• বুধবার ০৮ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
ঐতিহাসিক ৭ মে: গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামী জননেতা : প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে

সময় শুভ-অশুভ হওয়া ও প্রচলিত কুসংস্কার

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০১৯  

সময় আল্লাহ তায়ালার মহা এক নেয়ামত। দিন-রাতের আবর্তন ও মৌসুমের পরিবর্তন আল্লাহ তায়ালার কুদরতের একটি বড় নিদর্শন। 

আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত দিনের আবর্তনে বহু নিদর্শন রয়েছে বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের জন্য, যারা আল্লাহকে স্মরণ করে-দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে (এবং বলে ওঠে) হে রব! আপনি এগুলো নিরর্থক সৃষ্টি করেননি।’ (সূরা আলে ইমরান-১৯৯)

আল্লাহ তায়ালা দিন-রাত সৃষ্টি করেছেন। সারা বছরকে ভাগ করেছেন বার মাসে। তবে সকল মাস ও দিন সমান নয়। বরকত ও ফজিলতের দিক থেকে কোনো কোনো মাস বা দিনের ফজিলত অন্যগুলোর চেয়ে ভিন্ন। বার মাসের মধ্যে রমজান, জিলহজ ও মহররমের মর্যাদা বেশি। সপ্তায় সাত দিনের মাঝে জুমা দিনের গুরুত্ব বেশি। ফজিলতের দিক থেকে তারতম্য থাকলেও আল্লাহ তায়ালা কোনো দিন বা মাসকে শুভ বা অশুভ মাস বানাননি। বান্দা চাইলে উত্তম কাজ ও সঠিক কোনো বিষয়ের মাধ্যমে যে কোনো সময়কে বরকতময় ও শুভ বানাতে পারে। আবার অন্যায় ও অবিচারের মাধ্যমে যে কোনো ভাল দিনকে সে অশুভ বানাতে পারে। বিশেষ কোনো কাজের জন্য, বিশেষ কোনো সময়কে শুভ বা অশুভ মনে করা জাহেলি যুগের প্রথা।

ইসলাম আসার আগে সমাজ ছিল অন্ধকার। মানুষের শিক্ষাদীক্ষা বলতে তেমন কিছুই ছিল না। তখন তারা মনে করতো ওমুক মাসে বিবাহ হলে ঘর সুখি হবে। তমুক মাসে বিবাহ হলে সংসারে অশান্তি লেগে থাকবে ইত্যাদি। ইসলাম এসে এ সকল কুসংস্কার দূর করেছে। যেমন ইসলামের পূর্বে শাওয়াল মাসকে বিবাহের জন্য মনে করা হতো অকল্যাণকর। এই মাসে বিবাহ করলে কেউ স্বামীর কাছে সুখী হতে পারবে না। হাদিস দ্বারা সেই ভ্রান্তির নিরসন করা হয়েছে। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) আমাকে শাওয়াল মাসেই বিবাহ করেছেন, শাওয়াল মাসেই তিনি বিবাহ রজনী উদযাপন করেছেন। অথচ রাসূল (সা.) এর অনুগ্রহ লাভে, আমার চেয়ে ভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে? (সহীহ মুসলিম) এটাই ইসলামের শিক্ষা যে, তাওহিদের বিশ্বাসের ফলে বান্দা, আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কোনো বস্তুর কল্যাণ বা অকল্যাণের ব্যাপারে হবে নির্র্ভীক।

বর্তমানে মহররম মাসের ব্যাপারেও অনেক ভুল প্রচলিত আছে। কেউ কেউ এ মাসে বিবাহকে অকল্যাণকর মনে করে। এর পেছনে হয় তো আরেকটা  কারণ কাজ করছে। তা হচ্ছে এ মাসে হজরত হুসাইন (রা.) এর শাহাদাত। তারা মনে করে হজরত হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের কারণে এ মাস হচ্ছে শোকের মাস। আর বিবাহ শাদি হচ্ছে খুশির বিষয়। তাই এ মাসে বিবাহ কখনো শুভ হবে না। ভুলে গেলে চলবে  না যে, সময় কখনো অশুভ হয় না। বিশেষ করে মহররম মাস। কারণ, আল্লাহ তায়ালা বার মাসের মধ্যে কিছু মাসকে করেছেন মর্যাদাপূর্ণ। এগুলোর মাঝে রয়েছে মহররম। মহররমের ফজিলত ও মর্যাদা রমজানের পরেই। তাই ফজিলতের দিকে লক্ষ্য করে বিবাহের অনুষ্ঠান ঠিক করতে হলে মহররম হতে পারে অন্যতম। হজরত হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের কারণে এ মাস কীভাবে অশুভ হতে পারে? অশুভ তো তাদের জন্য যারা এমন একটা মর্যাদাপূর্ণ মাসে রাসূল (সা.) এর দৌহিত্রকে শহীদ করেছে। এবং এখনো হজরত হুসাইন (রা.) এর শাহাদাতের শোক প্রকাশের নামে অনৈসলামিক কর্মের মাধ্যমে এই মাসকে ভরে রেখেছে। যদি বড় ব্যক্তিদের মৃত্যু বা শাহাদাতের কারণে মাস বা দিনকে অশুভ ধরা হয় তাহলে বছরের এমন কোনো মাস বা দিন কী পাওয়া যাবে যে দিন কোন বড় ব্যক্তির মৃত্যু বা শাহাদাতের ঘটনা ঘটেনি? রবিউল আউয়ালে রাসূল (সা.) এর মৃত্যুর চেয়ে হুসাইন (রা.) এর শাহাদাত কখনো বড় হতে পারে না, কিন্তু আমরা কি সেই রবিউল আউয়ালকে অশুভ ভাবি?

