• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ব্যাংকে চাকরির প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ আটজনকে গ্রেফতার

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২  

দীর্ঘদিন ধরে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাচ্ছিলেন না মো. এনামুল হোসেন। এরই মধ্যে এনামুল হোসেনের বাবা শওকত আলীর সঙ্গে পরিচয় হয় মো. এনায়েত খানের। পরিচয়ের সূত্রে এনামুল হোসেন এবং তার খালাতো ভাই জাবেদের জন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার কথা বলেন এনায়েত খান।

এনায়েত খান দাবি করেন, চাকরি পেতে ব্যাংকে গিয়ে শুধু ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষ) দিতে হবে। ভাইভার পরে দুজনের জন্য দুটি নিয়োগপত্র পেতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা ডোনেশন দিতে হবে। সে অনুযায়ী এনায়েতকে নয় লাখ টাকা দেন শওকত। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর আরও এক লাখ টাকা দিতে রাজি হন। কিন্তু টাকা দেওয়ার পর তারা নিয়োগপত্র পাচ্ছিলেন না। টাকা ফেরত চাইলে নানান টালবাহানা শুরু করেন এনায়েত।

এভাবে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে একটি চক্র হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। সর্বশেষ এনামুল ও তার খালাতো ভাই জাবেদসহ ১২ জনের কাছ থেকে চাকরির প্রলোভনে চক্রটি হাতিয়েছে ৩৯ লাখ টাকা।

নয় লাখ টাকা খোয়ানো ভুক্তভোগী মো. শওকত আলীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ওই প্রতারক চক্রের সন্ধান পায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূলহোতাসহ আটজনকে গ্রেফতার করা হয়।

সাবেক একজন ব্যাংক কর্মকর্তার নেতৃত্বে রাজধানীতে গড়ে উঠেছিল শক্তিশালী ওই চক্রটি। চক্রের মূলহোতা সেলিম আহমদ (৬০) উত্তরা ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

অবসারপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম ছাড়া চক্রের গ্রেফতার অন্য সদস্যরা হলেন— মো. এনায়েত খান (৪১), মো. কাওসার আলী (৩৮), কাজী হাবিব (৩২), ফয়েজ উল্লাহ (২৫), জালাল উদ্দিন তালুকদার (৫২), মো. সাগর (৩৪) ও সুলতান মাহমুদ (৩১)।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ব্যাংক কর্মকর্তা, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালকসহ একাধিক মিথ্যা পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে চক্রটি হাতিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

ভুক্তভোগী শওকত আলী বলেন, একই ভবনে থাকার সুবাদে প্রতারক এনায়েত খানের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। সেই সূত্রে এনায়েত আমার ছেলে এনামুল হোসেন ও আমার ভায়রার ছেলে জাবেদ হোসেনকে সাউথইস্ট ব্যাংকে চাকরির প্রলোভন দেখায়। এনায়েত বলেন, চাকরি পেতে হলে সাউথইস্ট ব্যাংকে গিয়ে ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) দিতে হবে। কোনো লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। তার কথা মতো ২০২০ সালের ১৭ আগস্ট মতিঝিলে অবস্থিত সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে যায় এনামুল ও জাবেদ। এ সময় প্রতারক চক্রের অপর সদস্য কাজী হাবিব নিজেকে সাউথইস্ট ব্যাংকের পিওন পরিচয় দিয়ে কাওসার আলীকে সাউথইস্ট ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাদের (এনামুল ও জাবেদ) ব্যাংকের ভেতর নিয়ে যান। পরে একটি রুমে নিয়ে দুই-তিনজন মিলে তাদের তথাকথিত ভাইভা নেন।

শওকত আলী বলেন, এর কিছুদিন পর এনায়েত খান আমাকে জানান, দুজনের জন্য দুটি নিয়োগপত্র পেতে সাউথইস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ১০ লাখ টাকা ডোনেশন দিতে হবে। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর এনায়েতকে নয় লাখ টাকা দিই। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর আরও এক লাখ টাকা দিতে রাজি হই। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর তারা নিয়োগপত্র দিচ্ছিল না। টাকা ফেরত চাইলে তারা নানান টালবাহানা শুরু করে। পরে মামলা করে বিষয়টি ডিবি পুলিশকে জানানো হয়।

