• রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

  • || ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বরগুনার আলো
ব্রেকিং:
হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী

প্রাচীন রহস্যময় এক গুহা, যা এক দিনেই ঘুরে আসা যায়

বরগুনার আলো

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২৪  

প্রাচীন রহস্যময় এক গুহা। আর এর ইতিহাসটাও অদ্ভুত। অনেকে বলে থাকেন, কয়েক শ বছর আগে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছিল এই অঞ্চলে। সেখান থেকেই পাহাড়ের পাদদেশে এই গুহার সৃষ্টি।
আবার অনেকে বলেন, পাহাড়ের ঝরনার কারণে সৃষ্ট ফাটল থেকে ধীরে ধীরে তৈরি হয় এই গুহা, যা এখন আলুটিলা গুহা নামে পরিচিত।

আলুটিলা গুহাটি যেখানে অবস্থিত, সেই এলাকার আদিনাম মহাজনপাড়া। মহাজনপাড়ার এই পাহাড়ে একসময় প্রচুর জংলি আলু পাওয়া যেত। আলুর আধিক্যের কারণে পাহাড়টির নামকরণ করা হয় আলুটিলা। প্রবীণ সেন ত্রিপুরা সে সময় মহাজনপাড়ার কার্বারি ও তার কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ১৯২০ সালে প্রথম আলুটিলা গুহা আবিষ্কার করেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন স্থানীয় লোকেরা আলু খেয়ে প্রাণ বাঁচান। তখন থেকেই এর নাম আলুটিলা হয়ে যায়।

খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার মূল শহর থেকে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে সমুদ্রের সমতল থেকে তিন হাজার ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট আলুটিলা বা আরবারি পাহাড়ে আলুটিলা গুহা বা রহস্যময় সুড়ঙ্গ অবস্থিত। স্থানীয় মানুষেরা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা। এই গুহা বা সুরঙ্গ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট। এখনো আলুটিলা পাহাড়ে বুনো আলু পাওয়া যায়।

গুহাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৫০ ফুট। গুহাটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। গুহাটির উচ্চতা কিছু কিছু জায়গায় বেশ কমে যাওয়ায় সেই সব জায়গা মাথা নিচু করে, এমনকি হামাগুড়ি দিয়ে পার হতে হয়।

এই গুহার ব্যাস ১৮ ফুট, ২৬৬টি সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ের পাদদেশে এই গুহার মুখে পৌঁছাতে হয়। আর বের হতে হয় অন্য পথে, প্রায় ১৬০টি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠে। গুহার মুখে প্রবেশের আগে মশাল জ্বালিয়ে নিতে হয়, যা প্রবেশপথেই ২০ টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারবেন যে কেউ। কারণ, এর ভেতরটা পুরোই অন্ধকার, ভেতরটা হিমশীতল ঘুটঘুটে আর পায়ের নিচে প্রবহমান ঝরনার ধারা পাথুরে দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে এক অপার্থিব শব্দের সৃষ্টি করে। ঠিক যেন প্রস্তর যুগ বা প্যালিওলিথিক যুগের কোনো আদিমানবের চোখে দেবতাগুহার দর্শন। একটা পুরোদস্তুর এড্রেনালিন ভাব ছুঁয়ে যাবে আপনার মস্তিষ্কের নিউরনে।

দুই বছর আগে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র, চেঙ্গী নদীর তীরে, আলুটিলার পাহাড়-প্রকৃতির চিত্র আগে এক রকম থাকলেও এখনকার দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। সম্পূর্ণ নতুন রূপে সাজানো হয়েছে এখানকার চারপাশ। বৌদ্ধ স্থাপত্যে গড়া দৃষ্টিনন্দন তোরণ পার হলেই দুই পাহাড় নিয়ে গড়ে ওঠা পর্যটনকেন্দ্রের শুরু থেকে গুহা সবখানে এসেছে নতুনত্ব ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ ফুট ওপরে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ এখন ঝুলন্ত ব্রিজ, দুই পাহাড়কে যুক্ত করতে তৈরি করা হয়েছে ১৮৪ ফুট দীর্ঘ লোহার এই সেতু বা কেব্‌ল ব্রিজ।

চীনের পর্যটনকেন্দ্র হেনান এবং হুনান প্রদেশে কাচের তৈরি একটি সেতু আছে, তারই আদলে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য সেতুতে রয়েছে কাচের বারান্দা। কাচের বারান্দা দিয়ে নিচে তাকালে পাহাড়ের অন্য রকম দৃশ্যের দেখা মেলে। মনে হবে, আপনি পাহাড়ের ওপর ভাসছেন। সেই সঙ্গে রয়েছে নন্দনকানন, রোমান কোলোসিয়ামের আদলে মঞ্চ ও ওয়াচ টাওয়ার। গুহায় একটা রোমাঞ্চকর অভিযানের পর ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে একটা প্রশান্তির নিশ্বাস নিঃসন্দেহে সব ক্লান্তি দূর করে দেবে এবং জীবনবোধে যুক্ত করবে ইতিবাচকতা।

আলুটিলার অবস্থান খাগড়াছড়ি শহর থেকে আট কিলোমিটার আগে। ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি শহরে যাওয়ার আগে নেমে যেতে হবে এই অনিন্দ্য সুন্দর পাহাড়-প্রকৃতিতে। প্রতিদিন রাজধানীর সায়েদাবাদ, কমলাপুর, গাবতলী, ফকিরাপুল, কলাবাগান ও টিটিপাড়া থেকে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে হানিফ, শ্যামলী, সৌদিয়া, এস আলম, শান্তিসহ বিভিন্ন আরামদায়ক বাস ছাড়ে। এসব বাসযোগে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। আর যদি ট্রেনে যেতে চান, তাহলে নামতে হবে ফেনী। সেখান থেকে শান্তি, হিলকিং অথবা হিল বার্ড বাসে চড়ে খাগড়াছড়ি যাওয়া যায়। চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকেও বাসে খাগড়াছড়িতে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বাস ভাড়া পড়বে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। ফেনী থেকে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

আর খাগড়াছড়ি গেলে অনেকেই পর্যটন টাওয়ারে মধ্যাহ্নভোজ সারেন। তবে বিখ্যাত সিস্টেম রেস্তোরাঁর আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী খাবার জুমচাষের ধানি মরিচ দিয়ে অসাধারণ মাশরুমের ভাজি, হাঁসের ঝাল মাংস, আলুভর্তা আর লেবুর ডালের সঙ্গে বিন্নি চালের ভাত, কচি বাঁশকোঁড়লের ভাজি না খেলে আসলেই মিস করবেন। শরৎ-হেমন্ত খাগড়াছড়ি ভ্রমণের দারুণ সময়। এলাকাটির পাশেই রিসাং ঝরনা দেখতে ভুলবেন না যেন। সবচেয়ে দারুণ ব্যাপার, খাগড়াছড়ি এক দিনেই ঘুরে আসা যায়। তাই যেকোনো ছুটির দিনে, পাহাড় ঝরনা আর প্রাচীন গুহায় রোমাঞ্চকর জায়গাটিতে অভিযান চালাতেই পারেন।

বরগুনার আলো