• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

দুনিয়া ও আখেরাতে নামাজীদের রয়েছে পুরস্কার, অবহেলায় শাস্তি

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করবে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবে। 

এ জন্য আল্লাহ তায়ালাও তাঁর বান্দাকে পাপরাশি ক্ষমা করে জান্নাত দানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন। উভয় জগতের সফলতার জন্য নামাজের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য আরো কিছু নির্দেশ এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমরা যদি নামাজ পড়, জাকাত দাও, আর আমার রাসূলদের বিশ্বাস কর ও তাদেরকে সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তাহলে তোমাদের পাপরাশি অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয় তোমাদেরকে বেহেশতে প্রবেশাধিকার দান করব; যার পাদদেশে নদীমালা প্রবাহিত। এরপরও তোমাদের মধ্যে যে অবিশ্বাস করবে সে সরল পথ হারাবে। (সূরা মায়িদা : আয়াত ১২)

রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ঠিকমত আদায় করবে, আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে সম্মানিত করবেন। (১) তার অভাব দূর করবেন,(২) কবরের আযাব থেকে মুক্তি দেবেন (৩) ডান হাতে আমলনামা দেবেন (৪) বিজলির ন্যায় পুরসিরাত পার করাবেন ও (৫) বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

আর যে ব্যক্তি নামাজে অবহেলা করবে আল্লাহ তাকে ১৪টি শাস্তি দেবেন। দুনিয়াতে পাঁচটি, মৃত্যুর সময় তিনটি, কবরে তিনটি, কবর থেকে উঠানোর সময় তিনটি।

দুনিয়াতে পাঁচটি: (১) তার হায়াত থেকে বরকত কমে যাবে (২)চেহারা থেকে নেককারের নির্দশন লোপ পাবে (৩) তার কোনো নেক আমলের প্রতিদান দেয়া হবে না (৪) তার কোনো দোয়া কবুল হবে না (৫) নেককারদের  দোয়া থেকে সে বিরত হবে।

মৃত্যুর সময় তিনটি: (১) সে অপমানিত হয়ে মারা যাবে (২) অনাহারে মারা যাবে (৩) এমন পিপাসার্ত হয়ে মারা যাবে, তাকে পৃথিবীর সব সমুদ্রের পানি পান করালেও তার পিপাসা মিটবে না।

কবরে তিনটি:  (১) কবর সংকীর্ণ হয়ে এত জোরে চাপ দেবে যে, তার পাঁজরের একদিকের হাড় বিপরীতে ঢুকে যাবে (২) কবরে আগুন ভর্ভি করে রাখা হবে, যে আগুনের জ্বলন্ত কয়লায় সে রাতদিন জ্বলতে থাকবে (৩) তার কবরে এমন ভয়ংকর বিষধর সাপ রাখা হবে, যা তাকে বিলম্বে নামাজ পড়ার কথা উল্লেখ করে কিয়ামত পর্যন্ত দংশন করতে থাকবে।

পুনরুত্থানের সময় তিনটি: (১) কঠোর ভাবে হিসেব নেয়া হবে (২) আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন (৩) জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

অপর বর্ণনায় আছে, বিচার দিবসে তার কপালে তিনটি কথা লেখা থাকবে: (১) হে আল্লাহর হক নষ্টকারী (২) হে আল্লাহর অভিশপ্ত (৩) তুমি যেমন আল্লাহর হক নষ্ট করেছ, তেমনি আজকে আল্লাহর রহমত থেকে বিরত হবে।

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, হাশরের দিন এক ব্যক্তিকে আল্লাহর সামনে দাঁড় করানো হবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের নির্দেশ দেবেন। সে আরজ করবে, হে আল্লাহ! কী কারণে এ নির্দেশ? আল্লাহ বলবেন, নামাজ নির্ধারিত সময়ের পরে পড়া এবং আমার নামে মিথ্যা শপথ করার জন্য।

