• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা

যে কারণে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফসল এটি

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২০  

আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান দেশ হওয়ায় বিভিন্ন ধরনের ফসল হয় এখানে। ধান থেকে তুলা, চা গমসহ নানা ধরনের ফসলের উপযোগী এখানকার মাটি। তবে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফসলের মধ্যে আছে কফি এবং কেশর। কেশর হচ্ছে এক ধরনের ফুল যেটা থেকে পাওয়া যায় জাফরান। 

অনেকেই হয়তো জাফরানকে ফসল বলায় খানিকটা অবাক হচ্ছেন। এটি আসলে এক ধরনের মশলা। ব্যয়বহুল এবং মিষ্টি খাবারে এর বেশি ব্যবহার। খাবারের স্বাদ এবং রং আনতে ব্যবহার হয় এটি। ভিনদেশি হওয়ায় এটি দামেও কিন্তু অন্যান্য মশলার থেকে অনেকটা বেশি। এক কেজি জাফরানের দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। এজন্য পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মশলা জাফরানকে বলা হয়। এই মশলা যে গাছ থেকে হয় সেটিও বিশ্বের সবথেকে দামি ফুলের গাছ।

 

কেশর চাষীর হাসি

জাফরান হচ্ছে প্রায় বেগুনি রঙের ছয় পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলের পুংকেশর। ইংরেজি নাম স্যাফরন হলেও বৈজ্ঞানিক নাম ক্রোকাস স্যাটিভাস। এদের স্থানীয় নামের মধ্যে আছে স্যাফ্রন, জ্যাঁফারান, কেশর, জাফরান। পৃথিবীর সব দেশে জাফরান হয় না। স্পেন, ইতালি, গ্রিস, ইরান, কাশ্মির জাফরানের জন্য বিখ্যাত। ভারতে জম্মুর কিমসাতবার এলাকায় জাফরানের চাষ হয়। এছাড়া কাশ্মীরের পম্পেওতে জাফরান চাষ হয়। তবে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে জাফরান চাষের সম্ভাবনা রয়েছে।

 

একটি ফুলে মাত্র তিনটি গর্ভমুন্ড থাকে

জাফরান আসলে একটি ফুলের গর্ভমুন্ড। এটি মূলত খাদ্যে ব্যবহার করা হত রঙিন করতে। যে ফুল থেকে এই জাফরান সংগ্রহ করা হয়, সেটি ফুটে মাত্র এক সপ্তাহের জন্য, শরৎকালের শুরুতে। জাফরান ফুল দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি আকর্ষণীয় এর সুগন্ধি। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এর ফুল হয় অথচ বীজ হয় না। একটি ফুলে মাত্র তিনটি গর্ভমুন্ড থাকে। খালি হাতে এটি খুব সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ করতে হয়। এক কিলোগ্রাম জাফরান সংগ্রহ করতে অন্তত দুটি ফুটবল মাঠের সমান জায়গায় এই ফুলের চাষ করতে হবে।

 

স্থানীয় মানুষেরাই এগুলো সংগ্রহ করেন

 

প্রায় তিন লাখ ফুল থেকে মাত্র এক কেজি জাফরান সংগ্রহ করা যায়। তাই এই মশলার এতো দাম। সোনার মতো চড়া দাম বলে জাফরানকে রেড গোল্ডও বলা হয়। কথিত আছে, ২৩০০ বছর আগে গ্রিসে প্রথম জাফরান চাষ শুরু হয়েছিল। তবে অনেকেই বলেন প্রথমবার জাফরানের চাষ হয়েছিল স্পেনে। এখনও পৃথিবীর সব থেকে বেশি জাফরানের চাষ হয় স্পেনে। জাফরান ফুলের গন্ধ এতটাই চড়া হয় যে আশেপাশের এলাকা সুগন্ধে ভরে যায়।

 

