• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী

আবেগে নয়, জাকাত আদায় করতে হবে মাসআলা জেনে

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৪  

জাকাত একটি আর্থিক ইবাদত। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় হিজরির শাওয়াল মাসে জাকাত ফরজ হওয়ার বিধান নাজিল হয়। কোরআনে কারিমে ৩২ জায়গায় নামাজের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তায়ালা জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া জাকাত শব্দের সমার্থক ইনফাক, ইতআম ও সাদাকা ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমেও জাকাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে বহুবার। এজন্য ফুকাহায়ে কেরাম গুরুত্বের বিবেচনায় স্তম্ভ পাঁচটির বিন্যাস করতে গিয়ে ঈমান ও নামাজের পরপরই তৃতীয় স্থানে রেখেছেন জাকাতকে। এরপর ধারাবাহিকভাবে সাওম ও হজ।  ইসলামে জাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম। দারিদ্র্য বিমোচনে এর ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শরিয়তের যেকোনও বিধান পালনের রয়েছে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি। যথাযথ পদ্ধতিতে বিধানটি পালিত না হলে তা হয় ত্রুটিপূর্ণ। কোনও কোনও সময় নষ্ট বা বাতিল হয়ে যায়। ব্যক্তির জিম্মায় থেকে যায় অনাদায়। জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য যেমন রয়েছে কিছু শর্ত, ফরজ হওয়ার পর আদায়ের মাধ্যমে দায় মুক্তির জন্যও কিছু শর্ত রয়েছে। আদায়ের সময় সেগুলো বিবেচনা না করলে জাকাত আদায় হয় না। জাকাত, সাদাকাতুল ফিতর, মান্নত, কুরবানির পশুর চামড়া বা কোনও অংশের মূল্য এবং শরিয়তের কোনও কোনও বিধান লঙ্ঘনের অপরাধে কাফফারা (প্রায়শ্চিত্য) স্বরূপ যেসব অর্থ ওয়াজিব হয় সেগুলো ব্যয়ের নির্দিষ্ট খাত আছে। খাতগুলো আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে বলে দিয়েছেন সুস্পষ্টভবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘জাকাত হলো কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য, এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা তাওবা : ৬০]   অবশ্য মুআল্লাফাতে কুলুব তথা চিত্ত আকর্ষণের উদ্দেশ্যে অমুসলিমদের জাকাত দেওয়ার বিধান পরবর্তি সময়ে রহিত হয়ে গেছে। ফুকাহায়ে কেরাম কুরআনের এই আয়াত ও সুন্নাহের আলোকে গবেষণা করে বলেছেন, ‘জাকাত, সদাকাতুল ফিতর, মান্নত, কাফফারা কোরবানির পশুর চামড়া বা কোনও অংশের মূল্য কেবল উপর্যুক্ত খাতগুলোতেই ব্যয় করতে হবে। পাশাপাশি উল্লিখিত সাত শ্রেণির কোনও একজন বা একাধিক ব্যক্তিকে জাকাতের মালের মালিক বানিয়ে দেওয়ার শর্তও আরোপ করেছেন উলামায়ে কেরামরা। শুধু উপকার ভোগের সুযোগ প্রদান যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে অনেকেই আবেগ দ্বারা ধোঁকা খায়। শরীয়তের মাসআলা না জেনে কেবল আবেগের বশবর্তী হয়ে অখাতে জাকাত দিয়ে দেয়। মনে রাখতে হবে, জাকাত যথা খাতে পৌঁছানো নিশ্চিত করাও জাকাত আদায়কারীর দায়িত্ব। যেনতেন স্থানে দিয়ে দিলে জাকাত আদায় হবে না।  