• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর এসএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার যত ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর জলাধার ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণে প্রকৌশলীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান যে পরিকল্পনা হউক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী আইইবির ৬১তম কনভেনশন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে ধান-চাল, দিচ্ছে বিপজ্জনক বার্তা!

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৪  

দেশে ধান উৎপাদন থেকে শুরু করে পুরো বিপণন ব্যবস্থা চলে গেছে কোম্পানির হাতে। কৃষকরা এখন আর আগের মতো বীজ সংরক্ষণ করেন না। বাড়িগুলোতে খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থাও নেই বললেই চলে। এতে খাদ্য নিরাপত্তার ওপর সুদূরপ্রসারী খারাপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

অদূর ভবিষ্যতে ধান ও চাল সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যেতে পারে। এছাড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় এসব পণ্যে রাসায়নিকও ব্যবহার করা হচ্ছে, যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কারণ হবে। খাদ্য ব্যবস্থার ওপর নিজেদের একচ্ছত্র প্রভাব কাজে লাগিয়ে কোম্পানিগুলো একসময় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টাও করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

দেশের মানুষের প্রধান খাবার, প্রিয় খাবার ভাত। আবহাওয়া ও ভৌগোলিক কারণে এ অঞ্চল ধান চাষের জন্য উৎকৃষ্ট জায়গা। বলতে গেলে, সারা বছরই ধান চাষ হচ্ছে। কাজেই এ ফসলের ওপর কর্পোরেট দখলদারিত্ব ভবিষ্যতে বড়ো বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে বলে মনে করেন তারা।

এ নিয়ে জানতে চাইলে গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘কর্পোরেট দখলদারিত্বে কারণে চাল মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে। ধান ও চালের বৈচিত্র্যও হারিয়ে যাবে। যে চাল কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ব্যবহার করবে, তাতে অনেক ধরনের রাসায়নিক থাকবে। এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘এখানে তিনটি বিষয় কাজ করছে। যে চাল কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ব্যবহার করবে, সে চাল জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ তারা প্রচুর রাসায়নিক ব্যবহার করবে। এটা কেবল উৎপাদনের সময়েই না, মজুত ও প্যাকেটজাতকরণের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হবে।’

‘যেমন - প্যাস্টিসাইড, হার্বিসাইড, যেগুলো জমিতে ব্যবহার করা হয়, এগুলো বিপজ্জনক। পরবর্তীতে যখন চাল পলিশ করা হয়, তখন এবং মজুত করার সময়ও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। সব মিলিয়ে পুরো ব্যবস্থায়ই বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন পাভেল পার্থ ।

তিনি বলেন, ‘বিপজ্জনক এ খাদ্য প্যাকেটজাত হয়ে বিক্রি হচ্ছে। আবার যখন কোম্পানি চাল বিক্রি করে, তখন আমরা দেখি যে চালের বৈচিত্র্যও নষ্ট করে দেয় হয়।’

‘আমরা যদি সুগন্ধি চালের কথা বলি, চিনিগুঁড়া ও কালিজিরাসহ সেগুলোও বিভিন্ন প্রকারের আছে। আবার বরিশাল অঞ্চলের মানুষ মোটা চালের ভাত খান, চট্টগ্রামের মানুষ খান আতপ চালের ভাত, আর পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ আতপ ও ছোটো চালের ভাত খান। সারা দেশে এখনো যে চাল ও ধানের বৈচিত্র্য আছে, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে গেলে সেটা থাকবে না; বরং কোম্পানিগুলো ধান পলিশ করে মেশিনে কেটে চিকন করে ফেলতে পারে।’

এ গবেষক আরও বলেন, ‘এভাবে মেশিনে চাল প্রক্রিয়াজাত করায় চালের ওপরের আবরণের প্রোটিনগুলো পাচ্ছি না। সেটা তুলে ফেলে দেয়া হয়। এমনকি কোম্পানির বাজারজাত করা চালের ভাতের মাড়ও খাওয়া যায় না। এটা খুবই বিষাক্ত।’

চালের ওপর কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় বাজার ব্যবস্থাটাও ধসে যাবে বলে জানান গবেষকরা। পাভেল পার্থ বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যখন চালের বাজার দখল করছে, তখন আমাদের সমাজের কৃষক বা ফড়িয়া, মহাজন—সব মিলিয়ে চালের যে স্থানীয় বাজার গড়ে ওঠেছে—সেটা আর থাকবে না। সবকিছু কোম্পানির হাতে চলে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘কর্পোরেট দখলের কারণে চালটা বাণিজ্যিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। আর ধানের উৎপাদন ব্যবস্থা পুরোটাই কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত। এখানে যদি বীজের কথা বলি, কিছু হাইব্রিড বীজ চীন থেকে আসছে, কিছু আসছে ভারত থেকে। বাংলাদেশে জিএমও বীজ বিক্রি হয় না। এছাড়া আমাদের দেশীয় জাতগুলো সেভাবে নেই। আর বাংলােদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে যে বীজগুলো দেয়া হয়, সেগুলো কৃষকের কাছে পৌঁছে না।’