মাত্র এক এক সপ্তাহের জন্য ফোটে এই ফুল

প্রতিটি ফুল থেকে সব থেকে বেশি হলে মাত্র তিনটি জাফরান পাওয়া যায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন কেন দেড় লাখ ফুল থেকে মাত্র এক কেজি জাফরান পাওয়া যায়! আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরি থেকে শুরু করে ভালো কোনো রান্না, জাফরানের ব্যবহার হয় বহু ক্ষেত্রে। রক্ত পরিশোধন থেকে লো ব্লাড প্রেসারের রোগীদের চিকিৎসা, জাফরান উপকারী বলে প্রমাণিত। এখন কিছু কিছু পান মশলায় জাফরানের ব্যবহার হচ্ছে। খুব অল্প পরিমাণ জাফরান সুগন্ধ ছড়িয়ে দিতে পারে। তাই এর ব্যবহারিক প্রয়োগ হয় খুবই অল্প। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও জাফরানের ব্যবহার হয়।

 

পরিবারের সবাই মিলেই এই কাজ করে থাকেন তারা

ভিটামিন এ, বি, সি, জিংক, পটাসিয়াম ও সোডিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পাওয়া যায় জাফরান থেকে। খাবারে চমৎকার ফ্লেভার যোগ করে জাফরান। ত্বকের যত্নেও এটি অনন্য। রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয় জাফরান। জাফরান স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক চিমটি জাফরান দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে হরমোন উদ্দীপিত হয়। ঠাণ্ডা লাগা ও জ্বরের হাত থেকে বাঁচায় জাফরান।

প্রায় তিন লাখ ফুল থেকে মাত্র এক কেজি জাফরান সংগ্রহ করা যায়

 

আধুনিক দুনিয়ায় খাবারের সঙ্গে, দুধের সঙ্গে জাফরান খাওয়ার কথা শোনা যায়। এমনকি আরববিশ্বে কফির সঙ্গে জাফরান খাওয়ার প্রচলন আছে। ইসলামে জাফরান খাওয়া নিষিদ্ধ নয়। ইবনে কুদামা (রহ.) আল-মুগনি নামক কিতাবে লিখেছেন, চার মাজহাব মতে, রান্না করে জাফরান খাওয়া বৈধ। ইহরাম অবস্থায় রান্নাকৃত জাফরান খেলে হজ ও ওমরাহ ভাঙবে না। (ইসলাম ওয়েব ডটনেট)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে জাফরানের বেশি ব্যবহার ছিল পোশাকের ক্ষেত্রে। ইসলাম পুরুষের জন্য জাফরান রঙের পোশাক নিষিদ্ধ করেছে। তবে নারীদের জন্য তা নিষিদ্ধ নয়। আনাস (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) পুরুষদের জাফরানি রঙের কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন।’(বুখারি, হাদিস : ৫৮৪৬)

 

জাফরানের তৈরি সুগন্ধিও বিক্রি হয় বেশ চড়া দামেই

 

ইহরাম অবস্থায় জাফরান রঙের পোশাক পরা নিষিদ্ধ। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইহরামকারী যেন ওয়ারস ঘাসের কিংবা জাফরানের রং দ্বারা রাঙানো কাপড় না পরে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৮৪৭)

আর আতর ও সুগন্ধি বিষয়ে ইসলামের মূলনীতির আলোকে ইসলামী আইনবিদরা বলেছেন যে সুগন্ধি হিসেবে জাফরান ব্যবহার করা পুরুষের জন্য বৈধ।

জাফরানের ফুল সংগ্রহ করছে এক শিশু

 

বোঝাই যাচ্ছে জাফরানের ব্যবহার ছিল হাজার হাজার বছর আগেও। তবে যুগে যুগে পরিবর্তন হয়েছে এর ব্যবহারে। পোষাকে, খাবারে এমনকি নানা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হত জাফরান। এটি সবসময়ই খুব ব্যয়বহুল ছিল। এই মশলাটি ব্যয়বহুল হওয়ার মূল কারণ আসলে এর চাষাবাদ পদ্ধতি। কেননা অন্যান্য ফসলের মতো একই পরিশ্রম করে পাওয়া যায় খুব সামান্যই জাফরান। তারপর আবার সেটার বাণিজ্যিক খরচ। সব মিলিয়েই এটি বিশ্বের দামি খাবার এবং ফসলের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।

বরগুনার আলো