• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে

যেভাবে শত্রুমুক্ত হয়েছিল বরগুনা

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৯  

ডিসেম্বর ৩, ১৯৭১। রাত বাড়ছে, প্রচন্ড শীতেও ২১ জন মুক্তিকামী মানুষের রক্তে সেই সাথে বাড়ছে উষ্ণতা। ভোররাত তিনটার দিকে ছইঢাকা নৌকা বিষখালী হয়ে খাকদোন নদীর মোহনায় ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে।

কিছু দূর এগুতেই হঠাতই চোখে পড়লো টর্চের আলোর সংকেত। পরপর তিনবার টর্চের সংকেতে বুঝলাম আমাদের মোয়াজ্জেম, যে আজ সারাদিন রেকি করেছে বরগুনা শহর, কোথায় হানাদার ক্যাম্প, কোথায় রাজাকারদের অবস্থান। এটা যে তার সংকেত তিনবার আলো জ্বলতে দেখে সেটা নিশ্চিত হয়েছিলাম।

একটু দম নিলেন আবদুস সাত্তার খান। তাঁর নেতৃত্বেই ৩ডিসেম্বর বরগুনা হানাদার মুক্ত হয়েছিল। বয়স তো কম হয়নি। একাত্তরেই যিনি তাগড়া জোয়ান, তারপরও তো কাটল বহু যুগ। তবে মনের জোর তাঁর প্রবল। চা কাপে শেষ চুমুক দিয়ে ফের শুরু করলেন যুদ্ধ জয়ের সে গল্প, বরগুনা বিজয়ের গৌরবময় ইতিহাস।

একদিন আগে অর্থাৎ ২ ডিসেম্বর নবম সেক্টরের অধীনে বামনা সাব সেক্টরের মেজর মেহেদী আল ইমাম বরগুনাকে হানাদার মুক্ত করতে আমায় নির্দেশ দেন। সব মিলিয়ে ২১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সাথে নিয়ে তখন আমরা বেতাগীর বদনীখালি গ্রামে।

সাত্তার খান বলেন, মোয়াজ্জেমকে রেকি করতে পাঠিয়ে সবুজ সংকেত পেয়ে রাতেই আমরা বরগুনায় ঢুকেছিলাম। নৌকা থামানোর নির্দেশ দিলাম মাঝিকে। সবে তীরে উঠে নৌকাটি ওখানেই ডুবিয়ে দেয়া হলো'' কোনো রকম প্রমাণ রাখতে চাইনি। আরও কিছুটা সময় বিপদমুক্ত থাকতে হবে। বরগুনার পোটকাখালী বাজারে অবস্থান নিলাম। বাজারের এক গুপ্তঘরে স্বাধীনতার পক্ষের কিছু মানুষদের নিয়ে বৈঠক হলো।

মানুষগুলোর চোখ যেনো জ্বলছে। এতোদিন পর যেনো তারা দেখতে পাচ্ছে আশার আলো। কেউ কেউ ছুঁয়ে দেখছে মুক্তিযোদ্ধাদের। কেউ পায়ে হাত দিয়ে করছে সালাম। কেউ কেউ শোনাতে চাচ্ছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পরিবারের দুঃখ কথা। কেউ শোনাতে চায় মা, বোন ও বউকে ধরে নিয়ে যাওয়ার করুণ কাহিনী। চোখে জল এসে গেলো। তাকিয়ে দেখি সহোযোদ্ধাদেরও একই অবস্থা। প্রশ্ন জাগে সাত্তার খানের মনে, পারবো তো এ মানুষগুলোর আশা পূরণ করতে?

প্রচন্ড উদ্যম নিয়ে প্রস্ততি নিলাম আমরা, আর দেরী করা যায় না। সবাইকে সরিয়ে দিয়ে সহোযোদ্ধাদের নিয়ে বসলাম। পরিকল্পনা মোতাবেক বরগুনা কারাগার, ওয়াপদা কলোনি, সদর থানা, জিলা স্কুল, ওয়ারলেস স্টেশন ও এসডিও অফিস এই ছয়টি ভাগে ভাগ করা হলো বরগুনাকে। ৪/৫ জনের একেকটি গ্রুপ ছড়িয়ে পড়লো। ছয়টি উল্লেখযোগ্য জায়গায় তারা অবস্থান নিলো। ফজরের আযানকেই সংকেত হিসেবে বেছে নিলেন। আজান শুরুর সাথে একযোগে গুলি করতে করতে তারা দখল নিলেন বরগুনা শহরের।

বাধ্য হয়ে আত্মসমর্পণ করলো পাক হানাদার বাহিনী। আত্মসমর্পণ করলো এসডিও আনোয়ার হোসেন। এসডিও অফিস ভবনের ছাদে কমান্ডার হিসেবে আমিই লাল সবুজের সেই চির চেনা পতাকা উড়িয়েছিলাম। আবেগাপ্লুত সাত্তার খান। যে পতাকায় লেগে আছে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত, বিরঙ্গনার সম্ভ্রম, সেই বাংলাদেশের পতাকা।

সাত্তার খান শোনালেন বরগুনা হানাদার মুক্ত করার গৌরবোজ্জ্বল সে গল্প। সাত্তার খানের নেতৃত্বে ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১, স্বাধীন হলো বরগুনা। ১৩৮ জন্য নিরাপরাধ শহীদের জন্য নির্মিত হলো স্মৃতি স্তম্ভ। এমনই টুকরো টুকরো বাস্তব ঘটনা নিয়েই ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে জন্ম নিয়েছিলো একটি দেশ, একটি মানচিত্র ও একটি লাল সবুজের পতাকার বাংলাদেশের।

সেই থেকে প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বর পালিত হয় বরগুনা মুক্ত দিবস। মধ্যরাতের পর স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি প্রজ্জলন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ, র‌্যালি ও আলোচনা সভাসহ দিনভর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আজ বরগুনায় দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বরগুনার আলো