‘এখানে বীজ, সার, বিদ্যুতের ব্যবহার - সবই কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত। যেখানে পুরো চাষের ব্যবস্থা কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত, সেখানে ভোক্তাদের কাছে যখন খাদ্যপণ্য হিসেবে যাচ্ছে, এ নিয়ন্ত্রণ আরও বেশি একতরফাভাবে খাদ্য ব্যবস্থার ওপর চেপে বসবে।’

কৃষকের কাছ থেকে খাদ্য কোম্পানির দখলে চলে যাচ্ছে বলে জানালেন প্রাকৃতিক কৃষি আন্দোলনের সমন্বয়কারী দেলোয়ার জাহান। তিনি বলেন, ‘ভোক্তা পর্যায়ে চাল ও ধানের দাম অন্য কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। এটা বড়ো বড়ো কোম্পানির হাতে। সরকার বা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবেই বলুক না কেন, দামের নিয়ন্ত্রণ বড়ো কোম্পানিগুলোর হাতে চলে গেছে।’

পাভেল পার্থ বলেন, ‘কৃষকের কাছ থেকে খাদ্য চলে যাচ্ছে কোম্পানির দখলে। এরপর সেই চাল নিরাপদ থাকবে না জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য। আর আমরা ধান-চালের বৈচিত্র্য হারাতে বসেছি। যখন একতরফা কোম্পানির নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে খাদ্য ব্যবস্থা, তখন কৃষক সমাজ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

খাদ্যপণ্য কোম্পানির হাতে চলে যাওয়ার জন্য গ্রাম পর্যায়ে বাড়িগুলোতে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকাটাকেও একটা কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন দেলোয়ার জাহান।

তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রাম পর্যায়ে প্রতিটি বাড়িতে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের যে ব্যবস্থা ছিল, সেটা এখন আর নেই। বাড়িতে টোল, গোলা, দোল, ধানের ছোটো ছোটো আউল থাকতো আগে। এভাবে ধান সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল।’

‘সেখান থেকে কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজনে ধান থেকে চাল তৈরি করে খেত। আর এখন উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ অনেক বেশি হচ্ছে। নানাভাবে তারা ঋণগ্রস্ত থাকেন। কারণ কৃষির উৎপাদন পর্যায়টিও কর্পোরেটের দখলে।’

টাকার প্রয়োজনেই কৃষককে প্রথম স্তরেই ধান বিক্রি করে ফেলতে হয় বলে জানান দেলোয়ার জাহান। তিনি বলেন, ‘ফলে কোম্পানিগুলোই নির্ধারণ করে দেয় বাজারে ধান ও চালের দাম কেমন হবে। জাতীয় পর্যায়ে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা এতে বিঘ্নিত হয়। সেগুলো গুটি কয়েক মানুষের হাতে চলে যায়।

‘ধান ও চালে প্রতিটি বাড়িতে আগে যে স্বনির্ভরতা ছিল, সেটা চলে গেছে কোম্পানিগুলোর কাছে। উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন—সবই এখন কোম্পানির দখলে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। খাদ্য নিরাপত্তায় বিভিন্ন ঝামেলা তৈরি হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে গ্রামীণ বাড়িগুলো হচ্ছে, এগুলোতে স্টোরেজ ব্যবস্থা নেই। কোনো খাদ্যপণ্য রাখার ব্যবস্থা নেই। যে কারণে কৃষকরা সব ধান বিক্রি করে পরে দোকান থেকে কর্পোরেট চাল কিনে খাচ্ছেন।’

খাদ্যপণ্য কর্পোরেট দখলে চলে যাওয়ায় কোম্পানিগুলো ভবিষ্যতে রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টিরও চেষ্টা করতে পারে। এমনটিই মনে করছেন প্রাণ ও প্রকৃতি গবেষক পাভেল পার্থ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে কোম্পানিগুলো কোনো অঞ্চলে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ তৈরি করতে পারে।

‘এমন ঘটনা প্রচুর আছে। পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা যদি কর্পোরেট দখলে চলে যায়, তাহলে তারা চাইলে রাজনৈতিকভাবে কোন সরকার ক্ষমতায় থাকবে আর কোন সরকার থাকবে না, সে সিদ্ধান্তও নিতে পারে। এমন ঘটনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য, সেটার চাষ থেকে শুরু করে ক্রেতা-ভোক্তার কাছে আসা পর্যন্ত পুরো ব্যবস্থা কোম্পানির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। বরং কৃষক সমাজের কাছেই এর কর্তৃত্ব থাকা দরকার। কিংবা কৃষকদের সেই স্বাধীনতা থাকা উচিত যে, তারা তাদের চাষব্যবস্থা কী হবে বা স্থানীয় বাজার থেকে ধান-চাল ভোক্তাদের কাছে কীভাবে বিক্রি করবে - তা ঠিক করবে।’

এ কাজের জন্য কৃষকের পাশে অবশ্যই ক্রেতা, ভোক্তা ও নাগরিক সমাজকে দাঁড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি। এ দাবির পক্ষে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘লোকজনের ক্রয় ক্ষমতা থাকলেও কোম্পানিগুলো বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে আমাদের কিছু করার থাকে না। এর আগে, পেঁয়াজ, চিনি ও ডিম দিয়ে দেখেছি, তারা ইচ্ছা করলে কৃত্রিম সংকট, দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যহীন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তারা এটিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে পারে। এটা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য নিতান্তই হুমকিস্বরূপ।’

বরগুনার আলো