• মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

  • || ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

আত্মহননকারীর যে কঠিন পরিণতি হবে

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০২১  

ইসলামে আত্মহত্যা নিষিদ্ধ। ইসলামি আইনে এটিকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে। এর পরিণতি হিসেবে বলা হয়েছে, পরকালে আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির আত্মহত্যা করার পদ্ধতি অনুযায়ী তার যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। আত্মহত্যা মহাপাপ। এই কথাটি আত্মহননকারী ব্যক্তিরও অজানা নয়। তবু হতাশা, অধৈর্য ও পারিবারিক নানা কলহে মানুষ এ পাপের দায় নিয়েও জঘন্য পথটি বেছে নেয়। 

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের জন্য এটি একটি দুঃখজনক তথ্য। অথচ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা আত্মহত্যাকারীর জন্য পরকালে কঠোর আজাবের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি সীমা লঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করব। এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।’ (সুরা: নিসা, আয়াত: ২৯, ৩০)

আত্মহত্যার অপরাধে জান্নাত হারাম হওয়ার পাশাপাশি হাদিসে কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ হয়েছে। জুন্দুব বিন আবদুল্লাহ (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি জখম হয়ে (অধৈর্য হয়ে) আত্মহত্যা করে। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারি, হাদিস: ১২৭৫)

আবু হুরায়রা (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘ যে পাহাড় থেকে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে চিরস্থায়ীভাবে পাহাড় থেকে পড়ার অনুরূপ শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে বিষপানের আজাব ভোগ করতে থাকবে। আর যে কোনো ধারালো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে তা দ্বারা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। (বুখারি : ৫৩৩৩; মুসলিম : ১২৭৬)

দুনিয়ায় আত্মহননকারীর প্রতি মানুষের ঘৃণা জন্মায়। রাসূল (সা.) এসব পাপিষ্ঠ ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়েননি। জাবের বিন সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয়েছে, যে লোহার ফলা দ্বারা আত্মহত্যা করেছিল, ফলে তিনি তার জানাজার নামাজ আদায় করেননি।’ (মুসলিম, হাদিস: ১৬২৪)

পারিবারিক ও সামাজিক নানা সংকট থেকে মানুষ আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়। চরম হতাশা, বিপদে অধৈর্য হয়ে আর অনিয়ন্ত্রিত জেদ-অভিমানই আত্মহত্যার মূল কয়েকটি কারণ। অথচ ইসলামে এই কারণগুলোর সান্ত্বনা ও প্রতিদানের কথা ঘোষিত রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সন্দেহ নেই, তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা: জুমার, আয়াত: ৫৩)

সব বিষয়ে আল্লাহর রহমতই একমাত্র ভরসা। মনে রাখতে হবে, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর কোনো সংকটই স্থায়ী হয় না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।’ (সুরা: ইনশিরাহ, আয়াত: ৫-৬)

বিলাসিতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অতিভোগকে মানুষ সফলতা মনে করে। এসব চাহিদা মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর করে দেয়। অথচ অল্পে সন্তুষ্ট থাকার মধ্যেই রয়েছে কল্যাণ ও সফলতা। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজনমাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪১৩৮)

অধৈর্য মানুষকে আত্মহত্যার পথে নিয়ে যায়। মানবজীবনে ধৈর্যের চেয়ে কল্যাণকর আর কিছু নেই। ধৈর্যের মাধ্যমে অনেক কঠিন বাস্তবতাকে সহজে মেনে নেয়া যায়। সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা হলো যারা ধৈর্যশীল তাদের সঙ্গে আল্লাহর বিশেষ সঙ্গ থাকে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৩)

একবার রাসূল (সা.) আনসার সাহাবীদের কিছু লোককে বলেন, ‘যে ব্যক্তি ধৈর্য ধরে, তিনি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনো তোমাদের দান করা হবে না।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৪৭০)

দুঃখ-দুর্দশা গ্লানি যত সংকট আসুক না কেন সব কিছুতেই আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা: তালাক, আয়াত: ৩)। আত্মহত্যাপ্রবণ হতাশাগ্রস্ত মানুষ কোরআন-হাদিসের অমিয় বাণীগুলো আত্মোপলব্ধি করতে পারলে নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে পারবে।  

আল্লাহ যখন সর্বদা মুমিনের পাশেই থাকেন, তাই মুমিন কখনো কোনো পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে না। সুখ-দুঃখ আমাদের জীবনের সঙ্গী। রাতের পরে যেমন দিন আসে, দুঃখের পরেও সুখ আসে। বিপদে ধৈর্য ধারণ না করলে সেই সুখের দেখা মিলবে কী করে?

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা! তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৩)।

তাই আসুন, আমরা আমাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক আরো দৃঢ় করি, বিপদে তাদের মহান আল্লাহর বাণীগুলো স্মরণ করিয়ে দিই। তাহলেই সমাজ থেকে এই মারাত্মক ব্যাধি দূর হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ! আল্লাহ আমাদের হতাশামুক্ত ও পরিশুদ্ধ জীবন-যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন। 

বরগুনার আলো