• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা

রংপুর বিভাগে পুনর্বাসিত ৫২ হাজার ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারি ২০২৪  

‘আল্লায় দেলে শেখ সাইবের বেটি মোক পাকার ঘর, জমি দিচে। মুই অ্যালা শান্তিতে নিন (ঘুম) পারোং। যায় মোক ডাকে আনি ঘরের চাবি-দলিল দেইল, তার আল্লাহ ভালো করবে। মুই দোয়া করোং হামার প্রধানমন্ত্রী সারা জেবন শান্তিত থাকপে। হামরা খুব গরিব আছনো, থাকার মতো কোনো জমিজমা ঘর আছিল না। আজই হামার সোগে হইচে বাহে।’এভাবেই ঢাকা পোস্টকে কথাগুলো বলছিলেন জেলেখা বেগম। রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের লাল-সবুজ ঘরে ঠাঁই হয়েছে তার।

জেলেখা বেগমের মতো শত শত ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে। যাদের একসময় নিজস্ব স্থায়ী ঠিকানা ছিল না, ঘরবাড়ি ছিল না, ছিল না জমিজমা। আবার কারও জমি থাকলেও ঘর করার সামর্থ্য ছিল না, এমন অসহায়, দরিদ্র, দুস্থ ও সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলো আজ বিনামূল্যে সরকারের দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে খুঁজে পেয়েছেন আপন ঠিকানা।

গত ১৫ বছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় রংপুর বিভাগের আট জেলার ৫২ হাজার ৩৮৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। রংপুর বিভাগের তিনটি জেলা ইতোমধ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত এই তিন জেলা হলো পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও।

একসময় মঙ্গাপীড়িত ‘বাহের দেশ’ হিসেবে পরিচিত ছিল রংপুর। দীর্ঘসময় উন্নয়নবঞ্চিত থাকা এই জেলা এখন বদলে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে সিটি কর্পোরেশন ও মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। একসময়ের খানাখন্দে ভরা গ্রামের রাস্তাগুলোও এখন পিচঢালা। রাস্তার দুই পাশে হয়েছে বনায়ন। হাট-বাজারের পাশাপাশি গ্রামেও গড়ে উঠেছে পাকাবাড়ি। অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে বদলে গেছে পুরো জেলার দৃশ্য।

এখন জেলার হাট-বাজার আর গ্রামে ঘুরলে চোখে পড়বে টিনের তৈরি ও আধাপাকা ঘরবাড়ি। মাঝেমধ্যে চোখে পড়বে কাঁচা বাড়িও। মেঠোপথ ধরে চলতে একটু পরপর বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ আর সবুজের হাতছানি। এমনই এক গ্রাম পালিচড়ার বালুয়াপাড়া। রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্কুরণী ইউনিয়নের পালিচড়া বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার এগোলে বালুয়াপাড়া। এই গ্রামে ঢুকতে নজর কাড়বে লাল-সবুজ আর স্কাইব্লু রঙের পাকা ঘর। এখানে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপহারের ঘরে থাকছেন ২৫টি পরিবার।

কথা হয় সেখানকার ছাদেকা বেগমের সঙ্গে। তিনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপকারভোগী। জমির দলিলসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র তাকে সরকার দিয়েছেন জানিয়ে ছাদেকা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন ঘর, কাঁচা-পাকা বাড়ি। সঙ্গে জমির দলিল সবকিছুই সরকার আমাদের দিয়েছে। আমি আনন্দে আপ্লুত, সরকারের কাছে চিরকৃতজ্ঞ।ছাদেকার মতো ভূমিহীন আবুল খায়ের, হালিমের স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে।

পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী আবুল খায়ের ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সরকার হামাক ঘর করি দেবার পর থাকি কষ্ট কমি গেইচে। আগোত তো হামার নিজের ঘরবাড়ি ছিল না। এ্যলা হামার নিজের পরিচয় আছে, জমিজমা আছে। আগের মতো এ্যলা শীতকালে আইতোত ঘুমাইতে কষ্ট হয় না। ঘর-বাড়ির বন্দোবস্ত হওয়াতে বউ-ছাওয়াক নিয়্যা আল্লাহর রহমতে হামরা এ্যলা আগের চ্যায়া অনেক ভালো আছি। শেখ সাইবের বেটি হামার জনতে যা করছে, তাক কোনো দিন হামরা ভুলমো না।’

মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠিকানা হওয়ায় ছাদেকা বেগম বলেন, ‘স্বামী নাই। মেলাদিন আগোত মরি গেইছে। এতদিন বেটির বাড়িত ছিনো। মাইনসের বাড়িত কাম কাজ করি, আইত হইলে বেটির বাড়িত য্যায়া থাকছি। এ্যালা তো সরকার থাকি ঘর পাইচি, জমি পাইচি। খুব ভালো আছি বাহে। প্রধানমন্ত্রী হামাক লাখ লাখ টাকার জমিসহ পাকা ঘর করি দিচে। এই জনতে প্রধানমন্ত্রীক হামার ধন্যবাদ। আল্লাহ তাক যুগ যুগ বাঁচি থুক।’

