• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর এসএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার যত ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর জলাধার ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণে প্রকৌশলীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান যে পরিকল্পনা হউক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী

সম্ভাবনাময় খাত ভুট্টার তেল

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২২  

ভোজ্যতেলের বৈশ্বিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশেও এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। দিন দিন ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। বর্তমানে সরকারের একটি অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয়ভাবে ভোজ্যতেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এর জন্য আমন ও বোরো ধানের মাঝে যে সময়টুকু থাকে সে সময় স্বল্পমেয়াদি সরিষা চাষ করে সরিষা ও সরিষা তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ধরনের উদ্যোগ আগে থেকে চলমান থাকলেও বর্তমানে এজন্য সরকারিভাবে ব্যাপক ও অধিক পরিকল্পনামাফিক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সহজ মনে হলেও কাজটা কিন্তু অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। এর মধ্যে নানা ধরনের প্রযুক্তিগত বিষয় রয়েছে। আশা করি এই সুন্দর উদ্যোগটি সফলকাম হবে। ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ বা আংশিক স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হলে আরও একাধিক উৎস থেকেও ভোজ্যতেল আহরণের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যেহেতু দেশে বিপুল পরিমাণে (৫৬.৬ লাখ টন) ভ্ট্টুা উৎপাদন হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এর চাষ বৃদ্ধির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, তাই ভুট্টার তেল বা কর্ন অয়েল বা কর্ন জার্ম অয়েল উৎপাদন বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ খাত।
 

বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য প্রচলিত তেলের ফসল হচ্ছে সরিষা, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, সয়াবিন, তিল ও তিসি। এর মধ্যে নানাবিধ ব্যবহারের কারণে সরিষা ছাড়া অন্যান্য উৎস্য থেকে ভোজ্যতেলের উৎপাদন খুব সামান্য। এক সময় গাজীপুর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুস্বাদু বাঝনার তেল পাওয়া যেত, যা এখন শুধুই অতীত। এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর ১৭ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি করে দেশের চাহিদা মেটানো হয়েছে। চাহিদা থাকায় বাংলাদেশের বাজারেও বিদেশ থেকে আমদানি করা ভুট্টার তেল পাওয়া যায়। এসব আমদানি করা ভোজ্যতেলের সঙ্গে সরিষা ও অন্যান্য তেলের ফসল থেকে দেশজ উৎপাদন (প্রায় ৩ লাখ টন) যোগ করে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা নিরূপণ করা যায়, যা কম-বেশি ২১ লাখ টন/বছর (মতান্তরে ২৪ লাখ টন/বছর)। তাই চাহিদার কথা বিবেচনা করে দেশে ভুট্টার তেল উৎপাদনের কথা এখনই ভাবতে হবে। তাহলে ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কিছুটা হলেও কমবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
 

যুক্তরাষ্ট্র, চীন, তুরস্ক, ব্রাজিল, জাপান, ইতালি, বেলজিয়াম, কানাডা, মেক্সিকো, যুক্তরাজ্য, স্পেন, মোজাম্বিক, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, পাকিস্তান ও ভারতসহ বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশ বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টার তেল উৎপাদন করছে। যার মোট পরিমাণ প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন। এসব তেল তারা বিদেশেও রফতানি করছে।
 