আমাদের মাঝে এখন আরবি যে মাস বিদ্যমান, তার নাম সফর। মহররমের ন্যায়, জাহেলি যুগে সফর মাসকেও অশুভ মনে করা হতো। এগুলো ছিলো কুসংস্কার। ইসলাম এগুলোকে বাতিল ঘোষণা করেছে।

কুসংস্কার মানে হচ্ছে ধারণার ভিত্তিতে, প্রমাণহীন কোনো বিশ্বাস পোষণ করা। কর্মক্ষেত্রে এর প্রভাব গ্রহণ করা। কুসংস্কার এমন এক মারাত্মক ব্যাধি, যা মানুষের মনকে নানা রকম কাল্পনিক বিষয়ের ভয়-আশা দিয়ে ভরে দেয়; মানুষকে দুশ্চিন্তায় নিমজ্জিত করে। প্রমাণহীন বিভিন্ন বিষয়ের রেওয়াজ দেয়ার কারণে, আস্তে আস্তে রসম-রেওয়াজের বোঝা ভারি হতে থাকে। অকারণে অনেক অদৃশ্য বিষয়ের ভয়ে সর্বদা কম্পিত থাকে। এই ভিত্তিহীন ধারণা অসংখ্য গোনাহের পথ খোলে। বিশেষ করে আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে শিরকের পথ। কারণ, কাল্পনিক ভয়ের কারণে বিভিন্ন নামে, বেনামে মান্নত করা শুরু করে। মনে করে, গরু ছাগল দিয়ে তাকে খুশি করাতে পারলেই আমি বেঁচে গেলাম। আফসোস হচ্ছে, আজ মুসলমানরা অনেক ভিত্তিহীন কাজকে শরীয়ত বানিয়ে নিয়েছে। অথচ, এগুলো হচ্ছে রসম-রেওয়াজ, যা ঈমানকে দুর্বল করে তোলে। আবার অনেক কাজ আছে, যেগুলো দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত, কিন্তু সেগুলোকে রসম-রেওয়াজ মনে করে ছেড়ে দেয়া হয়, অপ্রচার চালানো হয়।

কুলক্ষণ গ্রহণের প্রবণতাও একটি নিকৃষ্ট বিষয়। এর দ্বারা মানুষের জীবন-যাত্রায় বিরূপ প্রভাব পড়ে। আমাদের সমাজে তালাশ করলে কুলক্ষণ গ্রহণের কতো যে বিষয় বের হয়ে আসবে তার কোনো হিসেব নেই। অমবস্যার রাতকে কোথাও কোথাও অশুভ মনে করা হয়। রাতের শেষ অংশ, বেজোড় রাত, বিশেষ কোনো স্থান, কোথাও যেতে গিয়ে ডেকে নিয়ে আসা, কাক ডাকা, খেতে গিয়ে খাবার আটকে যাওয়া, কোথাও রওয়ানা দেয়ার পর বিড়াল সামন দিয়ে কেটে যাওয়া ইত্যাদিকে অশুভ, কুলক্ষণ মনে করা হয়। এগুলো মূলত আরবের পৌত্তলিক ও হিন্দুস্তানের মূর্তিপূজারীদের অনুসরণ। ইসলাম কুলক্ষণ গ্রহণের বিষয়টিকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। রাসূল (সা.) এক হাদিসে বলেন, ‘রোগ সংক্রমন করা, কুলক্ষণ, পেঁচা ও সফর মাস এ সব হলো অলীক কল্পনা। এর কোনো বাস্তবতা নেই।’ 

উক্ত হাদিসে কয়েকটি কুসংস্কারের কথা আলোচনা করা হয়েছে-

(ক) রোগ একজন থেকে আরেকজনের শরীরে সংক্রমণ হওয়ার ধারণা। অর্থাৎ রোগব্যাধি একজনের শরীর থেকে আরেকজনের শরীরে লেগে যাওয়ার সক্ষমতায় স্বয়ংসম্পূর্ণ এ রকম ধারণা শিরকের অন্তর্ভূক্ত। হ্যাঁ, যে সকল রোগব্যাধির ব্যাপারে দলিল দ্বারা প্রমাণিত হবে যে, আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশার ফলে তা সংক্রমিত হয়, সে ক্ষেত্রে তাওহিদের বিশ্বাসের পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বনে কোনো সমস্যা নেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসলাম এ ব্যাপারে নির্দেশনাও দিয়েছে।

