• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

অবাঙালিদের বিষয়ে ইসলামি সেক্রেটারিয়েটকে বঙ্গবন্ধুর কড়া তারবার্তা

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার বাঙালিদের নিয়ে কোনও কথা বলেনি ইসলামি সেক্রেটারিয়েট। উপরন্তু, স্বাধীন দেশে অবাঙালিরা নিরাপদে থাকার পরেও তাদের নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে সমালোচনা করে সংস্থাটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামি সেক্রেটারিয়েটের সেক্রেটারি জেনারেলকে কড়া তারবার্তা পাঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একইসঙ্গে তিনি মিরপুরে অবাঙালিদের কর্মকাণ্ড এবং সরকারের সহিষ্ণুতার বিষয়েও তাকে অবহিত করেন।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের এই দিনে ভাসানীর সঙ্গে হাসপাতালে সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। একই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়ে নিহত হন পাঁচ বৈমানিক।

বঙ্গবন্ধু ইসলামি সেক্রেটারিয়েটের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রহমানের  উদ্দেশে তার বার্তায় বলেন, ‘শত উসকানির পরেও বাংলাদেশে অবস্থানরত অবাঙালিদের জীবন ও সম্পদ নিরাপদে রয়েছে। বাসসের খবরে প্রকাশ— ইসলামি সেক্রেটারিয়াটের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রহমানের কাছে এক তার বার্তায় বঙ্গবন্ধু জানান, সেক্রেটারি জেনারেলের প্রতিনিধিদের অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকা মিরপুর সফরে সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান বেতারের খবর অনুযায়ী, বিহারি ও অবাঙালি মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বন্ধের জন্য আপনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা চালানোর আবেদন জানিয়েছেন। আমি আশ্বস্ত করে বলতে চাই, দীর্ঘ ৯ মাস উসকানির পরেও বাংলাদেশে অবাঙালিদের জীবন ও সম্পদ নিরাপদে ছিল। সেটা হয়তো আপনি জানেন না। অস্ত্র জমা দেওয়ার মাত্র দুই দিন আগে অবাঙালি অধ্যুষিত এলাকা মিরপুরে কিছু আইন অমান্যকারী ব্যক্তি নিরাপত্তা বাহিনীর একটি পেট্রল পার্টির ওপর আক্রমণ করে এবং এতে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।’

মিরপুরের অধিবাসীরা স্বেচ্ছায় অস্ত্রসমর্পণ করলে এবং অপরাধীদের আশ্রয় না দিলে এই পুলিশি ব্যবস্থার প্রয়োজন হতো না, উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘উক্ত এলাকার অপরাধীদের খুঁজে বের করার জন্য তল্লাশি চালানোর আদেশ দেওয়ার পর থেকে হাজার হাজার লুকায়িত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, প্রতিদিন আরও অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। এই ব্যাপারে গোপন করার কিছু নেই এবং মিরপুর সফরের ব্যাপারে সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে।’

মিরপুরের অবাঙালি, নাকি পাকিস্তানের বাঙালি?

তবে এখানকার পরিস্থিতির ঠিক উল্টোটা পাকিস্তানে বসবাসরত বাঙালি অধিবাসীদের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তারা সন্ত্রাসের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে এবং তাদেরকে হয়রানি ও ব্যক্তিগতভাবে অপমান করা হচ্ছে। এটা দুঃখজনক যে, আপনি পাকিস্তানে বাঙালিদের অবস্থা সম্পর্কে কোনও কিছু বলার প্রয়োজন অনুভব করেননি।’ শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাকে একথা দুঃখের সঙ্গে স্মরণ করতে হচ্ছে যে, গত ৯ মাসে যখন এখানে পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনী ঠাণ্ডা মাথায় ৩০ লাখ বাঙালিকে খুন করে, তখন দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্রে মুসলমান এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকদের হত্যার বিষয়ে আপনি কিছু বলেননি।’

বঙ্গবন্ধু-ভাসানী সাক্ষাৎ

বেশকিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি তাকে দেখে বেশ জোরে বলে ওঠেন, ‘ওহ, তুমি এসেছো। আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘায়ু করুন।’ অনেকদিন পর মওলানা ভাসানী তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযোগী বঙ্গবন্ধুকে কাছে পেয়ে যতটা আনন্দিত হয়েছিলেন, সে আনন্দ বঙ্গবন্ধু চলে যাওয়ার পরেও অনেকক্ষণ তার চোখেমুখে লেগে ছিল। বঙ্গবন্ধু ভাসানীর বিছানার একপাশে বসে তার শারীরিক অসুবিধার খোঁজখবর নেন। পরে তিনি চিকিৎসকদের যথাসম্ভব যত্ন নেওয়ার নির্দেশ দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই দুই নেতার এটি প্রথম সাক্ষাৎ। ভাসানী পোস্ট গ্রাজুয়েট (পিজি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানেই তাদের সাক্ষাৎ ঘটে।

 

স্বীকৃতির আগে কোনও আলাপ নয়

বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে যতক্ষণ স্বীকৃতি না দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের আলাপ-আলোচনার কোনও সম্ভাবনা নেই। ১০ ফেব্রুয়ারি সরকারের এক মুখপাত্র এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলার পরেই কেবল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে পাকিস্তান, এই কথা বলে জুলফিকার আলী ভুট্টোর যে বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেই বক্তব্যর প্রতি বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার আগে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনা সম্ভব নয়।’ ভুট্টো যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য আর পদে আসীন হতে পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন, সেটা তার জন্য ধীরে ধীরে অস্বস্তিকর হয়ে উঠছিল।

বাংলার বুকে প্রথম বিমান বিধ্বস্ত

বাংলাদেশ বিমানের প্রথম ও একমাত্র ডাকোটা বিমানটি ১০ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। দুই জন অভিজ্ঞ পাইলটসহ মোট পাঁচ জন পাইলট এতে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং একইসঙ্গে তিনি বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। রাত্রিকালীন বিমান পরিচালনা প্রশিক্ষণের জন্য বিমানটি আকাশে উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মধ্যে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। বিমানটি চালাচ্ছিলেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ বৈমানিক এম এ খালেক এবং তার সঙ্গে ছিলেন বোয়িং কমান্ডার নাসির হায়দার। প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাদেশ বিমানের নাইট গার্ড সবুজ মিয়া দৈনিক বাংলা প্রতিনিধিকে বলেন, ‘তখন আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা। আমি ডিউটিতে আসছিলাম। বোয়িং ক্লাবের কাছে আসতেই রানওয়ে থেকে বিমান উড্ডয়নের শব্দ পাই। এরপর বিচ্ছুরিত আলো অনুসরণ করতে থাকি। তখন বিমানটি একশ’ থেকে দেড়শ’ ফুট ওপরে হবে। হঠাৎ একটি বিকট শব্দে চমকে উঠি এবং দেখতে পাই, বিমানটি দ্রুত মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। অনেক বাধা পেরিয়ে কাছে গিয়ে দেখি, বিমানটি ততক্ষণে পড়ে গেছে। চারদিক ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন এবং হঠাৎই দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর এমএ খালেক মুজিবনগরে অবস্থান করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রথম আক্রমণে তিনি অংশ নেন এবং স্বাধীন দেশে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী গড়ে তুলতে তিনি দিনরাত কাজ করে যাচ্ছিলেন।

বরগুনার আলো