বরগুনায় মাঠে মাঠে ধান কাটার উৎসব

পাকা ধানের মনমাতানো গন্ধ ভাসছে ক্ষেতের চারপাশ। আর মৃদু বাতাসে পাকা ধানের শীষ গুলো দুলতে দেখে মনে হচ্ছে যেন সাগরের পানি সোনালী রং হয়ে হাওয়ায় উড়ছে। ক্ষেতের পাকা ধান দেখে কৃষকের খাটুনি জুড়ালেও মুখে নেই হাসির চিহৃ। এর মাঝেই দেখা গেলো আমন ধান কাটায় কাস্তে হাতে ব্যস্ত কৃষক।  

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বরগুনা জেলার অধিকাংশ গ্রামে ঘুরে দেখা গেছে, পাকা ধান গোলায় তুলতে ধান কাটার ধুম পড়েছে মাঠে মাঠে। কৃষাণ-কৃষাণী একত্রিত হয়ে ধান কাটায় অংশ নিয়েছে মাঠে। কৃষাণী ধানের আঁটি বেঁধে কৃষাণের মাথায় তুলে দিচ্ছেন। আর সেই আঁটি মাথায় নিয়ে কাঙ্খিত স্থানে রাখার জন্য ছুটছেন কৃষকরা। কাজের ফাঁকে অন্যের সঙ্গে কথা বলার মতো সময় নেই কারো।

বরগুনা সদর উপজেলার পাঁচ নম্বর আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া গ্রামের কৃষক জয়নাল আবেদীন জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে নদী তীরে বাঁধ উপচে লবণ পানি ঢুকে ক্ষেতে জমে থাকায় ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া পোকার আক্রমণে হয়েছে ধানও কম। সেকারণেই ক্ষেতে শ্রমিক না লাগিয়ে নারী- পুরুষ যৌথ ভাবে ধান কেটে লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবুও মাঠজুড়ে এখন আমন ধান কাটার উৎসব চলছে।
বরগুনা পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৃষক মতিউর  জানান, আমন ধান কাটার জন্য কাস্তে হাতে মাঠে এসেছি। ধান ভালো হয়েছে কিন্তু বিক্রি করতে গেলে যখন কম মূল্যে পাই তখন মনে হয় কৃষি কাজ ছেড়ে দেই। আমাদের দিকে সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। যাতে সব কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পায়।

বরগুনা সদর উপজেলার দুই নম্বর গৌরিচন্না ইউনিয়নের ধুপতি গ্রামের কৃষক ছগির হোসেন  জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কাটবেন তারা। পাশাপাশি মাড়াই শেষে বাতাসে ধান উড়িয়ে তোলা হবে গোলায়।

তিনি বলেন, আশা করছি এবার ধানের ন্যায্যমূল্য পাবো।
বরগুনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের টানা বৃষ্টিতে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে আমন ধান রয়েছে নয় হাজার ৮৬৩ হেক্টর এবং শীতকালীন শাকসবজি ৫শ’ ৫০ হেক্টর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরগুনার উপ-পরিচালক মো. মতিয়ুর রহমান  জানান, বরগুনা জেলায় প্রায় ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়
বুলবুলের আঘাতে আমনের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১১ লাখ টাকা।