• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর এসএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার যত ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর জলাধার ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণে প্রকৌশলীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান যে পরিকল্পনা হউক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী আইইবির ৬১তম কনভেনশন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল করতে সরকার কাজ করছে

তাসনিম খলিল পরিচালিত আয়নাঘর: নতুন একটি প্রোপাগান্ডা থ্রিলার

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২২  

সম্প্রতি অনলাইনে ছাড়া হয়েছে দেশাদ্রোহিতার দায়ে পলাতক তাসনিম খলিল পরিচালিত নতুন একটি প্রোপাগান্ডা থ্রিলার। এটিকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আয়নাবাজি করার চেষ্টা করেছে খলিল। তবে সংবাদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাংবাদিকতার ছাত্র না হওয়ার কারণে চিত্রনাট্যটি ঠিকমতো সাজাতে পারেনি তাসনিম খলিল। অজস্র দুর্বলতায় ভরা ভিডিওচিত্রটি কোনো সংবাদ তো হয়নি, এমনকি কোনো সফল প্রোপাগান্ড ভিজ্যুয়াল-ও হয়ে উঠেনি। জঙ্গিবাদকে উৎসাহ দেওয়া এবং বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে ছোট করার একটা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এটি। তাই এর পেছনে কারা আছে তাদের পরিচয় সবার জানা জরুরি।

তবে উগ্রবাদী যে গোষ্ঠীটিকে টার্গেট করে তাসনিম খলিল ও বার্গম্যানরা ভিডিওটি তৈরি করেছে, সেই মহলের মধ্যে কিছুটা উৎসাহ দেখা গেছে। কারণ, তারা ভাবছে এটি হাওয়া সিনেমার মতোই কিছু একটা।

কিন্তু সাংবাদিকতার নামে সিনেম্যাটিক থ্রিলার নির্মাণ করে সচেতন মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায় না। একারণে ইন্টারনেট ও সাংবাদিকতা বিষয়ে শিক্ষিত দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়েছে খলিল গং। বরং এটি দেখার পর জঙ্গিবাদের অংশনি সংকেত নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষ।

আসুন জেনে আসি এই থ্রিলারের সঙ্গে যুক্ত নামগুলোর পরিচয় ও ইতিহাস সম্পর্কে। শেখ মোহাম্মদ আবু সালেহ ওরফে লিটন নামের এক প্রবাসীকে মূল চরিত্রে রেখে জঙ্গি লিটন, জঙ্গি তাহজীব করিমের মা, জঙ্গিবাদে যুক্ত থাকার কারণে চাকরিচ্যুত সরকারি নিরাপত্তা কর্মকর্তা হাসিনুর, এবং এদের সাথে সম্পর্কিত জঙ্গি নেতা ও জঙ্গি হামলার ঘটনাগুলো সম্পর্কে অন্তত কিছু তথ্য জেনে রাখুন।

কে এই কারাতে মাস্টার আবু সালেহ ওরফে লিটন:

পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ আবু সালেহ ওরফে লিটন। ২০০২ সাল থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির নেতাদের সঙ্গে পরিচয় তার। তাদের পরামর্শেই ২০০৩ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত কারাতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্লাকবেল্ট অর্জন করে সে। এরপর জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা মাওলানা হাকিম তাকে জঙ্গিদের কারাতে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। ২০১৫ সাল থেকে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের অন্যতম সমন্বয়ক ও শীর্ষ প্রশিক্ষক হয়ে ওঠে এই কারাতে মাস্টার লিটন। এরমধ্যেই ২০১৬ সালে ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানের নৃশংস হামলাসহ একাধিক নাশকতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে।

গুলশান হামলার পর পুলিশের নিয়মিত সাঁড়াশি অভিযানে একের পর এক গ্রেফতার হতে থাকে জঙ্গিরা। গ্রেফতার জেএমবি সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একপর্যায়ে লিটনকে খুঁজতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১৬ নভেম্বর মধ্যরাতে রাজধানীর আদাবর এলাকার একটি ক্যাফেতে বৈঠকরত অবস্থায় অস্ত্র-গুলি ও বোমা বানানোর সরঞ্জামসহ তাকে আটক করে পুলিশ।

