতো আমাজনাস অববাহিকা হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে। আন্দিজ পর্বতমালার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি অববাহিকার সৃষ্টি হয়, যার নাম ‘সলিমোয়েস বেসিন’। আর এই অববাহিকা সৃষ্টির কারণে পুরুস আর্ক ভেঙে যায় এবং পূর্ব দিকের প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়। আমাজন নদী অববাহিকার এই পরিবর্তন প্রমাণ করে যে, গত ২১ হাজার বছরে বিভিন্ন কারণে আমাজন রেইনফরেস্টের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। ‘আইস এজ’-এর সময় ‘সাভানা’ বা নিষ্পাদপ প্রান্তরের কারণে রেইনফরেস্টগুলো কোথাও কোথাও ‘দ্বীপের’ মতো করে বিভক্ত হয়ে যায়, যার ফলে সেখানে থাকা জীববৈচিত্র্যের মাঝেও বিভাজন ঘটে। ‘আইস এজ’ শেষ হয়ে গেলে বিভাজিত অংশগুলো আবার এক হয়ে যায় এবং বিভাজিত প্রজাতিগুলোও আলাদাভাবে সেই পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত হয়। তবে আমাজন বনের কী পরিমাণ পরিবর্তন হয়েছিল, তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বিতর্কের শেষ নেই। অনেক বিজ্ঞানীর মতে, উন্মুক্ত তৃণভূমিগুলোর কারণে আমাজন বন অনেকগুলো ছোট বিচ্ছিন্ন অংশে হ্রাস পায়। আর আরেক দলের মতে, আমাজন বিভক্ত হয়নি, বরং উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে বিক্ষিপ্তভাবে বৃদ্ধি পায়, যেমনটা বর্তমানে দেখা যায়।

আমাজন বনের মানুষ : আমাজন বনে ৪০০-৫০০টি আমেরি-ইন্ডিয়ান আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস। ধারণা করা হয়, এদের মধ্যে প্রায় ৫০টি আদিবাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে বাইরের পৃথিবীর কোনো সম্পর্ক নেই। অতীতে আমাজন বনে যেসব মানুষের বসবাস ছিল, তারা প্রচলিত বিশ্বাস ও কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে বিভিন্ন সমাজে বিভক্ত ছিল। তারা কৃষিকাজের জন্য বনের স্থান পরিষ্কার করত, তৈজসপত্র তৈরি করত এবং শিকার করত। ১৬০০ শতাব্দীতে আমাজনে ইউরোপিয়ানদের আগমনের ফলে অ্যামাজোনিয়ানদের জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ হয়ে ওঠে। গবেষণায় দেখা যায়, আমাজনের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ জায়গা সেখানকার আদিবাসীদের দ্বারা জীববৈচিত্র্যের দিকে লক্ষ রেখে অত্যন্ত যত্নসহকারে তৈরি করা একটি ব্যবস্থাপনা। আমাজনে বসবাসরত বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী তাদের আবাস গড়ে তুলেছিল নদীঘেঁষা অঞ্চলগুলোয়, যাতায়াত, মাছ ধরা ও জমির উর্বরতার ভিত্তিতে। কিন্তু ইউরোপিয়ানদের আগমনে তা ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে তারা বনের ভেতরের অংশে বসবাস শুরু করে। বর্তমানে জনসংখ্যা কমে গেলেও বেশ কিছু আদিবাসী এখন আমাজনে বসবাস করে, যদিও পাশ্চাত্যের ছোঁয়ায় অনেকেই এখন আধুনিক। প্রায় সব বাসিন্দা এখন কৃষিকাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে, অনেকে ধাতব পাত্র বানায়, অনেকে পর্যটকদের কাছে হাতের তৈরি জিনিস বিক্রি করে, আর বাকিরা শহর থেকে নিয়মিত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাবার সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে।