জাকাত, ফেতরা ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় প্রদেয় অর্থের খাত নির্ধারণে আবেগতাড়িত যেসব ভুল হয়ে থাকে, সেগুলোর কয়েকটি নিচে আলোচনা করা হলো। ১। জাকাত, সদকা, মান্নত ইত্যাদির অর্থ মসজিদে দেওয়া মসজিদ আল্লাহর ঘর। নিঃসন্দেহ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জায়গা। মসজিদের প্রতি প্রত্যেকটি মুসলিমের রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা ও আবেগ। শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে মসজিদের প্রতি কিছু দায়িত্বও রয়েছে প্রতিটি মুসলিমের। মসজিদের যেকোনও প্রয়োজন পূরণে মুসলমান সর্বদায় এগিয়ে আসবে, এটাই কাম্য। তবে মসজিদের সব দান-অনুদান হতে হবে সাধারণ। মসজিদ যেহেতু জাকাতের খাত নয় এবং সাধারণত মসজিদে কোনও দরিদ্র তহবিলও থাকে না; তাই জাকাত, মান্নত ইত্যাদির টাকা মসজিদে প্রদান করা এবং মসজিদের কোনও প্রয়োজনে ব্যয় করা শরিয়তে অনুমোদিত নয়। এর মাধ্যমে জাকাত, মান্নত, কাফফারা ইত্যাদি আদায় হবে না।  ২। এতিম হওয়া মাত্রই জাকাতের উপযুক্ত মনে করা শরিয়তের পরিভাষায় এতিম বলা হয় ওই অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু বা কিশোরকে যার বাবা মারা গেছেন। এতিমের প্রতি সদয় হওয়ার নির্দেশ কোরআন ও সুন্নার অসংখ্য জায়গায় এসেছে। এতিমের মাথায় হাত বোলানো তার প্রতিপালন অনেক সওয়াবের কাজ। কিন্তু ইয়াতিম মাত্রই জাকাতের উপযুক্ত খাত নয়। ইয়াতিম সন্তান পিতার ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গে পিতার পরিত্যাক্ত সম্পদের উত্তরাধিকার হয়ে যায়। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ এতিমের প্রয়োজনাতিরিক্তটুকু যদি জাকাতের নেসাব সমপরিমাণ হয়, তাহলে সেই এতিমকে জাকাত দেওয়া যাবে না। ৩। বিধবাকে জাকাত দেওয়া বিধবার প্রতি সদাচরণের কথা হাদিসে পাওয়া যায়। সমাজের বেশিরভাগ মানুষেরই করুণার দৃষ্টি থাকে বিধবাদের প্রতি। বিষয়টা অবশ্যই ভালো এবং প্রশংসনীয়। কিন্তু বিধবা হলেই কেউ জাকাত ফেতরা গ্রহণের উপযুক্ত হয়ে যায় না। বিধবার যদি স্বোপার্জিত সম্পদ থাকে কিংবা স্বামী বা পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত এমন সম্পদ থাকে, যা মৌলিক প্রয়োজন পূরণের পরও জাকাতের নেসাব সমপরিমান হবে; এমন বিধবাকে জাকাত-ফেতরা দেওয়া জায়েয হবে না। এমনকি তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকেও জাকাত দেওয়া জায়েয নেই। ৪। লাশ কাফন-দাফন বা কবরস্থানের জমি কেনার জন্য জাকাত দেওয়া বেওয়ারিশ লাশের কাফন-দাফনের জন্য অনেক সময় জাকাতের অর্থ খরচ করা হয়। কোনও কোনও এলাকায় কবরস্থানের জায়গা কেনার উদ্দেশ্যেও জাকাতের টাকা সংগ্রহ ও ব্যয় করা হয়। লাশের কথা বা কবরস্থানের কথা শুনলেই অনেকে আকেগপ্রবণ হয়ে যায়। ভাবে, জাকাত সদকা ব্যয়ের এরচেয়ে সুন্দর