ঢাকাই মসলিন ফিরল যে পথে
ঢাকাই মসলিনের নাম উচ্চারণ করলেই হাজারো মিথ ধরা পড়ে স্মৃতির পাতায়। কার্পাস তুলার সুতা থেকে তৈরি এই শাড়ি এতোটাই মিহি যে একটি আংটির ভেতর দিয়েও এপার ওপার করা যায়। আবার এ শাড়ি ভাঁজ করে রাখা যায় দিয়াশলাইয়ের বাকশেও। নরম, পাতলা ও পরিধানে আরামদায়ক হওয়ায় অভিজাত নারীদের কাছে এ শাড়ির কদর ছিল বেশ। কথিত আছে সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন নূরজাহানের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বারবার প্রত্যাখ্যাত হচ্ছিলেন, তখন ঢাকাই মসলিন উপহার দিয়েই নাকি সম্মতি মিলেছিল। জগৎখ্যাত এই শাড়ির বুনন ইংরেজি শাসনামলে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে কেবল জাদুঘরে দেখে মনের আশ মেটাতে হয়েছে সবাইকে। কথিত আছে, মসলিন শিল্পীদের আঙুল কেটে দেওয়ার পরই নাকি ঢাকাই মসলিন তৈরি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সেই মসলিন নানা পথ হেঁটে আবার ফিরেছে নিজঘরে।
প্রায় ১৭০ বছর পর আবার বাংলাদেশে বোনা হলো ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশের একদল গবেষক দীর্ঘ ছয় বছর গবেষণা করে সক্ষম হয়েছেন ঢাকাই মসলিন তৈরিতে। প্রাথমিক পর্যায়ে গবেষকরা ছয়টি মসলিন শাড়ি তৈরি করেছেন। যার একটি ইতোমধ্যে প্রধামন্ত্রীকে উপহার দিয়েছেন তারা। এই কাপড়গুলো ঠিক সেরকমই, আংটির ভেতর দিয়ে অনায়াসে পার করে দেওয়া গেছে আস্ত একটি শাড়ি!
বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্য মসলিন সুতা তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার (প্রথম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঢাকাই মসলিন তৈরিতে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট ১৮জন গবেষক কাজ করেছেন। এ গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর হোসেন। প্রায় দুই শতাব্দী আগে হারিয়ে যাওয়া বাঙালির সোনালি ঐতিহ্য ঢাকাই মসলিন ফিরিয়ে আনার গল্প জানতে কথা হয় অধ্যাপক মনজুর হোসেনের গবেষণার বৃত্তান্ত নিয়ে।
অধ্যাপক মনজুর হোসেন : ২০১৩ সালের শেষ কিংবা ২০১৪ সালের প্রথম দিকের কথা। জাপানি একজন প্রকৌশলী ও একজন ব্যবসায়ী রাজশাহী এসেছিলেন। তারা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ঢাকাই মসলিন ফিরিয়ে আনা যায় কি? আমি তাদের বলি, এ বিষয়ে আমার জানাশোনা নেই। আগে পড়াশোনা করতে হবে। তারা রাজি হলেন। ঢাকাই মসলিনের প্রতি আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, ঢাকাই মসলিন ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ড। এর বাজারমূল্য হবে বিলিয়ন ডলার।
একদিন বিষয়টি তাঁত বোর্ডের ডেপুটি সেক্রেটারি মুজিবুর রহমানকে জানাই। তিনি আবার এ তথ্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রতিমন্ত্রীকে জানান। পরে ২০১৫ সালে তৎকালীন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম রাজশাহী এসে আমাকে বললেন, ‘ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা উপযুক্ত লোকের খোঁজ করছিলাম। আমি আগামী তিন দিনের মধ্যে লোক পাঠাবো। আপনি একটা প্রজেক্ট প্রপোজাল দিন।’ এভাবেই এ গবেষণায় যুক্ত হলাম।
জাপানি গবেষক ততটা আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে পারেননি যতটা পেরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সত্যি বলতে, যখন জাপানি ওই নারী ব্যবসায়ী আমাকে মসলিন পুনরুদ্ধারের বিষয়ে বলেছিলেন, তখন আমি এ নিয়ে পড়াশোনা করলেও আগ্রহ বোধ করিনি। কারণ এই গবেষণার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। তাছাড়া বিভিন্ন সীমবদ্ধতাও আছে। যখনই পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছ থেকে জানতে পারলাম বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং আগ্রহী তখন আমি আশাবাদী হয়ে উঠি। ভাবি, এবার হয়তো মসলিন পুনরুদ্ধার হবে।