গ্রেফতারদের আগের পেশা:

মো. এনায়েত খান ঠিকাদার, মো. কাওসার আলী এনজিওকর্মী, কাজী হাবিব ব্যবসায়ী, সেলিল আহমদ সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা, ফয়েজ উল্লাহ কম্পিউটার অপারেটর, জালাল উদ্দিন তালুকদার বেসরকারি চাকরিজীবী, মো. সাগর কাপড়ের ব্যবসায়ী ছিলেন। এছাড়া সুলতান মাহমুদ ছিলেন প্রবাসী। অতি লোভ ও স্বল্পসময়ে ধনী হওয়ার জন্য একত্রে প্রতারণা শুরু করেন তারা।

গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা:

গ্রেফতারদের মধ্যে সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিমের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও তিনটি মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি তিনি। এছাড়া এনায়েত খানের বিরুদ্ধে তিনটি, হাবিবের বিরুদ্ধে চারটি ও কাউসারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে।

টাকা দিয়ে চাকরি না পেয়ে প্রতারিত যারা:

গোয়েন্দা সূত্র জানায়— গ্রেফতারদের হোয়াটসঅ্যাপ পর্যালোচনা করে প্রাইমারি সহকারী শিক্ষকসহ বিভিন্ন নিয়োগ, ব্যাংকে চাকরি ও বদলি-পদোন্নতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতারণার অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এ চক্রের হাতে সর্বশেষ প্রতারিত হয়েছেন অনন্ত ১২ জন।

তাদের মধ্যে প্রতারিত জাহিদ ৭ লাখ, সজিব খান ৬ লাখ, রবি ২ লাখ, শাহীন ৯০ হাজার, কনক মাস্টার ৭৪ হাজার, টুটুল ৭০ হাজার, লিটন ফিরোজ ৫০ হাজার, মতিন ৪৮ হাজার, খালেক ৪০ হাজার, হারুন ১০ হাজার ও শওকত আলী ৯ লাখ টাকা খুইয়েছেন।

ডিএমপির গোয়েন্দা ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, এ চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছিল। চক্রের মূলহোতা সেলিম আহমদ নিজেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, কখনো ব্যাংক কর্মকর্তা, আবার কখনো জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক পরিচয়ে মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতেন। পরে সিন্ডিকেটের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে লোক নিয়োগের নামে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিতেন।

রাজধানীর মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকা থেকে চক্রের আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্র, একটি কম্পিউটারসহ আটটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়ছে।

যেভাবে প্রতারণা করতেন তারা:

প্রতারণার পদ্ধতি সম্পর্কে এডিসি জুনায়েদ আলম বলেন, এনায়েত খান, কাজী হাবীব, জালাল উদ্দিন তালুকদার, সাগর ও সুলতান মাহমুদ বিভিন্ন এলাকা থেকে চাকরিপ্রত্যাশীদের সংগ্রহ করে কাওসার আলীর কাছে নিয়ে যেতেন। পরে কাওসার আলী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম আহমদের সঙ্গে যোগযোগ করে মতিঝিল এলাকায় সাউথইস্ট ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকে রিসিপশনে বসিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের নিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তার অভিনয় করে ভাইভা নিয়ে দ্রুত ব্যাংক থেকে বের হয়ে যেতেন।

পরবর্তী সময়ে এনায়েত খান, কাজী হাবীব, জালাল উদ্দিন তালুকদার, সাগর, সুলতান মাহমুদ মিলে চাকরিপ্রত্যাশী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে চাকরি হবে জানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করতেন। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা সেলিম মতিঝিল সাউথইস্ট ব্যাংকের বিপরীত পাশে কম্পিউটার অপারেটর ফয়েজ উল্লাহর মাধ্যমে ভুয়া চাকরির নিয়োগপত্র তৈরি করতেন। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও কোনো সদস্য রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

যেকোনো সরকারি নিয়োগ কিংবা ব্যাংকে চাকরির ক্ষেত্রে কোনো প্রকার টাকা-পয়সা লেনদেন করতে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, এ ধরনের প্রতারকের খপ্পরে পড়ার আগেই কাছের থানা পুলিশ অথবা গোয়েন্দা পুলিশকে জানাতে হবে।

বরগুনার আলো