(খ) হাদিসে কুসংস্কার হিসেবে চিহ্নিত করা দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে কুলক্ষণ গ্রহণ করা। কোনো কিছু দ্বারা সুলক্ষণ বা কুলক্ষণ গ্রহণ করা কুসংস্কার। হাদিসে কুলক্ষণ বুঝাবার জন্য শব্দ ব্যবহার হয়েছে ‘তিয়ারা’। এটা আরবি শব্দ, যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে  পাখি। আরবরা জাহেলি যুগে সুলক্ষণ, কুলক্ষণ বুঝার জন্য পাখিকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতো। পাখি ছাড়ার পর যদি তা ডান দিকে যেতো তাহলে এটাকে সুলক্ষণ হিসেবে গ্রহণ করতো। বামি দিকে গেলে মনে করতো এটা কুলক্ষণ। তখন তারা এই কাজ বা যাত্রা থেকে বিরত থাকতো। ইসলাম কুলক্ষণ গ্রহণকে শিরকেরই একটি প্রকার সাব্যস্ত করেছে। যারা তাওহিদের বিশ্বাসী  হবে, তারা আল্লাহকেই কল্যাণ অকল্যাণের মালিক মনে করবে।

(গ) কুসংস্কার হিসেবে সাব্যস্ত করা তৃতীয় বিষয় হচ্ছে পেঁচা। এখনো আমাদের দেশে পেঁচাকে অনেক মুসলমান খারাপ দৃষ্টিতেই দেখে। গ্রামের নারীরা রাতে পেঁচার আওয়াজ শুনলে আগুনে লোহা দেয়, মনে করে এর দ্বারা পেঁচা চলে যাবে। পেঁচা তাড়ানোর এত গুরুত্বের কারণ হচ্ছে মনে করা হয়, যে বাড়িতে পেঁচা ডাকবে সে বাড়িতে কেউ মরবে বা বিপদ ঘটবে। কাক ডাকাকেও আমাদের সমাজের অনেকে খারাপভাবে নেয়। কিন্তু পেঁচা বা কাক ডাকার সঙ্গে বিপদ আসার কী সম্পর্ক? মুসলমানের আকীদার মূল হচ্ছে তাওহিদ। আল্লাহ তায়ালা চাইলেই কেবল বিপদ আসবে, পেঁচা বা কাকের ডাক বিপদ আনতে পারে না। রাতের বেলায় গরু আওয়াজ করাকেও বিপদের লক্ষণ মনে করা হয়। এ সব হচ্ছে কুসংস্কার।

(ঘ) চতুর্থ বিষয় হচ্ছে সফর। হাদিসে সফরের ব্যাপারে কুসংস্কারকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সফর দ্বারা কী উদ্দেশ, এ ব্যাপারে নানা মত রয়েছে। একটি মত হচ্ছে জাহেলি যুগে সফর মাসকে অশুভ মাস মনে করা হতো। ইসলাম এ ভ্রান্ত ধারণাকে খন্ডন করেছে। একে কুসংস্কার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বলেছে সময় মাত্রই আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত। কোনো সময়ই শুভ বা অশুভ হতে পারে না। বান্দা নিজের আমল দ্বারা সময়কে কল্যাণকর বানাতে পারে আবার পারে অকল্যাণকর বানাতে।

সুলক্ষণ গ্রহণের ব্যাপারে ইসলাম নিষেধ করেছে। তবে ভালো কিছু দ্বারা আশাবাদী হতে ইসলাম নিষেধ করেনি। যেমন একজন  ব্যবসার উদ্দেশে বের হয়ে, কেউ কাউকে ‘ইয়া নাজাহ’ নামে ডাকতে শুনলো। নাজাহ মানে হলো সফলতা। ওই ব্যবসায়ী এখান থেকে আশাবাদী হলো যে, আল্লাহ তায়ালা হয়তো আমাকে সফলতা দেবেন। এ রকম এক রোগী চিকিৎসা নিতে বের হলো। বের হয়ে সে কাউকে ডাকতে শুনলো ‘ইয়া সালিম!’ নামে। সালিম মানে হলো সুস্থ। সে আশাবাদী হলো আল্লাহ তায়ালা আমাকে সুস্থতা দেবেন। ইসলাম এটাকে নিষেধ করেনি। এটা ইসলামি আকীদার সঙ্গে সাংঘর্ষিকও নয়। ইসলামের তাওহিদের বিশ্বাস মানুষকে অমূলক সকল ভয় থেকে মুক্তি দেয়। 

এক আল্লাহকে কল্যাণ, অকল্যাণ, সুখ, শান্তি, ক্ষতি, উপকারের মালিক মনে করার কারণে ইসলামে এ সকল প্রচলিত কুসংস্কারের কোনো স্থান নেই।

বরগুনার আলো