একদা রাসূল (সা.) সাহাবাদের জন্য দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমাদের কাউকে বিরত ও হতভাগা করো না, অতঃপর উপস্থিত সাহাবাদেরকে রাসূল (সা.) প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান? কে বিরত ও দুর্ভাগা? সাহাবারা রাসূল (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ!কে সে ব্যক্তি? তিনি বললেন, নামাজ ত্যাগকারী।

বর্ণিত আছে, বনী ইসরাঈরের এক মহিলা হজরত মূসা (আ.) এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর নবী! আমি এক জঘন্য গুনাহ করেছি, অতঃপর তা থেকে আল্লাহর কাছে তওবাও করেছি। আপনি দোয়া করুন আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করে দেন এবং আমার তওবা কবুর করেন। হজরত মূসা (আ.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কী পাপ করেছ’ সে বলল, আমি যিনায় লিপ্ত হয়ে একটি সন্তান প্রসব করেছি এবং তাকে হত্যা করে ফেলেছি। হজরত মূসা (আ.) বললেন, ‘হে পাপিষ্ঠ এ মূহুর্তে এখান থেকে চলে যাও। নচেৎ আকাশ থেকে আগুন এসে আমাদেরকেও জ্বালিয়ে ফেলবে।’ 
মহিলাটি ভগ্ন হৃদয়ে চলে গেল। তখনি হজরত জিবরাঈল (আ.) এসে বললেন, ‘হে মূসা (আ.)! আল্লাহ জানতে চেয়েছেন, কী কারণে আপনি এ তওবাকারিণীকে দূর করে দিলেন? তার চেয়ে বড় পাপী কে আপনি জানেন?’ হজরত মুসা (আ.) জিঙ্গেস করলেন, ‘হে জিবরাঈরল! এর চেয়ে বড় পাপী আর কে হতে পারে  ‘জিবরাঈল (আ.) বললেন, ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগকারী।

আরো বর্ণিত আছে এক বুযুর্গ ব্যক্তি তার বোনকে দাফনের সময় টাকার থলেটি কবরের ভেতরে পড়ে যায়। দাফন শেষে বাড়ী ফিরে থলের কথা মনে পড়লে কবরের কাছে এসে দেখলেন, টাকার থলেটি নেই। তার ধারণা হলো, তা কবরের ভেতরে পড়ে গেছে। তিনি কবর খুঁড়লেন। দেখতে পেলেন, কবরে আগুন জ্বলছে। তিনি আবার মাটি চাপা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ী গিয়ে মায়ের কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে বোনের আমলের ব্যাপারে জানতে চাইলেন। সব শুনে মা বললেন, ‘তোমার বোন নামাজে অবহেলা করত।

নামাজ আদায়কারীর জন্য বিশেষ পুরস্কার:
নামাজ হলো ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ বা খুঁটি। যে এই খুঁটিকে বিনষ্ট করল বা অমান্য করল; সে যেন ইসলামকেই বিনষ্ট করল। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ নামাজ আদায়ে রয়েছে বান্দার দুনিয়া ও পরকালীন জীবনে অত্যাধিক কল্যাণ। তাই ইসলামের সকল অনুসারিদের যথাযথভাবে নামাজ আদায়ে একনিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন। কোরআন এবং হাদিসে নামাজ আদায়কারীর জন্য দুনিয়া ও পরকালের বিশেষ কল্যাণ ও পুরস্কারের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা তুলে ধরা হলো-

দুনিয়ার কল্যাণে নামাজ:
নামাজের শারীরিক উপকারিতা হলো- দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য পাঁচবার ওজু করতে হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারি। নামাজ আদায়ে শারীরিক নড়াচড়াও স্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর। তাছাড়া মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের জন্য কিছু হাঁটাচলা করতে হয়, তাও সুস্বাস্থ্যকর কাজ। বিশেষ করে ফজরের সময় ঘুম থেকে জেগে মসজিদে যাতায়াতের ফলে সকালের মৃদু বাতাস গ্রহণও সুস্বাস্থ্যের জন্য কল্যাণকর।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনার প্রতি যে কিতাব ওহি করা হয়েছে তা পাঠ করুন এবং যথাযথভাবে নামাজ আদায় করুন। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। (সূরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)

নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে মানুষের এক বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়। যার ফলে মানুষের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য আসে। যে সাহায্য তার জীবনের সর্বত্রই সুপ্রতিষ্ঠা লাভ এবং দুঢ় মনোভাবের কারণ এবং কল্যাণ লাভে সহায়ক হয়। এ জন্যই কোরআনের অন্য জায়গায় আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য এবং নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। (সূরা বাকারা : আয়াত: ১৫৩)

নামাজ এবং ধৈর্য দুটিই অদৃশ্যমান বস্তু। যা ধরা, ছোঁয়া যায় না। যা একান্তভাবে আল্লাহর জন্যই করা হয়। তাই মানুষ দুনিয়ার জিন্দেগিতে সার্বিকভাবে আল্লাহ তায়ালার একান্ত সাহায্য লাভ করে থাকে।

পরকালীন কল্যাণে নামাজ:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে বক্তি যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে, কিয়ামাতের দিন নামাজ তার জন্য নূর হবে; হিসেবের সময় দলিল হবে এবং নাজাতের ওসিলা হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে না, নামাজ তার জন্য নূর, দলিল এবং নাজাতের ওসিলা হবে না। অধিকন্তু তার হাশর হবে কারূন, ফিরাউন, হামান এবং উবাই ইবনে খালফের সঙ্গে। (মুসনাদে আহমাদ, বাইহাকি, মিশকাত)

পরকালের পুরস্কার প্রদান নামাজের হিসেব-নিকেশের ওপর ভিত্তি করেই হবে। এ কারণেই বিশ্বনবী বলেছেন, ‘কিয়ামাতের সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসেব গ্রহণ করা হবে।’ সুতরাং কিয়ামতের দিন নামাজের বিষয়ে যারা ইতিবাচক হিসেব দিতে পারবে তাদের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে বান্দাকে উপহার দেয়া হবে জান্নাত। আর যারা ব্যর্থ হবে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি।

হাদিসে আরো বলা হয়েছে যে, কেউ নামাজের হিসেব সঠিকভাবে দিতে পারলে তার অন্যান্য আমলও শুদ্ধ বলে পরিগণিত হবে। কিন্তু নামাজের হিসেব দিতে গিয়ে কেউ ব্যর্থ হলে তার অন্যান্য আমলও অশুদ্ধ হবে।

তাই দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করবে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাবে। এ জন্য আল্লাহ তায়ালাও তাঁর বান্দাকে পাপরাশি ক্ষমা করে জান্নাত দানের মাধ্যমে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দিয়েছেন। উভয় জগতের সফলতার জন্য নামাজের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য আরো কিছু নির্দেশ এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

‘আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমরা যদি নামাজ পড়, জাকাত দাও, আর আমার রাসূলদের বিশ্বাস কর ও তাদেরকে সাহায্য কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান কর, তাহলে তোমাদের পাপরাশি অবশ্যই মোচন করব এবং নিশ্চয় তোমাদেরকে বেহেশতে প্রবেশাধিকার দান করব; যার পাদদেশে নদীমালা প্রবাহিত। এরপরও তোমাদের মধ্যে যে অবিশ্বাস করবে সে সরল পথ হারাবে। (সূরা মায়িদা : আয়াত ১২)

রাসূল (সা.) বলেন, বাচ্চা যখন সাত বছরে পর্দাপণ করে তখন তাকে নামাজ পড়তে আদেশ কর। আর যখন দশ বছরে পর্দাপণ করলে নামাজ না পড়ার দরুন প্রহার কর। (আবু দাউদ) অন্য বর্ণনায় আছে,  বিছানা পৃথক করে দাও।

ইমাম আবু সালায়মান খাত্তাবী (রহ) বলেন, এ হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, বাচ্চা নির্ধারিত বয়সে পৌঁছে নামাজ না পড়লে তার জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

সুতরাং কোনো অবস্থায় নামাজ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না। আল্লাহ তাআলা সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালের সর্বোচ্চ কল্যাণ লাভে সঠিকভাবে তাঁর হুকুম পালনে নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

বরগুনার আলো