শেখ মোহাম্মদ সেলিম নামের এক মালয়েশিয়া প্রবাসীর ভিডিও বক্তব্যের মাধ্যমে এই নরখুনি ও জঙ্গি লিটনকে নিয়ে কী নাটকটাই না তৈরি করলো জামায়াতের পেইড এজেন্ড তাসনিম খলিল! আর এই তথাকথিত প্রবাসী সেলিমের সঙ্গেই বা জঙ্গিবাদের কী সম্পর্ক তাও উঠে এসেছে আমাদের অনুসন্ধানে। সে বিষয়ে যাওয়ার আগে, সেলিমের এসব নাটকীয় তথ্যের সূত্র ধরে, আসুন একবার ঘুরে আসি আন্তর্জাতিক জঙ্গি তাহজীবের প্রসঙ্গ থেকে।

লিটনের মাকে খুঁজতে গিয়ে বের হলো আন্তর্জাতিক জঙ্গি তাহজীব করিমের ইতিহাস:

শেখ মোহাম্মদ আবু সালেহ ওরফে লিটনের বরাত দিয়ে শেখ মোহাম্মদ সেলিম হোসেন দাবি করলো যে, কারাতের ইভেন্টে খেলতে লিটনের অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল! অথচ বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়- কারাতে নামের কোনো ইভেন্টে বাংলাদেশ থেকে কোনো প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে না।

এছাড়াও সেলিম আরো দাবি করলো যে, বাথরুমে খোদাই করা নাম্বারে ফোন দিয়ে সে সেলিমের মায়ের সাথে কথা বলেছে। কিন্তু ওই নাম্বারটি আসলে কার- সেটি সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে পরিবেশিত দুর্বল স্ক্রিপ্টের এই আয়নাবাজির থ্রিলার থেকেই জানা গেছে। নাটকীয়ভাবে যে নাম্বারটির ডিজিটগুলো উচ্চারণ করে লিটনের মায়ের বলে জানালো সেলিম, সেই নাম্বারটির সাথে লিটনের কোনো সম্পর্কই নাই। প্রকৃতপক্ষে নম্বরটি হলো জঙ্গি তেহজীব করিমের মায়ের। আর এই তেহজীব করিম কে, জানেন কী?

২০১৬ সালে সংঘটিত দুটো নারকীয় হামলার সমন্বয়ক সে। ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে এবং ৭ জুলাই দেশের বৃহত্তম ঈদের জামায় শোলাকিয়া গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত এই তেহজীব করিম। ২০১০ সালে ইয়েমেনের জঙ্গি নেতা আনওয়ার-আল-আওলাকির সাথে দেখা করতে গিয়েছিল সে। তবে সেখানকার আল কায়েদাবিরোধী সরকারি অভিযানে ধরা পড়ে সেখানেই ১০ মাস জেল খাটে সে। সেসময় রাজধানীর লেকহেড গ্রামার স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিল তাহজীব। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিমের সেকেন্ড ইন কমান্ড হয়ে ওঠে এই ভয়ানক জঙ্গি।

জঙ্গি তেহজীবের ভাই রাজীব করিমও আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত। ২০১১ সালে একটি বিমানে জঙ্গি হামলার অপচেষ্টার দায়ে ব্রিটেনে এখন জেল খাটছে সে। বৃটিশ গোয়েন্দারা তাদের তদন্ত প্রতিবেদনে জানায়, এই দুই ভাই আল কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এমনকি এই তেহজীব করিমের শ্বশুরও জঙ্গিদের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান আইসিইউডি-এর সংগঠক।

চতুর এই জঙ্গি সংগঠক ২০১৬ সালে আজিমপুরে পুলিশের অভিযানে নিজের মৃত্যুর নাটক সাজিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৭মে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরকম এক কুখ্যাত জঙ্গির মায়ের ফোন নাম্বার আবিস্কারের মধ্য দিয়ে কি বোঝাতে চাইলো দেশদ্রোহী তাসনিম খলিল??

