• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

আর্থ্রাইটিস ও করনীয়

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

আর্থ্রাইটিস কি:

আর্থ্রাইটিস (Arthritis) বা গিরার প্রদাহ। এটি   সন্ধিবাত নামেও পরিচিত।
আর্থ্রাইটিস বলতে সাধারণত অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টের প্রদাহকেই বোঝানো হয়। এটি নির্দিষ্ট একটি রোগ নয়। অস্থিসন্ধি, অস্থিসন্ধির আশপাশের মাংসপেশি, টেনডন ইত্যাদির অনেকগুলো অসুখ একসঙ্গে আর্থ্রাইটিস নামে পরিচিত। প্রদাহের কারণভেদে এ রোগটিকে সাধারণত ওসটিওআর্থ্রাইটিস (osteoarthritis), রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (rheumatoid arthritis), স্পন্ডাইলার আর্থ্রোপ্যাথিস (spondylar arthropathies), গেটেবাত (gout), সংক্রমণজাত আর্থ্রাইটিস (infective arthritis), জুভেনাইল আর্থ্রাইটিস (juvenile arthritis) ইত্যাদি দলে শ্রেণিভুক্ত করা হয়। পেশীর সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু নির্দিষ্ট রোগও আর্থ্রাইটিস-এর উৎপত্তি ঘটাতে পারে।
তবে সবচেয়ে বেশি হয় অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।

♦আর্থ্রাইটিস প্রাদুর্ভাব :

পশ্চিমা দেশগুলিতে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস-এর প্রাদুর্ভাব বেশি কিন্তু  বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস-এর মধ্যে বাংলাদেশে ওসটিওআর্থ্রাইটিসই বেশি ঘটতে দেখা যায়।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস অধিকাংশ ক্ষেত্রে কষ্টদায়ক। সাধারণত আঙুলের সন্ধি, কবজি এবং পায়ের সন্ধিতে এ রোগের সৃষ্টি হয়। তবে দেহের যে কোনো সন্ধিই এতে আক্রান্ত হতে পারে। এটি সন্ধির ক্রমবর্ধনশীলতায় জটিলতা সৃষ্টি করে এবং মারাত্মক শারীরিক অক্ষমতার কারণ ঘটায়। রোগটি তুলনামূলকভাবে অল্প বয়স্ক মানুষের দেহে বেশি দেখা যায়; তবে যে কোনো বয়সী মানুষই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের সংঘটন মাত্রা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রায় চার গুণ বেশি।
প্রাথমিকভাবে এ রোগ সাধারণত একটি অথবা দুটি স্থানের সন্ধিকে আক্রমণ করে এবং ধীরে ধীরে অন্যান্য অস্থিসন্ধিতেও ছড়িয়ে পড়ে।এর ফলে ক্রমে ক্রমে সন্ধিস্থানগুলি দীর্ঘস্থায়ী অবসন্নতার শিকার হয়। এ ছাড়া অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যথা, জড়তা, ক্লান্তি, অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ এবং সংশ্লিষ্ট সন্ধির নড়াচড়া করার অক্ষমতা। ডায়াবেটিক ও বয়স্ক লোকদের মধ্যে সংক্রমণজাত আর্থ্রাইটিস বেশী। রক্তে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিক (uric acid) এসিড গেটেবাতের (gout) জন্যে  দায়ী। 
এ রোগের উৎপত্তির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে বয়স প্রধানত বিবেচ্য। এছাড়া ভারী ওজনের লোকেরা এ রোগে আক্রান্ত হয় বেশি।

♦আর্থ্রাইটিস এর উপসর্গ:

আর্থ্রাইটিস-এর প্রধান উপসর্গ হলো ব্যথা, প্রাতঃকালীন জড়তা, চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা বা অসুবিধা ইত্যাদি। যেসব সন্ধি সাধারণত আক্রান্ত হয় সেগুলি হলো হাঁটু, হাত, কোমর, এবং মেরুদন্ডের কটিদেশ ও ঘাড় (spondylosis)| এক্সরে পরীক্ষার মাধ্যমেও এ রোগ নির্ণয় করা যায়। সাধারণত তিন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি এ রোগের উপশমে ব্যবহার করা যায়, যেমন ব্যথারোধক ঔষধ, ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি এবং কিছু মারাত্মক অবস্থায় শল্য চিকিৎসা।
অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের কারণ, রিস্ক ফ্যাক্টও আলাদা ধরনের। সাধারণত অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যথা হয় কোমর, হাঁটু ও হাতে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে হাতের কবজিসহ শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যথা বেশি হয়, তুলনামূলকভাবে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা কম হয়।