ভুট্টার তেল একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ভোজ্যতেল। প্রায় সকল রান্নায় এ তেল ব্যবহার করা যায়। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই (১০%) ও ভিটামিন-কে (১%)। এর ফ্যাটি এসিড কম্পোজিশন অনেকটা সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, তুলাবীজ, তিল ও তিসি তেলের মতোই। এতে রয়েছে ৫৫.০-৬২.০% ওমেগা-৬ (Linoleic acid) এবং ০.০-১.১% ওমেগা-৩ (Linoleic acid) ফ্যাটি এসিড, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এক টেবিল চামচ (১৩.০ গ্রাম) ভুট্টার তেলে রয়েছে ১২২.৪ কিলোক্যালোরি শক্তি, মোট ফ্যাট-১৩.০ গ্রাম, সেচ্যুরেটেড ফ্যাট- ১.৮ গ্রাম, মনো আনসেচ্যুরেটেড ফ্যাট-৩.৮ গ্রাম, পলি আনসেচ্যুরেটেড ফ্যাট- ৭.৪ গ্রাম, ওমেগা-৬ Linoleic acid) ৭.২ গ্রাম ও ওমেগা-৩ ((á-Linolenic acid) -০.২ গ্রাম। এই তেল ব্যবহারের ফলে রক্তের কোলেস্টোরলের উন্নয়ন হয়, হার্ট অসুখের ঝুঁকি কমায় ও হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হয়, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, চর্মের উজ্জ্বলতা বাড়ে, পেটের দাহ্য নিয়ন্ত্রণ করাসহ নানাবিধ উপকার রয়েছে। সুস্বাদু, মিষ্টি গন্ধ ও সুন্দর রঙের জন্য এই তেল অধিক জনপ্রিয়। রান্নার তেল ছাড়াও বায়োডিজেল, সাবান, পেইন্ট, কালি, ওষুধ তৈরিতে ও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে বিশ্ববাজারে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
 

একটি ভুট্টার দানায় ৪টি অংশ থাকে- (১) স্টার্চ ও প্রোটিনসমৃদ্ধ এন্ডোস্পার্ম (৮৩%), (২) বহিত্বক (৫%), (৩) টিপ বা অগ্রভাগ (১.০%) এবং (৪) প্রোটিন ও তেলসমৃদ্ধ ভ্র‍ুণ বা জার্ম (১১%)। কর্ন জার্ম থেকে উৎপাদিত তেলকে কর্ন জার্ম অয়েলও বলা হয়। ভুট্টার দানায় সাধারণত ৪-৫% তেল আছে, যার অধিকাংশ (৮৩-৮৫%) ভ্রুণ বা জার্ম অংশে সীমাবদ্ধ থাকে। ভুট্টার দানা থেকে ভ্রুণ বা জার্ম অংশ (দানার ১১%) সহজেই আলাদা করা যায়। ভ্রুণ বা জার্ম অংশ আলাদা করে শুকিয়ে নিলে তা থেকে প্রায় ৫০% তেল পাওয়া যায়।
 

বাংলাদেশে যে পরিমাণ ভুট্টা উৎপাদন হয় তার সিংহভাগ (প্রায় ৯৫%) ব্যবহার হয় পোলট্রি, পশু ও মাছের খাদ্যে। সরাসরি মানুষের খাবার হিসেবে এর ব্যবহার খুব সীমিত (প্রায় ৫%)। বেবিকর্ন সবজি হিসেবে, পপকর্ন খৈ হিসেবে ও রোস্টেড কর্ন (পোড়ানো ভুট্টা) মানুষ সরাসরি খেয়ে থাকে। গমের সঙ্গে কিছু অংশ ভুট্টা মিশিয়ে যে আটা তৈরি হয় তা গুণে ও মানে ভালো বলে জানা যায়। কিছু প্রতিষ্ঠান ভুট্টা থেকে স্টার্চ তৈরি করছে বলেও জানতে পেরেছি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ভুট্টা থেকে তেল উৎপাদন করতে গিয়ে সফলকাম হতে পারেনি বলেও জানা গেছে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি বা প্রোটোকল, দক্ষ/প্রশিক্ষিত জনবল, তেল নিষ্কাশনের লাগসই যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক এবং তেলসমৃদ্ধ ভুট্টা জাতের অভাব ছিল।
 

পোলট্রি, পশু ও মাছের খাদ্যে ভুট্টার ব্যবহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, এসব খাদ্য প্রস্তুত করতে যে ভ্ট্টুা ব্যবহার করা তা মূলত কার্বহাইড্রেট/স্টার্চ এবং প্রোটিনের জন্য। ফ্যাটের জন্য নয়। যে পরিমাণ (৪-৫%) তেল ভুট্টা থেকে আসতে পারে তা বিকল্প সোর্স (পাম অয়েল, রাইস ব্রান মিল, সয়াবিন মিল/কেক, সরিষার খৈল ইত্যাদি) থেকে অনায়াসে পূরণ করা সম্ভব। উল্লেখ্য, পোলট্রি খাদ্যে মাত্র ১-৪% (সর্বোচ্চ ৫%) ফ্যাট প্রয়োজন হয়।
 

বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ভুট্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। দেশের কৃষক ভাইয়েরাও এখন প্রশিক্ষিত এবং এর চাষ পদ্ধতিতে সিদ্ধহস্ত। তাই অতি দ্রুত এর সম্প্রসারণ হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০২০-২১ সালে প্রায় ৫৬.৬ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে (ডিএই ২০২২)। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এক কোটি টন ভুট্টা উৎপাদন করা। ভুট্টার ওপর অধিকতর গবেষণা করার জন্য ২০১৭ সালে দিনাজপুরে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট নামে স্বতন্ত্র একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সিমিটের (CIMMYT) মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও এখন অনেক উন্নত। ভুট্টার চাষ সম্প্রসারণ করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।
 

তবে কিছু দুর্বল দিকও (weakness) রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট বা সিমিটের (CIMMYT) মেন্ডেট অনুযায়ী তাদের কার্যক্রম অনেকটাই ফলন বৃদ্ধিকেন্দ্রিক। ব্যবহারভিত্তিক নয় বা সীমিত। যেমন- কিভাবে আরও বেশি ফলন পাওয়া যাবে সেদিকেই তাদের নজর বেশি (development of high yielding varieties) । কিন্তু এখন সময় এসেছে। ব্যবহারের লক্ষ্য ঠিক করে এর জাত উন্নয়ন এবং এগ্রো প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম আরও জোরদার করা। পরিষ্কার করে যদি বলি, ভুট্টার এমন জাত আবিষ্কার করতে হবে যা থেকে ভুট্টার তেল, কর্নফ্লেক্স বা উন্নতমানের স্টার্চ উৎপাদন করা যায়। সেইসঙ্গে উক্ত প্রোডাক্ট তৈরির জন্যও প্রযুিক্ত আবিষ্কার করতে হবে। এসব গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ করার প্রয়োজনীয় জার্মপ্লাজম (যা থেকে জাত উদ্ভাবন করা হয়), প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, দক্ষ জনবল এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ল্যাবরেটরির ঘাটতি রয়েছে। বর্তমানে সীমিত ব্যবহারের কারণে কখনও কখনও ভুট্টার বাজারে অনিশ্চয়তাও দেখা দেয়। যেমন- মুরগির বার্ড ফ্লু-এর সময় ভুট্টার বাজারে সমস্যা হয়েছিল। চাষিরা তখন কাক্সিক্ষত দাম পায়নি। এসবই আমাদের দুর্বল (weakness) দিক।
 

বাংলাদেশে ভুট্টার তেল উৎপাদনের অপার সম্ভাবনা (opportunities) রয়েছে। আগেই উল্লেখ করেছি, বিশ্বের ৫০টির অধিক দেশ বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টার তেল উৎপাদন করছে। ওপরে বর্ণিত আমাদের যে শক্তি (strength) রয়েছে সেসবের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে এবং যেসব দুর্বল দিক (weakness) রয়েছে তা অতিক্রম/সমাধান করে লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। দেশে বর্তমানে ৫৬.৬ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়। তা থেকে প্রায় ৫.৬ লাখ টন কর্নজার্ম পাওয়া যাবে (১০% হিসেবে) এবং ২ লাখ টন তেল নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে। এই দুই লাখ টন ভুট্টার তেলের বাংলাদেশে বাজারমূল্য প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা (৩৫০/কেজি বাজারমূল্য হিসেবে)। কর্নজার্ম আলাদা করার পর বাকি অংশ (প্রায় ৯০%) ব্যবহার করে পোলট্রি, পশু ও মাছের খাদ্য এবং কর্নস্টার্চ উৎপাদন করা সম্ভব। তেল নিষ্কাশনের পর যে খৈল পাওয়া যাবে তাও পোলট্রি, পশু ও মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করা যাবে। তবে এজন্য প্রয়োজন সুসমন্বিত উদ্যোগ। গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ভুট্টা ব্রিডিং-এর মাধ্যমে জাত উন্নয়ন করে এর তেলের পরিমাণ ৪% থেকে ১০%-এর অধিক উন্নীত করা যায়। চাষিদের জন্য ভুট্টার বাজার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এর ব্যবহারে ডাইভারসিফিকেশন দরকার। এসবই আমাদের সম্ভাবনার (opportunities) বিভিন্ন দিক।
 

