• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি

গাঁজায় মিটবে ডলার সংকট— আশাবাদ পাকিস্তানের

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৪  

শিল্পে ব্যবহারের জন্য ২০২০ সালে গাঁজা বৈধ করেছিল পাকিস্তান। চার বছর পর দেশটি গাঁজা ব্যবসার জন্য একটি আইনি কাঠামো তৈরি করতে যাচ্ছে। ধুকতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে গাঁজার ক্রমবর্ধমান বাজারকে পুঁজি করার চেষ্টা করছে দেশটি।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে শিল্প ব্যবহারের জন্য গাঁজা অনুমোদন করেছিল পাকিস্তান সরকার। কিন্তু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এ বিষয়ে কোনো  নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি দেশটি। গত ফেব্রুয়ারিতে গাঁজা নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য একটি আদেশ দেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি।

পাকিস্তানের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বিনিয়োগ আকর্ষণ প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়ে থাকে দেশটির স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিল। এই কাউন্সিলের একজন কর্মকর্তা নিক্কেই এশিয়াকে গাঁজা নীতিমালা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা এই উদ্যোগের বিষয়ে খুব আন্তরিক। একটি নীতিমালা তৈরির কাজ খুব দ্রুত গতিতে চলছে।

এই কর্মকর্তা জানান, পাকিস্তানে নতুন জোট সরকার গঠন হয়েছে। সরকার নীতিমালা প্রণয়নের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করছে। নীতিমালায় থাকবে কৃষক ও বিক্রেতাদের লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা এবং চাষের জন্য অঞ্চল নির্ধারণের মতো বিষয়।

গাঁজার বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের জন্য গাঁজা উৎপাদনের অনুকূল আবহাওয়ার সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে আশাবাদী পাকিস্তান। ভারতীয় গবেষণা সংস্থা মার্কেটসেন্ডমার্কেটসের মতে, ২০২২ সালে গাঁজার বৈশ্বিক বাজারের আকার ছিল ২৭.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। বাজারটি এত দ্রুত বাড়ছে যে, ২০২৭ সালে আকার হবে ৮২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। পাকিস্তান এই বিশাল বাজারে রফতানি ও রাজস্ব আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজছে। গাঁজা রফতানি ও রাজস্ব থেকে আয় দিয়ে পাকিস্তান বৈদেশিক মুদ্রা সংকট কাটিয়ে উঠার ব্যাপারে ভাবছে। বর্তমানে দেশটিকে বাজেট বাস্তবায়নের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে বেলআউট ও বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

দেশটির উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে আফগান সীমান্তের কাছাকাছি বুনো অঞ্চলে ব্যাপক গাঁজা চাষ হয়। সেখানে খোলামেলা বিক্রি হয় গাঁজা। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় গাঁজার দোকানগুলো বেশ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া-উল-হক ১৯৮০ দশকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগানের মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্বযুদ্ধের সময় গাঁজা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন।

গাঁজায় পাওয়া যায় টেট্রাহাইড্রোকানাবিনল (টিএইচসি) এবং ক্যানাবিডিওল (সিবিডি)। এই যৌগগুলো দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা যেমন ফাইব্রোমায়ালজিয়া এবং মৃগী রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। নতুন আইনের কারণে চিকিৎসায় গাঁজা ব্যবহারের পথ প্রশস্ত হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে গাঁজার আঁশ দড়ি, কাপড়, কাগজ এবং নির্মাণ সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

তবে গাঁজার যৌগ টিএইচসি নেশা তৈরি করে, ফলে এর অপব্যবহার হওয়ারও আশঙ্কা আছে। তাই নীতিমালায় কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হচ্ছে। গাঁজা শিল্পের কোম্পানিগুলোকে গাঁজার অপব্যবহারের শাস্তি হিসেবে দুই কোটি পাকিস্তানি রুপি পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তির ক্ষেত্রে জরিমানা ১০ লাখ রুপি পর্যন্ত রাখা হচ্ছে।

দেশটির রাওয়ালপিন্ডি শহরের চিকিৎসক রশিদ ইকবাল নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, ২০২২ সালে এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মারিজুয়ানা বৈধ করেছিল থাইল্যান্ড। এর পর থেকে দেশটিতে মারিজুয়ানার বিনোদনমূলক ব্যবহার ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে গেছে। গাঁজার এমন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে শুধুমাত্র প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে অর্থাৎ ওষুধ হিসেবে গাঁজার ক্রয়ের বিধান রাখতে পারে পাকিস্তান।

ডা. রশিদ তার রোগীদের সিবিডি তেল ব্যবহারের জন্য প্রেসক্রিপশন দেন। তিনি তার দেশে গাঁজা বৈধকরণের পক্ষে। তিনি বলেন, ওভার দ্য কাউন্টার হিসেবে নয়, গাঁজা থেকে যে ওষুধ তৈরি হয় তা কেবল প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে বিক্রি উৎসাহিত করা উচিত। ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটি অফ পাকিস্তানের এটি নিশ্চিত করাতে হবে।