জঙ্গিদের সাথে প্রবাসী সেলিমের সম্পর্ক:

প্রবাসী আবু সালেহ ওরফে সেলিম, সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে জামায়াতের মুখপাত্র তাসনিম খলিল যাকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন তার আয়নাবাজির টেলিফিল্মে, পুলিশের হাতে আটক জঙ্গি তাহজীবের মায়ের নাম্বার সেই সেলিম পেলো কীভাবে? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমাদের অনুসন্ধান টিম জানাচ্ছে- ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় থাকতো সেলিম। এই সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে। ২০১৬ সালে দেশের বিভিন্ন স্থানে চূড়ান্ত আঘাত হানার পরিকল্পনা করে জঙ্গিরা। এসময় জঙ্গি তাহজীব গংদের নির্দেশে দেশে ফেরে সেলিম।

কিন্তু যুদ্ধপরাধীদের পরিবার ও দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে গোয়েন্দা পুলিশের জালে ধরা পড়ে সে। পরবর্তীতে ছাড়া পেয়ে আবারো মালয়েশিয়া চলে যায় সেলিম। কিন্তু দেশে থাকা অবস্থায় যেসব নির্দেশনা পায় সে, তা বাস্তবায়নে নতুন মিশন শুরু করে এবার। সেই সূত্রেই জামায়াতের পেইড এজেন্ট তাসনিম খলিলদের সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্য। এরপর জঙ্গি ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে জনমত গড়তে কৌশলে এক অভিনব আয়নাবাজির আশ্রয় নেয় তারা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নামে তথ্যহীন কিন্তু চটকদার এক ভেলকিবাজি থ্রিলার নির্মাণ করে তারা।

সেলিমের নাটকীয় বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে দৃশ্যে আসা হাসিনুর আসলে কে:

প্রবাসী সেলিমের বক্তব্যকে সমর্থন জানাতে, সিনেম্যাটিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে এক রহস্য মানব-রূপে, দৃশ্যে আবির্ভূত হয় হাসিনুর রহমান। নিজেকে দাবি করে বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা ও বীর প্রতীক হিসেবে। তারপর সেনানিবাসকে সুপরিচিত অঙ্গন বলে বিভিন্ন কথা বলতে শুরু করে সে। অথচ গুগল ম্যাপের মাধ্যমেই এসব স্থাপনার কথা যে কেউ জানতে পারে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই হাসিনুর আসলেই দশম বিএমএ-এর একজন পদচ্যুত সেনা কর্মকর্তা। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক ছিল সে। সেসময় তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠন হিজবুত তাহরিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা ফাঁস হয়ে পড়ে। পরে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় কোর্ট মার্শাল হয় তার, বিচারের পর চাকরিচ্যুত হয়ে কয়েক বছরের জন্য সাজাও খাটতে হয় তাকে।

মূলত, উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডের কারণে ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর হিযুবত তাহরিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এসময় আটক করা হয় সংগঠনটির শীর্ষ নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-এর শিক্ষক মহিউদ্দিন আহমেদকে। তার স্বীকারোক্তি থেকেই ফাঁস হয়ে পড়ে চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭ এর তৎকালীন অধিনায়ক হাসিনুরের নাম।

এরপর বিস্তারিত তদন্তে জানা যায়,  ২০০১ সালে রমনার বটমূলে বোমা হামলা এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গি মাওলানা ইয়াহিয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরেই গোপন সম্পর্ক রক্ষা করতে চলতো হাসিনুর। ২০১১ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর এসব অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মাওলানা ইয়াহিয়া।

এছাড়াও পার্বত্য চুক্তিবিরোধী একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং অপরাধ দমনে বিভিন্ন সেনা অভিযানের খবর ফাঁস করে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগেও অভিযুক্ত ছিল এই কর্মকর্তা। ২০১৪ সালে জেল থেকে বের হওয়ার পরেও নিয়মিত জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর সাথে গোপনে যোগাযোগ করা এবং অনলাইনে উগ্রবাদী উস্কানি ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এবার আসুন, একবার ঘুরে আসি তাসনিম খলিলের অতীত থেকে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ২০০৭ সালের ১১মে আটক হয়েছিল এই তাসনিম খলিল। বিদেশী সংস্থার হয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং পার্বত্য অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদীদের মদত দেওয়ার অভিযোগ ছিল তখন এই খলিলের বিরুদ্ধেও।

সময়গুলো মিলিয়ে ফেলুন। দুইয়ে-দুইয়ে চার মিলে যায় খুব সহজেই। দেশদ্রোহী উগ্রবাদী এই কর্মকর্তার সঙ্গে তাসনিম খলিলের প্রকাশ্যে পর্দায় আসা শুধু সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। কিন্তু বক্তব্যের শুরুতেই নিজেকে বীর প্রতীক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার মাধ্যমে যে টুইস্টটা দিলো হাসিনুর, তার জন্য নিশ্চই কেউ প্রস্তুত ছিল না। মানুষের সাইকোলজিকে নিজের পক্ষে নিয়ে আসার যে কৌশলগুলো রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম একটি কৌশল এটা।

