• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর এসএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার যত ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর জলাধার ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণে প্রকৌশলীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান যে পরিকল্পনা হউক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী আইইবির ৬১তম কনভেনশন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

বার্ধ্যকে প্রস্টেট সমস্যা এবং করণীয়

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০১৮  

‌‌‌প্রোস্টেট গ্রন্থি‌‌‌‌‌‌ পুরুষ দেহের একটি অংশ যা পুরুষের প্রজননতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত। কেবল পুরুষদেরই প্রস্টেট গ্রন্থি রয়েছে। এটাকে সচরাচর শুধু প্রোস্টেট হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এর আকার অনেকটা কাজুবাদামের সমান। মূত্রথলির তলদেশে থেকে যেখানে মুত্রনালীর শুরু সেখানটার চারপাশ জুড়ে এই গ্রন্থিটির অবস্থান। এর মধ্য দিয়েই মূত্র এবং বীর্য প্রবাহিত হয়। এই গ্রন্থির মূল কাজ হচ্ছে বীর্যের অন্যতম উপাদান একটি তরল আঠালো পদার্থ সৃষ্টি করা। 

কোনো কারণে যদি প্রস্টেট বড় হয়ে যায় তাহলে মুত্রনালীর মুখ সংকুচিত হয়ে আসে। ফলে মুত্র বের হতে সমস্যা হয়। বৃদ্ধির কারণ : বয়স বৃদ্ধির (৫০ বছরের অধিক) সঙ্গে সঙ্গে দেহের হরমোনেও কিছু কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে। হরমোনের এ পরিবর্তনকেই প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির (বিনাইন এনলার্জমেন্ট অফ প্রস্টেট) কারণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

সাধারণত প্রস্টেটর তিন ধরনের সমস্যা দেখা যায়: সাধারণ প্রসারন (BPH), প্রস্টেটের প্রদাহ (একে প্রস্টাইটিস-ও বলে) এবং প্রস্টেট ক্যান্সার। এই সবগুলোর ক্ষেত্রেই সাধারণত একইরকম লক্ষণ দেখা যায়। এই গ্রন্থিটি বয়স বাড়ার সাথে সাথে বেড়ে যায়। এই বৃদ্ধি কারও কারও ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করে এবং কারও কারও ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা সৃষ্টি করে ন বা সামান্য অসুবিধা সৃষ্টি করে। 

প্রস্টেট জনিত সমস্যা গুলোর মধ্যে রয়েছে :

- মূত্রনালির চারদিকে প্রস্টেটের কোষ সংখ্যা বেড়ে মূত্রনালিকে চেপে ধরে। এই কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। বিশেষত রাতে

- চিকন নালীতে প্রস্রাব হওয়া

- প্রস্রাবের প্রচন্ড বেগ পাওয়া, এমনকি মাঝেমাঝে বাথরুমে যাওয়ার আগেই প্রস্রাব করে ফেলা।

- প্রস্রাবের শেষে কিছু প্রস্রাব থলিতে রয়ে গেছে মনে হওয়া,

- প্রস্রাবের শেষে অনেকক্ষণ ধরে ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব ঝরতে থাকা এবং এক পর্যায়ে প্রস্রাব আটকে যাওয়া

- অথবা অনেকসময়  প্রস্টেট গ্রন্থির মধ্যভাগ বৃদ্ধি পেয়ে মূত্রনালির বাইরের পথকে আটকে দেয়। ফলে মূত্রথলি থেকে সহজে প্রস্রাব বের হতে পারে না।

- প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা হওয়া

- বীর্যপাতের সময় যন্ত্রণা হওয়া।

- অন্ডোকোষে ব্যাথা।

এই লক্ষণ বা উপসর্গগুলোর এক বা একাধিকটি যদি আপনার মধ্যে দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে যাতে করে কি কারণে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে সেটা নির্ধারন করা যায়।