আমাজনে আগুন

আমাজনে এ বছর রেকর্ডসংখ্যক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে আমাজনে যতগুলো অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে, আর কখনো তা হয়নি। ব্রাজিলের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে আমাজনে রেকর্ডসংখ্যক আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এ বছর ৮৫ শতাংশ বেশি আগুন লেগেছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে আমাজনে ৭৫ হাজারেরও বেশি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত বছর আগস্ট পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৪০ হাজার। আরও ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, ২০১৩ সালে পুরো ব্রাজিলে যত অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল, চার মাস বাকি থাকতেই এ বছর তার চেয়ে বেশি আগুন লেগেছে।

বিস্ময়কর প্রাণীরা

জাগুয়ার

অনেকটা চিতা ও লেপার্ডের মতো দেখতে জাগুয়ারকে বলা হয় আমাজন বনের রাজা। দৈর্ঘ্যে ২৫-৩০ ইঞ্চি উঁচু এবং ৫ থেকে ৬ ফুট লম্বা বিশালাকার এ প্রাণীটির ওজন প্রায় ৫০ থেকে ১০০ কেজি। চিতাবাঘের জ্ঞাতিভাই জাগুয়ার নিশাচর প্রাণী। রাতের অন্ধকারে অকস্মাৎ পেছন দিক থেকে সরাসরি শিকারের মাথায় আক্রমণ করে জাগুয়ার।

অ্যানাকোন্ডা

এ প্রাণীটির নাম শুনলেই অনেকের চোখের সামনে ভেসে ওঠে হলিউডি সিনেমার সেই ভয়ঙ্কর ‘অ্যানাকোন্ডা’ সিনেমাটি। কিন্তু বাস্তবে মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করে ওরা। পৃথিবীর বৃহত্তম সাপ হলো অ্যানাকোন্ডা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলো গ্রিন অ্যানাকোন্ডা। ভারী সাপ হিসেবেও গ্রিন অ্যানাকোন্ডাই বেশি পরিচিত। প্রায় ১৫০ থেকে ২২৭ কেজি ওজনের গ্রিন অ্যানাকোন্ডা লম্বায় ২৭ থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।

ব্ল্যাক কেইম্যান কুমির

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কুমির হলো ব্ল্যাক কেইম্যান কুমির, যার দেখা পাওয়া যায় আমাজন নদীতে। দৈর্ঘ্যে প্রায় ৯ থেকে ১৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা ব্ল্যাক কেইম্যানের ওজন হতে পারে প্রায় ৪০০ কেজি। কেইম্যান জাতের অন্যান্য কুমির যেখানে দিনে শিকারে ব্যস্ত থাকে, সেখানে ব্ল্যাক কেইম্যান বের হয় রাতে।

টাইটান বিটল

‘বিটল’ শব্দটির অর্থ হলো গুবরেপোকা এবং ‘টাইটান বিটল’ হলো ‘দৈত্যাকার গুবরেপোকা’। আমাজনের অন্যতম বাসিন্দা টাইটান বিটল হলো কীটপতঙ্গের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পতঙ্গ, যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ছয় ইঞ্চি। বলা হয় টাইটান বিটলের চোয়ালের নিচের অংশ এতটাই শক্ত যে, এটি চাইলেই কোনো পেন্সিলকে দুভাগ করে ফেলতে পারে কিংবা সহজেই মানুষের শরীরে ঢুকে যেতে পারে। তবে ভয়ের কিছু নেই, কারণ বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা এ পোকাটি সবচেয়ে নিরীহ প্রাণীও বটে।

দৈত্যাকার সেন্টিপিড

‘ক্যাটারপিলার’ অর্থাৎ শুঁয়োপোকা জাতের প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো আমাজনের জায়ান্ট সেন্টিপিড। লম্বায় প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে এরা। বলা হয় আমাজনের ভয়ঙ্কর বিষাক্ত প্রাণীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে জায়ান্ট সেন্টিপিড, যার বিষক্রিয়ায় মুহূর্তের মধ্যে শিকারের সব শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে।

বরগুনার আলো