♦অস্টিওআর্থ্রাইটিস:

সাধারণত অস্টিওআর্থ্রাইটিস ধীরে ধীরে হয়। প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম করলে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা হয়, অস্থিসন্ধি ফুলে যায় ও ব্যথা করে, অস্থিসন্ধির জড়তা দেখা দেয় (সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার পর বা দীর্ঘসময় বসে থেকে ওঠার সময়), ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রমের পর অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা হয়, অস্থিসন্ধিতে কড়মড় শব্দ হয়।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস বেশি হয় হাঁটুর জয়েন্টে। উঁচু কোথাও উঠতে গেলে হাঁটুতে বেশি চাপ লাগে। হাতে যদি ভারী কোনো বোঝা থাকে, তবে তা বহন করা কষ্টকর হয়। হাঁটু ফুলে যায়।
কোমরে হলে নড়াচড়া কঠিন হয়। বিশেষ করে শরীরের নিচের অংশ। ব্যথা কোমরের সঙ্গে সঙ্গে কুঁচকি, উরু এমনকি হাঁটুতেও হতে পারে।

হাতের মধ্যে বৃদ্ধাঙুলে বেশি হয়। আঙুলে ব্যথা হয়, ফুলে যায়, ঝিমঝিম করে, জয়েন্টের আশপাশে গোটার মতো গুটি হয়।

মেরুদণ্ডে হলে ঘাড় ও কোমরে উভয় স্থানে ব্যথা হতে পারে। কখনো কখনো হাত-পা ঝিমঝিম করে।

♦যারা ঝুঁকিপূর্ণ:

১. যাদের বয়স বেশি, যেমন বয়স ৬৫-র বেশি হলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। 
২. ৪৫ বছর বয়সী পুরুষদের এবং ৪৫ পরবর্তী নারীদের এটি বেশি হয়। 
৩. অস্থিসন্ধিতে যেকোনো ধরনের আঘাত পেলে অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ে। এ কারণে যারা পেশাগত কারণে শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন বা আঘাতের ঝুঁকিতে থাকেন তাদের ঝুঁকি বেশি। 
৪. যাদের ওজন বেশি, অস্টিওআর্থ্রাইটিস তাদের বেশি হয়। সাধারণ স্থূল শরীরের মানুষের হাঁটুতে রোগটি বেশি দেখা দেয়।
৫. কিছু ক্ষেত্রে বংশগত কারণেও অস্টিওআর্থ্রাইটিস হতে দেখা যায়।

♦রোগ নির্ণয়:

রোগের ইতিহাস ও রোগের ধরন দেখে রোগ নির্ণয় করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। যেমন এক্স-রে, জয়েন্ট অ্যাসপিরেশন ইত্যাদি।

♦রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস:

এটি অটোইমিউন অসুখ। এতে শরীরের নিজস্ব রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার কারণেই কিছু টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অস্থিসন্ধির বহিরাবরণীতে প্রদাহ হয়। এ কারণে অস্থিসন্ধি ও এর আশপাশে ব্যথা হয়, জড়তা তৈরি হয়, ফুলে যায়, লাল হয়ে যায় এবং শরীরে জ্বরজ্বর অনুভূতি হয়। এতে অস্থিসন্ধির আকারের বিকৃতিও ঘটে। সময়ের সঙ্গে এটি তীব্র হতে থাকে। মাঝেমধ্যে ব্যথা ও ফোলা আপনিতেই কমে যায়, আবার বাড়ে।

♦লক্ষণ:

রোগটি দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক। তাই কখনো কখনো লক্ষণ প্রকাশ পায়, আবার কিছুদিন কোনো লক্ষণই থাকে না।

♦সাধারণ লক্ষণ :