তবে পুরুষদের মধ্যে এই বিষয়ে সবচেয়ে গুরুতর এবং ভয়াবহ রোগের সমস্যা হচ্ছে প্রোস্টেট ক্যান্সার। সারা বিশ্বে এটি পুরুষদের দ্বিতীয় প্রধান ক্যানসার। পুরুষদের প্রস্টেটগ্রথির ক্যান্সারকেই প্রস্টেট ক্যান্সার বলে। পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার অনেক বেশি। সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে পুরুষদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। এর চাইতে কম বয়সেও প্রস্টেট ক্যান্সার হতে পারে, কিন্তু সেটা সচরাচর দেখা যায় না। বয়স যতো বাড়তে থাকে, প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ততোই বেড়ে যায়। পরিবারের কারো যদি (ভাই কিংবা বাবার) প্রস্টেট ক্যান্সার থাকে তাহলেও ঝুঁকির সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেকখানি।

প্রস্টেট ক্যান্সার হলে আগে যেসব লক্ষণ বলা হয়েছে সেগুলোর সাথে আরো যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে:

- পিঠের নিচের দিকে ব্যাথা।

- লিঙ্গোত্থানে সমস্যা।

- নিতম্ব বা তার আশেপাশে নতুন করে ব্যাথা দেখা দেয়া।

- বীর্য কিংবা প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া - কিন্তু এটা খুবই কম দেখা যায়।

ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য সবগুলো উপসর্গের জন্য অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। কারণ বেশিরভাগ সময়েই প্রস্টেট ক্যান্সারের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। প্রস্টেট খুব ছোট একটা অঙ্গ হওয়ায় খুব বড় কোন ধরেনর লক্ষণ বুঝতে পারা যায় না।

তাই উপরের উপসর্গগুলোর এক বা একাধিক যদি দেখা যায় তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে পরীক্ষার জন্য যাওয়া উচিত। আমাদের দেশে প্রায়ই রোগীরা প্রাথমিক উপসর্গগুলোকে অবজ্ঞা করেন এবং হঠাৎ প্রস্রাব আটকে গিয়ে প্রস্রাবের থলি ফুলে তীব্র ব্যথা ও অস্বস্তি নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রস্রাবের থলিতে দীর্ঘমেয়াদিভাবে এক লিটারের বেশি প্রস্রাব আটকে থাকে ও পাশাপাশি ঘন ঘন একটু আধটু প্রস্রাব হয় ও ঘুমের মধ্যে প্রস্রাব হয়ে বিছানা নষ্ট হয়। এই অবস্খায় কোনো ব্যথা হয় না বলে অনেকেই এটাকে স্বাভাবিক মনে করেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে এসব রোগীই এক সময় দীর্ঘমেয়াদি কিডনি অক্ষমতার উপসর্গ নিয়ে বেহুঁশ অবস্খায় হাসপাতালে আসেন।

ডাক্তার যদি মনে করেন যে আপনার প্রস্টেট সমস্যা থাকতে পারে তাহলে আপনার মধ্যে কি কি লক্ষণ দেখা গেছে সেগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। এর সাথে সাথে তিনি কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষাও করতে পারেন। সাধারণত যেসব ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় সেগুলো হচ্ছে:

√রক্ত পরীক্ষা, একে সাধারণত পিএসএ পরীক্ষা বলে।

√ডিআরই নামে এক ধরনের শরীর পরীক্ষা।

√রক্ত এবং মুত্র পরীক্ষা।

√ইউরোফ্লোমেট্রি বা মুত্রের প্রবাহ পরীক্ষা।

√আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান। এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হবে যে আপনি ব্লাডার বা মুত্রথলি কতোটা খালি করতে পারছেন।

রোগের লক্ষণ এর মাত্রার উপর বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসা দেওয়া হয়-

১. জীবন যাত্রার মানের পরিবর্তন : মূলত জীবন যাত্রার ধরন পরিবর্তন করে বা পানি ও তরল খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে প্রস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধি রোধ করা যায়। এক্ষেত্রে ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হয় না।