তারপর শুরু হয় মহাযজ্ঞ। পুরো গবেষণা প্রক্রিয়ায় রাবি, ঢাবিসহ ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৮জন গবেষক কাজ করেছেন। সম্পূর্ণ কাজকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করি। একভাগে ছিল মসলিন তৈরির অপরিহার্য উপকরণ কার্পাস তুলা খুঁজে বের করা। এ অংশে রাবির আমরা তিনজনসহ চারজন গবেষক ছিলাম। অন্য অংশে ছিল তুলা থেকে সুতা বানানো ও মসলিন কাপড় তৈরি।
মসলিন শাড়ির নমুন দেখতে আমরা তিন সদস্যের একটি দল যুক্তরাজ্যের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে যাই। সেখান থেকে মসলিনের ডিএনএ বের করে সিকোয়েন্স করি। পরে কার্পাস তুলার জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। দেশের নয়টি জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করি। এর মধ্যে কাপাসিয়ার একটি কার্পাস তুলার সঙ্গে মসলিনের সংগৃহীত ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। পরে গুটি কার্পাস তুলার ওই জাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণা মাঠে লাগানো হয়। তুলা সংগ্রহই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রথম মসলিন স্পর্শের অনুভূতি কেমন ছিল?
মনজুর হোসেন : তুলা খুঁজে, চাষ করে, তাঁতী বাছাই করে দীর্ঘ ছয় বছর পরিশ্রমের পর যখন প্রথম শাড়িটি হাত দিয়ে স্পর্শ করেছিলাম, পুরো শরীর শিহরিত হয়েছিল। মনে হচ্ছিল যুক্তরাজ্যের জাদুঘরে স্পর্শ করা সেই মসলিন। তাৎক্ষণিক যে অনুভূতি হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমি খুশিতে প্রকল্প পরিচালক আইয়ুব আলীকে বললাম আমাদের কাজ শেষ স্যার।
তবে যত সহজে বললাম আমাদের কাজ শেষ তত সহজে শেষ হয়নি। নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে, থমকে যেতে হয়েছে। গবেষণা দলের প্রধান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় অনেকে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছিল। নানাভাবে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকার পরও আমাদের জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত ঢাকাই মসলিন কাপড় দেখতে আট মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। পুরো গবেষণা প্রকল্পকে ভুল পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এসব কারণে মাঝে মাঝে হতাশ হতাম। ভাবতাম পারবো না মসলিন উদ্ধার করতে। আবার পরে যখন মনে হতো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তো চান, তখন নতুন করে মনোবল নিয়ে গবেষণায় মনযোগী হতাম।
নতুন মসলিন কাপড়টা কি আগের মসলিনের চেয়ে উন্নত?
মনজুর হোসেন : তুলনা করার সময় আসেনি। যুক্তরাজ্যের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামে যে শাড়িটি স্পর্শ করে দেখেছি, তার মধ্যে ৫০০ কাউন্টের সুতা ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের তৈরি প্রথম শাড়িটি ছিল ৩০০ কাউন্টের সুতায় তৈরি। সর্বশেষ তৈরি শাড়িটি ছিল ৫০০ কাউন্টের, যা হুবহু ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়ামের মসলিন শাড়ির মতো। যেহেতু এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, তাই তুলনা করতে চাই না।
ঢাকাই মসলিন কি তবে সাধারণের নাগালে আসবে? নাকি দামের কারণে জাদুঘরেই রয়ে যাবে?
মনজুর হোসেন : একটি মসলিন শাড়ি তৈরিতে প্রাথমিক পর্যায়ে সময় লেগেছে ছয় মাস। ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সময়ের সঙ্গে জনশক্তি বাড়ানো হলেও এর খরচ তিন লাখের নিচে নামবে না। সেক্ষেত্রে এর বাজারমূল্য হবে কমপক্ষে সাড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকা। ঢাকাই মসলিন শতভাগ হস্তশিল্প। বাইরের প্রযুক্তি বা যন্ত্র ব্যবহার করা হলে এটি ঢাকাই মসলিন থাকবে না। বাজারে ঢাকাই মসলিন আসতে আরও দুই-তিন বছর লাগবে।
ঢাকাই মসলিনের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা?