বালুয়াপাড়াতে যারা ঘর পেয়েছেন, এতদিন তাদের পরিচয় ছিল ভূমিহীন ও গৃহহীন। এই নামেই সবাই তাদের চিনতেন ও জানতেন। মানুষের কাছে তারা ছিলেন যাযাবর। কিন্তু এখন তাদের সেই নাম-পরিচয় মুছে গেছে। ভূমিহীন-গৃহহীন থেকে তারা এখন সবাই লাখপতি। সরকারের উপহারের আধাপাকা ঘর আর কয়েক লাখ টাকার ভিটেমাটি। প্রতিটি পরিবারের নামে দুই শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত করে দিয়ে ঘরগুলো বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এমন উপহার পেয়ে আবেগাপ্লুত ও উচ্ছ্বসিত এসব পরিবার।রংপুরের আটটি উপজেলার মধ্যে তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও কাউনিয়া উপজেলাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেছেন।

কথা হয় তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের ফরিদাবাদ গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই পাওয়া মোবারক হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সরকারের এই উদ্যোগ খুব ভালো। কোনো টাকা পয়সা নাগে নাই। সরকার হামাক লাখ লাখ টাকার জমিজমা, ঘর দিচে। এটাতো ইয়ার আগোত কায়ো করে নাই। আইজ হামার একনা ভালোভাবে বাঁচার মতো সুযোগ সুবিধা হইচে, ওই তকনে প্রধানমন্ত্রীক ধন্যবাদ দিই। দোয়া করি, তায় যেন সুস্থ থাকে। মেলাদিন বাঁচি থাকে।’

ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা দিনাজপুর। এ জেলার চিরিরবন্দরের ভিয়াইল ইউনিয়নের ধুরইল গ্রামের বোচাপুকুর আশ্রয়ণপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪৭টি পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয় উপজেলা প্রশাসন থেকে। ২০২১ সাল থেকে সেখানে বসবাস করছেন পুনর্বাসিত পরিবারগুলো।সেখানকার উপকারভোগী মজ্জিনা খাতুন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, আমাদের থাকার জায়গা ছিল না । প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটি বাড়ি করে দিছে। আমরা তো মহাখুশি। আগে থাকার জায়গা ছিল না এখন দালান বাড়িতে থাকছি।’

আরেক উপকারভোগী রবিউল ইসলাম বলেন, আমাদের থাকার জায়গা ছিল না, ঘর ছিল না। আমাদের মতো ভূমিহীনদের একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘরে রয়েছে দুটি শয়নকক্ষ, বারান্দা, রান্নাঘর ও শৌচাগার। এ ছাড়া প্রত্যেক পরিবারের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। প্রত্যেককে তার জমির দলিল নিবন্ধন ও নামজারি করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার এই মহতী উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন অনেক রাজনীতিবিদ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিবর্গ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ মালিকানায় বিনামূল্যে দুই শতাংশ জমিসহ গৃহ প্রদান করা হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ৮ লাখ ৪৭ হাজার ২০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৪৩ লাখ। পৃথিবীর ইতিহাসে বিনামূল্যে এত জমিসহ গৃহ প্রদানের ঘটনা দ্বিতীয়টি নেই।

বর্তমান বাংলাদেশে ৩২টি জেলা ও ৩৯৪টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত। ভূমিহীন ও গৃহহীন বিপুল সংখ্যক মানুষকে পুনর্বাসনের ফলে বাংলাদেশের চরম দরিদ্র ও ভাসমান মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে।রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, জেলার হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী ভূমিহীন ও গৃহহীনের সংখ্যা ৫ হাজার ৬৫১ পরিবার। মুজিব শতবর্ষে ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এসব পরিবারকে অর্থাৎ যাদের জমি নেই, ঘর নেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি খাস জমিতে এসব ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, দেশে একজন মানুষও ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না, এটি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা। রংপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে থাকা ভূমিহীন-গৃহহীনদের পর্যায়ক্রমে এ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ছাড়া ইতোমধ্যে যেসব উপজেলা ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে, সেসব উপজেলায় যদি নতুন কাউকে পাওয়া যায় তারও ব্যবস্থা করা হবে। এটি সরকারের একটি চলমান কার্যক্রম।

রংপুর আঞ্চলিক তথ্য অফিসের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ জানান, গত ১৫ বছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় রংপুর বিভাগের আট জেলার ৫২ হাজার ৩৮৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয়েছে। রংপুর বিভাগের তিনটি জেলা ইতোমধ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত এই তিন জেলা হলো পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও। এর ফলে রংপুর বিভাগে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন চরম দরিদ্র ও ভাসমান মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে।

বরগুনার আলো