২. ওষুধের ভূমিকা : সাধারণত দুই ধরনের ওষুধ প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি রোধে ব্যবহার করা হয়।

ক) আলফা ব্লকার জাতীয় ওষুধ যা মূত্রাশয়ের গ্রীবাকে ঢিলা করে। খ) হরমোন চিকিৎসা

৩. সার্জারি বা শল্য চিকিৎসা : প্রস্টেটের যে অংশ বড় হয়েছে তা এন্ডোস্কপিক যন্ত্রের মাধ্যমে কেটে প্রস্রাবের নালীকে প্রসারিত করে এর চিকিৎসা করা যায়। এই পদ্ধতিকে টি ইউ আর এফ বা ট্রান্স ইউরেথ্রাল রিসেকশন অব প্রস্টেট বলে।

৪.লেজার চিকিৎসা : প্রস্টেট সমস্যা নিরাময়ে ব্যবহৃত এই পদ্ধতি অত্যন্ত নিরাপদ। লেজার প্রস্টেটেকটমির পর মাত্র ২ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। 

√প্রোস্টেট বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রা প্রচণ্ডভাবে বিঘ্নিত হলে কিংবা বিলম্বিত উপসর্গসহ তৎসঙ্গে জটিলতা দেখা দিলে উপযুক্ত ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে হবে। এখন পর্যন্ত সর্বজনস্বীকৃত চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রোস্টেট গ্রন্থির অপসারণ।

**অপ্সারণ পরবর্তী জটিলতা:

তবে যে কোনো অপারেশনের মতো প্রোস্টেটের অপারেশনেও বেশ কিছু ঝুঁকি থাকে এবং অপারেশনের কারণে স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দিতে পারে। ঝুঁকি এই কারণে যে বার্ধক্যজনিত অনেক স্বাস্খ্যগত সমস্যা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি প্রায়ই প্রোস্টেট রোগীদের মধ্যেও থাকে যা অপারেশন ও এনেস্থিসিয়া  প্রয়োগজনিত শারীরিক-মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়া অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ ও নিয়ন্ত্রণাতীত সার্বক্ষণিক প্রস্রাব নির্গমন ইত্যাদি অবস্থা অপারেশনের পর সংকটজনক সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে প্রোস্টেট গ্রন্থির অবস্থানে মূত্রনালী শীর্ণ হয়ে পুনর্বার প্রস্রাব নির্গমনের সমস্যা কিংবা প্রস্রাব আটকে যেতে পারে। এছাড়া যৌনরোগ  পরবর্তীকালে এই রোগের জটিলতা হিসেবে দেখা দিতে পারে।

**বিলম্ব অপসারণে জটিলতা:

প্রোস্টেট অপসারণের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন হলে তা যথাসময়ে করা শ্রেয়। তা না হলে প্রস্রাব আটকে গিয়ে সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন দীর্ঘমেয়াদিভাবে প্রস্রাব আটকে যেতে পারে এবং পশ্চাৎমুখী চাপ বৃদ্ধি করে ক্রমান্বয়ে কিডনির কার্যকারিতা লোপ পেয়ে জীবনহানির কারণ হতে পারে। তা ছাড়াও মূত্রথলিতে সার্বক্ষণিক প্রস্রাব জমে থাকার কারণে মূত্রথলির সংক্রমণ ও মুত্রথলির রোগ হতে পারে। তা ছাড়া অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে প্রস্রাব করার কারণে উদর গহ্বরের চাপ বৃদ্ধি পেয়ে হার্নিয়া ও অর্শ রোগ দেখা দিতে পারে। 

চিকিৎসক এর পরামর্শ নিয়ে সঠিক সময়ে চিকিৎসা ফলপ্রসূ হবে। তাই এ বিষয়ে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসক এর কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে।
 

বরগুনার আলো