১. ঘুম থেকে ওঠার পর অস্থিসন্ধিসহ শরীরের কিছু অংশে ব্যথা ও জড়তা থাকে।

২. হাতের আঙুল, কনুই, কাঁধ, হাঁটু, গোড়ালি ও পায়ের পাতায় বেশি সমস্যা হয়।

৩. সাধারণত শরীরের উভয় পাশ একসঙ্গে আক্রান্ত হয়। যেমন- হাতে হলে দুই হাতের জয়েন্টই একসঙ্গে ব্যথা করে, ফুলে যায় ইত্যাদি।

৪. শরীর দুর্বল লাগে, জ্বরজ্বর অনুভূতি হয়। ম্যাজম্যাজ করে।

৫. কারো কারো ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে এক ধরনের গুটি দেখা যায়, যা ধরলে ব্যথা পাওয়া যায় না।

♦প্রতিরোধ:

১. শারীরিক তৎপরতা বাড়ানো; যেমন- বহুতল ভবনে ওঠার সময় মাঝেমধ্যেই লিফট ব্যবহার না করে সিড়ি ব্যবহার করা এবং যানবাহনে ওঠার আগে অন্তত ৫০০ মিটার পথ পায়ে হেঁটে যাওয়া।

২. মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের ব্যায়াম করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

৩. মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশনের মতো কাজের চর্চা করা।

৪. শরীরের জয়েন্টগুলোকে নতুনভাবে জখম হতে না দেওয়া এবং ইতোমধ্যেই জখমে আক্রান্ত হয়ে থাকলে তা দ্রুত সারিয়ে তোলা।

৫. প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়া। ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া। ভিটামিনযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া।

৬. যে কোনো ছোটখাটো জখমের চিকিৎসা করানো।
৭. ধুমপান না করা। মদপান না করা। কারণ মদ হাড়ের স্বাস্থ্য ও কাঠামো দূর্বল করে দেয়।

৮. নিয়মিত দুধ পান করুন। তবে ল্যাকটোজ জাতীয় খাদ্য উপাদান হজমে সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে ক্যালসিয়াম ও ব্রোকোলি জাতীয় খাবার বেশি খান।

৯. মেনোপোজ পরবর্তী নারীদের জন্য হরমোন প্রতিস্থাপন, অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১০. সঠিক সাইজের ও নরম জুতা পরতে হবে।

১১. প্রদাহসৃষ্টিকারী খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রায়ই দেখা যায় যে, লবন, চিনি, মিষ্টি, মদ, ক্যাফেইন, প্রক্রিয়াজাতকৃত মাংস, সাধারণ রান্নার তেল, ট্রান্স ফ্যাট ও লাল মাংস ক্যান্সার ও হৃদরোগসহ অসংখ্য রোগের জন্ম দেয়।

১২. ঠাণ্ডায় আর্থ্রাইটিসের ব্যথা ও সমস্যা বেড়ে যায়, তাই ঠাণ্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে। কুসুম গরম পানির সেঁক ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী। কুসুম গরম পানিতে গোসল করা যেতে পারে।

♦চিকিৎসা:

আর্থ্রাইটিস জোড়ার রোগ ও বিভিন্ন প্রকার আর্থ্রাইটিস রয়েছে। যদি কারও এ জাতীয় সমস্যা হয় তা হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক এ ক্ষেত্রে কিছুু পরীক্ষা করাতে পারেন। যেমন- রক্ত পরীক্ষা, সেরোলজি পরীক্ষা, এক্সরে। আর্থ্রাইটিসের প্রকারভেদ অনুযায়ী কিছু ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। যেমন-ব্যথানাশক এনএসএআইডিএস, ডিজিজ মডিফাইং ওষুধ, ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম। আর্থ্রাইটিসে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা। এতে অনেকাংশে রোগীর সমস্যা ব্যথা-বেদনা দূর হয় এবং রোগী স্বাভাবিক চলাফেরা ও কাজকর্ম করতে পারে।

ইলেকট্রোমেগনেটিক রেডিয়েশনে, আল্ট্রাসাইন্ড থেরাপি, ইন্টারফেরেন সিয়াল থেরাপি, বিভিন্ন নিয়মমাফিক কৌশলগত ব্যায়াম, মেনুয়াল থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীর সমস্যা বহুলাংশে লাঘব ও অস্থিসন্ধি স্বাভাবিক হয় এবং রোগী কর্মক্ষমতা ফিরে পায়।

-ফেরদৌস আহমেদ
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল

বরগুনার আলো