তাসনিম খলিলের ভেলকিবাজি:

সরলপ্রাণ সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে ধর্মব্যবসায়ীরা যেভাবে টুইস্ট করে, ঠিক সেভাবেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও একটা টুইস্ট করার কৌশল হয়েছে এই থ্রিলারে। বীর প্রতীক শব্দটিকে মানুষের সাইকোলজি প্রভাবিত করার অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। থ্রিলারের এক পর্যায়ে, হুট করেই আলখল্লা পরিহিত এক আনকমন সাজে সজ্জিত হয়ে পদচ্যুত কর্মকর্তা হাসিনুর পর্দায় আসে। তার উপস্থিতির সিনেম্যাটিক ধরণ সাধারণ মানুষের মনোযোগ কেড়ে নেয়। এরপরই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের মনত্বত্ত্বকে নাড়া দেওয়ার টেকনিক হিসেবে এরপরেই বীর প্রতীক শব্দটিকে ব্যবহার করে সে।

কিন্তু আমাদের অনুসন্ধান বলছে, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বিএমএ-এর দশম ব্যাচের একজন কর্মকর্তা হাসিনুর। মুক্তিযুদ্ধের অনেক পড়ে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেছে, বাস্তবতা হলো- সে কোনো মুক্তিযোদ্ধাই নয়। এরপর আবার জঙ্গিবাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে সবসময়!

সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে তাসনিম খলিলের পার্টনার ডেভিড বার্গম্যান এর আগেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিপক্ষে নিয়মিত লিখেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লবিস্ট হিসেবে কাজ করেছে। সেই ধারাবাহিকতাতেই মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বসূচক টাইটেল নিয়ে এই ভিডিওতে নোংরা খেলায় মেতেছে তাসনিম খলিল।

এর আগে, মুক্তিযুদ্ধকালে খুন ও ধর্ষণের মতো জঘণ্য অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত নেতা মীর কাশিম আলীর ফাঁসি ঠেকানোর জন্য দশ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল ধনাঢ্য কাশিমের পরিবার। বাংলাদেশের সরকারকে চাপ দেওয়ার জন্য সেই অর্থ আন্তর্জাতিক মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছিল ড. কামালের জামাই ডেভিড বার্গম্যানের মাধ্যমে। সেই সূত্রে এখন মীর কাশিম ও রাজাকার প্রধান গোলাম আযম ছেলেকে নিয়েও নতুন টুইস্ট সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয়েছে এখানে। বিএনপি জামায়াতের কাছ থেকে টাকা খেয়ে আল জাজিরায় এরকম একটি নাটক সম্প্রচার করে ব্যর্থ হয়েছিল তারা একসময়। একারণে এবার মার্কিন গোয়েন্দাদের অর্থায়নে পরিচালিত নেত্রনিউজের মাধ্যমেই নতুন নাটক সম্প্রচার করলো তারা।

জামায়াত-বিএনপির পেইড এজেন্ট তাসনিম খলিল প্রথম দিকেই একটা নোংরা বক্তব্য সম্প্রচার করে দর্শকদের ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। তার নির্দেশনায়- হিন্দিতে কথা বলতে বলার প্রসঙ্গ তুলে আবার সুকৌশলে দ্রুত অন্য বর্ণনায় চলে যায় এই নাটকের অন্যতম চরিত্র সেলিম। আটকের ইস্যুতে হুট করেই হিন্দি শব্দটি এলো কেনো? কারণ, জামায়াতের পুরনো কৌশল এটা। মানুষের মনে ভারত বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে হঠকারিতা ঘটানো। ঠিক সেই কাজটিই করা হয়েছে এখানে। এরপরও কি কারো বুঝতে বাকি থাকে যে, এই থ্রিলারের চিত্রনাট্য কাদের ডিমান্ড অনুসারে সাজানো হয়েছে? আপনি যদি একটু সচেতন হন, তাহলে আপনিও সহজেই বুঝবেন।