মনজুর হোসেন : আগেই বলেছি ঢাকাইয়া মসলিনের ওপর বাইরের দেশের লোকজনের নজর রয়েছে। এটি বিলিয়ন ডলারের ওয়ার্ল্ড ব্র্যান্ড। আমার এক বন্ধু আমেরিকায় থাকে, তারা কয়েকজন এ কাপড়ে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারাও বিনিয়োগের আগ্রহী। ঢাকাই মসলিনের জিআই স্বত্ত্ব পেতে ইতোমধ্যে আবেদন করা হয়েছে। যদি জিআই স্বত্ত্ব পাওয়া যায় তবে এটি আমাদের গার্মেন্ট খাতের মতো অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে।
বরগুনার আলো
- প্রবাস আয় বাড়ানোর জন্য রেমিট্যান্স কার্ড প্রবর্তনের সুপারিশ
- ৩০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে আবাসন সুবিধা দেবে সরকার
- মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিয়নে বসবে প্রশাসক
- রোহিঙ্গা মামলা চালাতে আর্থিক সহায়তার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
- প্রত্নসম্পদ বেহাত হওয়া ঠেকাতে নতুন আইন
- ইপিজেড পাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চল, আসবে দেড়শ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ!
- নির্বাচনে সহিংসতা বরদাস্ত করা হবে না: বরিশালের এসপি
- চট্টগ্রাম বন্দরে যুক্ত হচ্ছে আরও ৬ লাইটার জেটি, বাড়ছে সক্ষমতা
- ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই খুন
- হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি
- হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলের ৩ সেনা নিহত
- হাওড়-দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক ৭০ শতাংশ ভর্তুকি, অন্যরা ৫০
- গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, ৭৬.২৫ পেয়ে প্রথম লামিয়া
- সুন্দরবনে আগুনে ক্ষতি নির্ণয়ে কাজ করছে বিশেষজ্ঞ টিম
- তৃতীয় দিনেও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি সুন্দরবনের আগুন
- সারাদেশে বজ্রসহ শিলা বৃষ্টির আভাস
- সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী
- সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে
- পরিবেশ রক্ষায় সারা দেশে গাছ কাটা বন্ধে রিট
- শুরু হচ্ছে মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
- যেদিন সূর্য নিস্প্রভ হয়ে যাবে
- গরমে মাথা ঘোরা ও অজ্ঞান হওয়ার কারণ কী হতে পারে?
- এই গরমে চুল পড়া বন্ধ করতে
- আম মুরগির ঝোল
- কমলো পেঁয়াজের দাম
- জ্বালানি তেল খালাসে আসছে যুগান্তকারি পরিবর্তন
- মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী ডিবিতে
- ঝালকাঠিতে জমজমাট নির্বাচনী প্রচারণা
- ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে রাজধানীর চাপ কমে আসবে: চিফ হুইপ
- মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত : কাদের
- বরগুনায় মা ও মেয়ে ধর্ষণের পলাতক আসামী গ্রেফতার
- কলাপাড়ায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড
- গরমে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া কি বিপদের লক্ষণ?
- রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেছে কি না বুঝবেন যে লক্ষণে
- এই গরমে দিনে কয়বার গোসল করা উচিত?
- দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর মাছ শিকারে প্রস্তুত জেলেরা
- চালের বিকল্প হিসেবে গম আমদানি করছে সরকার
- শবে কদরের নামাজের নিয়ত ও পড়ার নিয়ম
- ইস্তিসকার নামাজের সময় ও বিধি-বিধান
- মাত্র ১২০ টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকুরি পেল বরিশালের ৫৮ জন
- প্রথম ধাপে বরিশালের ২ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়তে চান ১২ জন
- বোরোর বাম্পার ফলনে হাওড়ে উৎসবের আমেজ
- বেশিক্ষণ রোদে থাকলে যে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে
- হিট স্ট্রোক এড়াতে কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
- আইএমএফের ঋণের বাকি অর্থ ছাড়ে বাধা নেই: গভর্নর
- সিনেমা হল ভেঙে হচ্ছে মাদরাসা
- যমুনার বুকে দৃশ্যমান হলো দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু রেলসেতু
- গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অবহেলা করলে হতে পারে যে গুরুতর রোগ
- শুধু হিট স্ট্রোক নয়, তাপপ্রবাহে কঠিন যে রোগের ঝুঁকি বাড়ে
- ছয় খাতে বাণিজ্য চায় কোরিয়া