ও উপযুক্ত জায়গা আর কী হতে পারে! আবেগে মন মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে জাকাত ফেতরার টাকা এসকল খাতে দিয়ে দেয়। এগুলো ভুল আমল। এর দ্বারা জাকাত আদায় হয় না। লাশের কাফন দাফনে সহযোগিতা করার জন্য কিংবা কবরস্থানের জমি ক্রয়ের জন্য আপনার সাধারণ টাকা থেকে দান করতে হবে। জাকাতের টাকা ব্যয়ের অনুমতি নেই। ৫। মৃতব্যক্তির ইসালে সাওয়াবের জন্য জাকাত দেওয়া জাকাতের অর্থ মৃত ব্যক্তির ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে এভাবে দেওয়া যে, এর দ্বারা খানা পাকিয়ে ফকীরদের খাওয়ানো হবে বা অভাবীদের কাপড় দেওয়া হবে জায়েয নেই। বরং নিজের পক্ষ হতেই জাকাতের নিয়তে ওই অর্থ উপযুক্ত ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে। এর সওয়াব কোনও মৃত ব্যক্তিকে পৌঁছানো যাবে না। [ফতওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/২০৪, আহকামে জাকাত : ১১৮] আরেকটি জরুরি বিষয়। জাকাত আদায়ের সময়ের ব্যাপারে আমাদের অধিকাংশের ধারণা হলো; রমজান মাসই জাকাত আদায়ের মাস। বিশুদ্ধ মতানুসারে, জাকাত আদায়ের জন্য শরিয়তের পক্ষ থেকে কোনও নির্ধারিত সময় নেই। বছরান্তে ব্যক্তির উপর জাকাত আদায় ওয়াজিব হয় ওই তারিখে বা দিনে যে তারিখে বা দিনে ব্যক্তি ‘সাহেবে নিসাব’ তথা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছিল। এই হিসাবে সকলের উপর জাকাত আদায় ওয়াজিব হওয়ার তারিখ অভিন্ন নয়। বরং ভিন্ন ভিন্ন। যে ব্যক্তি যে সময় নেসাবের মালিক হয়েছে; এক বছর পর সেই সময়ে জাকাত আদায় করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই সম্ভব হলে বিলম্ব না করে সেই তারিখেই জাকাত আদায় করবে। রমাদানের অপেক্ষায় বসে থাকা উচিত নয়। কারণ জাকাত দরিদ্রদের হক। আর দারিদ্র্য কেবল রমাদান ধরেই আসে না। রমাদান ছাড়াও গরীবের প্রয়োজন থাকে। তাছাড়া আদায় ফরজ হয়ে যাওয়ার পর রমাদানের অপেক্ষায় বিলম্ব করা অবস্থায় ইন্তেকাল হয়ে গেলে আল্লাহর দরবারে ব্যক্তি জাকাত অনাদায়কারী হিসেবে বিবেচিত হবে। এর জন্য পরকালে শাস্তি ভোগ করতে হবে।  হযরত উকবাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি মদিনায় রাসুলের (সা.) পেছনে আসরের সালাত আদায় করলাম। সালাম ফেরানোর পর তিনি তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে যান এবং মুসল্লিদের ডিঙিয়ে তার সহধর্মিণীগনের কোনও একজনের কক্ষে গেলেন। তার এই দ্রুততায় মুসল্লিরা ঘাবড়িয়ে গেলেন। নবী (সা.) তাদের কাছে ফিরে এলেন এবং দেখলেন যে, তিনি সাহাবিদের বিস্মিত। বিষয়টি বুঝতে পেরে বললেন, আমাদের নিকট রাখা জাকাতের একটি স্বর্ণের টুকরার কথা আমার মনে পড়ে গেছে। এটি আমার কাছে থাকা অবস্থায় আমি রাত্রিযাপন করি, তা আমার কাছে পছন্দনীয় নয়। তাই আমি সেটার বণ্টনের নির্দেশ দিয়ে আসলাম। [বুখারি : ৮৫১] আল্লাহ তায়ালা আমাদের মাসয়ালা বুঝে সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুক।   বরগুনার আলো