শুরুর দিকে আকারে ইঙ্গিতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ভারত বিদ্বেষ, এরপর শেষের অংশেও অপ্রাসঙ্গিকভাবে কথার মধ্যে একটু আযান শোনানোর মাধ্যমে সরলপ্রাণ সাধারণ মানুষদের মনকে কীভাবে ডাইভার্ট করার কৌশল করেছে তারা। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ভিউয়ারদের মনকে প্রভাবিত করার জন্য থ্রিলারের শেষাংশে প্রবাসী সেলিমের কথার মধ্যে চালিয়ে দেওয়া হয় আযানের কয়েক সেকেন্ড। অথচ কোথাও আযান হলে সেই আযানের শব্দ বক্তব্যের পুরো সময় ধরেই থাকা উচিত। দেখার পর নিশ্চই বুঝতে পারছেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে আযানের কয়েক সেকেন্ড চালিয়ে, ধর্মীয় ভাবাবেগের ছদ্মবেশে, অতি কৌশলে জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে নির্মাতা তাসনিম খলিল।

এছাড়াও দেশদ্রোহী তাসনিম খলিল বিভিন্ন সময় দেশের গর্বিত সেনাবাহিনী নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন কুৎসা রটনা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এই থ্রিলারেও বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর প্রতীক, সেনানিবাসের গুগল ম্যাপ, সেনাসদস্যদের ছবি ব্যবহার করে চটক সৃষ্টি করেছে। গুগুল ম্যাপের ছবি চাইলে যে কেউ নিতে পারে, আপনি-আমিও ইন্টারনেটে ঢুকেই যেকোনো স্থানের গুগল ফটো সংগ্রহ করতে পারি। এটাকে কি সাংবাদিকতা বলে? নাকি এই ভিডিওগুলো তারা আসলে শুধু তাদের জন্যই তৈরি করে, যারা আসলে সাংবাদিকতা কি তা জানে না বা বোঝে না? হ্যাঁ, তাদের টার্গেট গোষ্ঠী আলাদা। তাসনিম খলিলরা সাংবাদিকতার নামে মানুষের সাথে যা করছে তা এক ধরণের ভেল্কিবাজি।

এমনকি পুরো থ্রিলারজুড়ে জঙ্গিদের খুনোখুনি ও রক্তপাতের ইতিহাস চেপে গিয়ে, উল্টো তাদের আন্তর্জাতিক মানের স্পোর্টসম্যান হিসেবে তুরে ধরার অপচেষ্টা করা হয়েছে। অথচ এরা শুধু দেশেই হলি আর্টিজান, শোলাকিয়া ঈদগা মাঠে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেনি; আন্তর্জাতিকভাবে সংগঠিত জঙ্গি গোষ্ঠীর সদস্য এরা। এদেশের সাধারণ মানুষদের রক্তে রঞ্জিত যে জঙ্গিদের হাত, তাদের কেনো ভালো হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে তাসনিম খলিল?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে আপনাকে আরো একটু চোখ-কান খুলতে হবে।

খেয়াল করে দেখুন তাসনিম খলিল তার এই প্রোপাগান্ডা থ্রিলার ভিডিও বাজারে ছাড়ার পরপরই কিন্তু মাঠে নেমেছে বিএনপি-জামায়াত জোট এবং নুরু গংরা। ১৬ আগস্ট এর পক্ষে মাঠ গরম করার চেষ্টা করলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। ১৮ আগস্ট এই বিষয়কে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদের লাশ ফেলে ক্ষমতার যাওয়ার স্বপ্নে মত্ত মাহামুদুর রহমান মান্না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অস্থির করার অপচেষ্টা করলো নুরু গংরা। এ যেনো আগে থেকে পরিকল্পনা করা একের পর এক দৃশ্যের মঞ্চায়ন। এখনো বি বুঝতে বাকি থাকে যে, কাদের অর্থে নির্মিত হয়েছে এই প্রোপাগান্ডা ভিডিও থ্রিলারটা।

জামায়াত-বিএনপি জোট আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সীমাহীন নৈরাজ্য চালানোর পরিকল্পনা করছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্তর্জাতিকভাবে হেয় করার মিশনে নেমেছে। যাতে আগামী নির্বাচনের আগে তারা ২০১৪ সালের মতো বোমা-পেট্টোল আগুন দিয়ে গণহারে মানুষ খুন করতে পারে, কেউ যেনো তাদের বাঁধা দিতে না পারে। এমনকি সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে করার কোটি ডলার মিশনে কাজ করে যাচ্ছে এই চক্রটি। এর আগেও তাদের একাধিক অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মানুষ সচেতন হলে ভবিষ্যতেও তাদের অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে।

বরগুনার আলো