কেয়ারগিভার হিসেবে চাকরি করেন আদনান আমিন। তিনিও গাঁজা বৈধের পক্ষে। তিনি বলেন, গাঁজার অপব্যবহার সম্ভব, কিন্তু এফিড্রিন (নিম্ন রক্তচাপের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত) একটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। এই ওষুধেরও অপব্যবহার হয়।

পাকিস্তানের প্রচলিত ওষুধে যেসব রোগীদের কাজ হয় না, তারা বিদেশ থেকে বা অবৈধ স্থানীয় বিক্রেতাদের কাছ থেকে সিবিডি তেল এবং টিএইচসি পণ্য কিনছে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি থেকে পাকিস্তানের মাদকবিরোধী বাহিনী প্রধান শহরগুলোতে অবৈধ গাঁজা উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান জোরদার করেছে। গাঁজার সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংসে ব্যাপক অভিযান চালানো হচ্ছে।

সরকার-অনুমোদিত সাপ্লাইয়ের কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় সিবিডি ও টিএইচসি পণ্যের উপর নির্ভরশীল রোগীরা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

গাঁজা নিয়ে কাজ করেন করাচির এক্টিভিস্ট আমির ধেধী। তিনি জানান, রোগীদের চিকিৎসায় বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করতে কাঁচামাল হিসেবে কৃষকদের কাছ থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে তেল তৈরি করতেন। তার কাছে গাঁজা থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে মাদকবিরোধী পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। পরে মার্চে তার বিরুদ্ধে আনা মাদকের অভিযোগগুলো খারিজ হয়ে যায়।

কিন্তু তার ব্যবসায় ব্যাঘাতের কারণে কিছু রোগী বিপদে পড়েন। তার একজন ক্রেতা হলেন কেয়ারগিভার আমিন। তিনি নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, তার চার বছর বয়সী মেয়ে একজন রোগী। সে ধেধীর তৈরি টিএইসি তেলের উপর নির্ভরশীল। এই তেল কিছু কিছু আমদানি করা তেলের চেয়েও বেশি কার্যকর।

আমিন বলেন, আমার মেয়ের দিনে ১০০ বার খিঁচুনি হতো। ওই তেল ব্যবহারের কারণে বেশ কয়েকদিন কোনো খিঁচুনি হয়নি। কঠোর মার্কিন নীতিমালার কারণে আমেরিকান ওষুধ পাওয়া যায় না। ধেধীর তেলের সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার মেয়ের খিঁচুনি আবার হচ্ছে।

ধেধী দাবি করেছেন, পাকিস্তানজুড়ে তার এক হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছেন। গ্রাহকদের মধ্যে সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারাও রয়েছেন। তার অনেক রোগীকে দেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু চিকিৎসক এই তেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। তেল কেনার সামর্থ্য নেই এমন রোগীদের বিনামূল্যে টিএইচসি তেল সরবরাহ করতেন তিনি।

ধেধী বলেছেন, গাঁজা নীতিমালা তৈরি হলে সরকার লাইসেন্স দেবে। যখনই এই সুযোগ আসবে তখন তিনি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন। তিনি বেলুচিস্তান এবং খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে গাঁজা চাষের জন্য লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন।

গাঁজা বিষয়ে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন অন্যান্য শিল্পের উদ্যোক্তারাও। ফয়সালাবাদভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচারের সহযোগী অধ্যাপক আসাদ ফারুক বলেন, তার প্রতিষ্ঠান বিষমুক্ত শণ উৎপাদন করে থাকে। তিনি নিক্কেইকে বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি লাহোরভিত্তিক ডেনিম মিলের জন্য একটি গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে ফাইবার আহরণের জন্য ক্যাম্পাসে উচ্চ নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে বিষমুক্ত শণ উৎপাদন করছে। তবে এই উৎপাদনের আকার যথেষ্ট নয়।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী টেকসই ফ্যাশনের চল রয়েছে। শণকে সবচেয়ে টেকসই ফাইবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ শণের জন্য অতিরিক্ত কীটনাশক, সার বা জলের প্রয়োজন হয় না এবং মাটির উর্বরতা বাড়ায়।

টেকসই টেক্সটাইলের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে এবং স্থানীয় তুলা ফলনের ঘাটতি মেটাতে পাকিস্তান ২০২০ সালের পর থেকে তুলার পাশাপাশি শণও আমদানি শুরু করে। ফারুক বলেন, পাকিস্তান স্থানীয়ভাবে শণ উৎপাদনের মাধ্যমে ৭০ থেকে ৮০ লাখ বেল তুলার ঘাটতি মিটিয়ে উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচাতে পারে।

বরগুনার আলো