দেশে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ ভুট্টা ব্যবহার করে আমরা মূল্যবান ভুট্টার তেল উৎপাদন করতে পারি। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, পলিসি, গবেষণা ও আর্থিক সাপোর্ট, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি (গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রোডাক্ট ডেভেলেপমেন্ট বিভাগ স্থাপনসহ), প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কাজ। আমাদের উচিত হবে আর দেরি না করে এখনই তা আরম্ভ করা। এজন্য এখনই কিছু স্বল্পমেয়াদি ও কিছু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
 

স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- (১) প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির লক্ষ্যে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের জন্য ভুট্টা তেল উৎপাদনকারী দেশে বিজ্ঞানী প্রেরণ, (২) প্রশিক্ষিত জনবল তৈরির লক্ষ্যে বিজ্ঞানী ও ল্যাব. টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণের জন্য তেল উৎপাদনকারী দেশ বা সিমিট (CIMMYT) থেকে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসা ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, (৩) তেল উৎপাদনকারী দেশ থেকে তেল নিষ্কাশনের প্রোটোকল/প্রযুক্তি ও ল্যাব যন্ত্রপাতি আমদানি এবং সিমিট (CIMMYT) এর সহযোগিতায় গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ল্যাবরেটরি স্থাপন, (৪) সিমিটের (CIMMYT) সহযোগিতায় তেল উৎপাদনকারী দেশ থেকে তেল নিষ্কাশনের জন্য তাদের ব্যবহৃত জাত/জার্মপ্লাজম আমদানি, (৫) প্রয়োজনে আমাদের দেশে উৎপাদিত ভুট্টা জাতের তেলের পরিমাণ গবেষণাগারে নিরূপণপূর্বক তেল নিষ্কাশন কাজ পরীক্ষামূলকভাবে এখনই শুরু করা।

অপরদিকে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা অন্যতম হচ্ছে- (১) তেল উৎপাদনকারী দেশ থেকে তেল নিষ্কাশনের জন্য তাদের ব্যবহৃত জাত/জার্মপ্লাজম আমদানির পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে উচ্চমাত্রায় তেলসমৃদ্ধ জাত উন্নয়নে গবেষণা আরম্ভ/জোরদার করা, (২) গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রোডাক্ট ডেভেলেপমেন্ট বিভাগ/শাখা স্থাপন করা ও দক্ষ জনবলের নিয়োগ বা পদায়ন, (৩) আধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা, (৪) বিজ্ঞানী/ল্যাব. টেকনিশিয়ানদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া, (৫) আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং (৬) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এসব কাজে সম্পৃক্ত করা (পিপিপি)। সিমিট (CIMMYT) এসব কাজে আমাদের অনেক বেশি সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারে।
 

প্রতিবেদনে যত সহজভাবে বর্ণনা করা হয়েছে বাস্তবে কাজটি অনেকটাই চ্যালেঞ্জিং। কঠিন মনে হলেও মোটেও তা অসম্ভব নয়। বিশ্বের ৫০টির অধিক দেশ বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টার তেল উৎপাদন ও রফতানি করছে। তাই প্রয়োজনের তাগিদেই আমাদেরকেও এই চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে। বাংলাদেশের বাজারেও মূল্যবান ডলার ব্যয় করে বিদেশ থেকে আমদানি করা ভুট্টার তেল পাওয়া যায়। সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও পরিকল্পনামাফিক অগ্রসর হলে আমরাও ভুট্টার তেল উৎপাদনে সফলকাম হবো। তাহলে আর বিদেশ থেকে ভুট্টার তেল আমদানি করতে হবে না। বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হবে।

বরগুনার আলো